ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াইট হাউসে সুচির সঙ্গে বৈঠকের পর ওবামার ঘোষণা

শীঘ্রই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

শীঘ্রই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

মিয়ানমারের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শীঘ্রই তুলে নেয়া হচ্ছে। বুধবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির সঙ্গে বৈঠকের পর মাকিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ ঘোষণা দেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধাপ্রাপ্ত তালিকায় পুনর্প্রবেশের পর তিনি দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে প্রস্তুত রয়েছেন। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আউং সান সুচির সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকের পর ওবামা এ ঘোষণা দেন। ওবামা বলেন, গত কয়েক মাস ধরে আমরা যে অগ্রগতি দেখেছি (মিয়ানমারে) অংশত সে কারণে আমি ড. সু (যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত) এর সঙ্গে আলোচনার পর আভাস দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র তখন দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে প্রস্তুত। ওবামা সুর্নিষ্টিভাবে বলেননি মিয়ানমারের ওপর থেকে কোন কোন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। তবে তিনি বলেছেন, শীঘ্রই এ স্বস্তি আসবে। ওবামা আরও ঘোষণা করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ বাণিজ্য সুবিধাপ্রাপ্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর তালিকায় মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করবে। এর ফলে দেশটির প্রায় ৫ হাজার পণ্য শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে। ওবামা প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা পরে বলেছেন, মিয়ানমারের ওপর কিছু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে- দীর্ঘস্থায়ী অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের অংশীদার হওয়া নিশ্চিত করতেই এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না। খবর সিএনএন/এক্সপ্রেস ট্রিবিউন/ইয়াহু নিউজের। ১৯৮৯ সালে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করার পর দেশটির জিএসপি সুবিধা কেড়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৩ নবেম্বর থেকে মিয়ানমারের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করা হবে। ওবামা বলেন, ওইসব বাণিজ্য সুবিধা পুনর্বহাল, সেই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানসমূহ দেশটিতে বিনিয়োগ ও উন্নয়নের অংশীদার হতে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হবে। আর এটা হবে এমন এক দেশে যা হবে এ অঞ্চলের আমাদের জন্য একটি ক্রমশ গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ অংশীদার। হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে বৈঠকের পর সুচি ক্যাপিটলহিলে প্রতিনিধি পরিষদের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এদিকে মার্কিন কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন সদস্য মিয়ানমারের সম্ভাব্য পরিবর্তন এবং এর মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রিপাবলিকান দলীয় মার্কিন প্রতিনিধি ও হাউসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এ্যাড রয়ার্স মিয়ানমার নেত্রী আউং সান সুচির সঙ্গে বৈঠকের পর মন্তব্য করেন যে, দেশটির নতুন প্রশাসন আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তিনি দেশটির নিপীড়িত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষার ব্যাপারে আশাবাদী। মিয়ানমারের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হচ্ছে শুনে মানবাধিকার গ্রুপসমূহ দ্রুত এর নিন্দা জানিয়েছে। ওয়াশিংটনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উপ-পরিচালক জন সিফটন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ গ্রহণ ঠিক হচ্ছে না। মার্কিন পদক্ষেপে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে না। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের আইনে রোহিঙ্গাদের দেশটির স্বীকৃত ১৩৫টি জাতিগত গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। এর ফলে এ সংখ্যালঘু মুসলমান গোষ্ঠীটি মিয়ানমারে রাষ্ট্রহীন অবস্থায় রয়েছে। তাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশটির রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের দুঃখ-দুর্দশা নিরসনে ব্যর্থ হওয়ায় মানবাধিকার গ্রুপসমূহ আউং সান সুচির সমালোচনা করে আসছে। মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলে বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বৌদ্ধপ্রধান দেশটিতে প্রায়ই তারা সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও হত্যাকা-ের শিকার হয়। ২০১২ সাল থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চরমে ওঠে। এর ফলে অনেক জীবন বাঁচাতে বিপজ্জনক সমুদ্রপথে পালানোর চেষ্টা করে। অনেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে মানবপাচারকারীদের কবলে পড়ে।
×