ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন অস্তিত্ব থাকবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন অস্তিত্ব থাকবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও সোচ্চার ও সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে এটি এখন আর একটি নির্দিষ্ট দেশের একক সমস্যা নয়। তাই এ সমস্যা যার যার নিজ নিজ অবস্থান থেকে মোকাবেলা করা প্রয়োজন। আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশ্বব্যাপী এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের শিকড় নির্মূল করতে সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ এবং সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উদযাপন এ বছরের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ আবহ তৈরি করেছে। এক অন্যরকম আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে এবার ঈদ-উল-আযহা। পবিত্র ঈদ-উল-আযহার দিন মঙ্গলবার গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বরাবরের মতো এবারও ঈদ-উল-আযহার সকালে সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের দুয়ার। তাই দিনমজুর, শ্রমজীবী, পেশাজীবী থেকে শুরু করে কূটনীতিক, বিচারপতি নির্বিশেষে সবাই গণভবনে হাজির হন প্রধানমন্ত্রীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে। সবাই সারিবদ্ধ এবং সুশৃঙ্খলভাবে গণভবনে প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে গণভবন সর্বস্তরের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে সর্বস্তরের মানুষ, পেশাজীবী ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে তিনি বেলা ১১টা থেকে একই স্থানে বিচারপতি ও বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ ও বিদেশে বসবাসরত প্রবাসীদের পবিত্র ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা জানান। তিনি সকলের সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন এবং দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, যারা ইসলামের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœ করার জন্য দায়ী সেই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং ভবিষ্যতে আমরা এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে চাই। আমি দেখতে চাই, স্বাধীনতার মূল যে ভিত্তি ছিল একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাঙালী জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে বাস করছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতীতে কিছু ঘটনা দেশের অগ্রগতি মন্থর করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সেই কঠিন পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করেছে। আমরা একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমাদের স্বাধীনতাকে নিয়ে কেউ কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে।’ শেখ হাসিনা বলেন, যারা ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস করে, তারা কোন নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে পারে না। নিরীহ মানুষ হত্যা করা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং কেউ নিরীহ লোকদের হত্যা করলে তাকে দোযখে যেতে হবে। কিন্তু পবিত্র কোরান ও মহানবীর (স) শিক্ষা অস্বীকার করে কিছু লোক ধর্মের নামে হত্যাকা- চালাচ্ছে এবং জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করছে, যা ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ধর্মের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে। তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম, পবিত্র ধর্ম। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা ধর্মের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং শান্তিকামী মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলছে। কিছু যুবকের বিপথগামিতার কথা উল্লেখ করে ওলামা, দেশের জনগণ, ছাত্র-শিক্ষকসহ অবিভাবক, ইমাম এবং মসজিদসমূহের মুয়াজ্জিন যুবকদের জঙ্গীবাদী কর্মকা- থেকে বিরত রাখবেন বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিকামী দেশ এবং এখানকার জনগণ সহনশীল। তারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসীÑ যেখানে জনগণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এবং শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনকভাবে তাদের ধর্ম পালনের সুযোগ পাবে। গত ঈদ-উল-ফিতরে শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর এবার রাজধানীসহ সারাদেশে কড়া নিরাপত্তায় ঈদ-উল-আযহার নামাজ হয়। এবার ঈদে সে ধরনের কোন ঘটনা না ঘটায় স্বস্তি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত কোন দুর্ঘটনার খবর আমরা পাইনি। সবাই ভালভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরেছেন।’ নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রত্যেকে চমৎকার ভূমিকা নিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থাও যথাসময়ে তথ্য দিয়ে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করছে। গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর সরকারের নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই সবাই জঙ্গীবাদী কর্মকা- থেকে দূরে থাকবে।’ বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সামনে এগিয়ে নিতে প্রত্যেকের সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ক্রয়ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সমৃদ্ধভাবে আমাদের ঈদ উদযাপনের মধ্য দিয়ে এর প্রতিফলন ঘটেছে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে চায়, যাতে অন্যদের কাছ থেকে ভিক্ষা নেয়ার প্রয়োজন না পড়ে, দেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে বাস করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী তার কানাডা ও নিউইয়র্ক সফর যাতে সফল হয় সে জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করে বলেন, যে দায়িত্ব ভোটের মাধ্যমে জনগণ আমাকে দিয়েছে, যেখানে যাই, যে কাজই করি, বাংলাদেশের মানুষের মানসম্মান যেন সুউচ্চে রাখতে পারি। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী বুধবার কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শনিবার টঙ্গীতে শিল্প দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করেন। সরকার হতাহতদের পরিবারসমূহকে সম্ভাব্য সব রকমের সহায়তা দেবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস প্রদান করে বলেন, কারখানায় দাহ্য পদার্থ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে শিল্প মালিকদের। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডাঃ দীপু মনি, সম্পাদকম-লীর সদস্য ফারুক খান, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×