ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যশোরে কাশেম চেয়ারম্যান হত্যার নেপথ্যে অপর চেয়ারম্যানের স্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যশোরে কাশেম চেয়ারম্যান হত্যার নেপথ্যে অপর চেয়ারম্যানের স্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ কলেজপড়ুয়া সুন্দরী তরুণী শ্যামলীর দখল নিয়ে দুই চেয়ারম্যানের লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন আবুল কাশেম। নিহত আবুল কাশেম চৌগাছার পাশাপোল ইউপির সর্বশেষ নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। আর একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহীনুর রহমানের নেতৃত্বে তাঁকে খুন করা হয়। দরিদ্র পরিবারের তরুণী শ্যামলী সাবেক চেয়ারম্যান শাহীনের দ্বিতীয় স্ত্রী; তবে বিষয়টি গোপন রয়েছে। একই সঙ্গে শ্যামলী চেয়ারম্যান কাশেমের প্রতিবেশী এবং দূর-সম্পর্কের আত্মীয়া। সেই সূত্রে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। গত ৩১ আগস্ট খুন হন চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। তাঁকে হত্যা করা হয় যশোর শহরের মুজিব সড়কে অবস্থিত মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কোয়ার্টারে। কাশেম হত্যায় জড়িত সন্দেহে পুলিশের হাতে আটক দুই নারী-পুরুষকে গত রবিবার যশোরের আদালতে হাজির করে পুলিশ। সেখানে তারা কাশেম হত্যায় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলেও খুনের বর্ণনা দিয়েছে। পুলিশ জানায়, আটক কলেজছাত্রী শ্যামলী ও মোশারফকে গত রবিবার বিকেলে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মৃত্যুঞ্জয় মিস্ত্রির আদালতে হাজির করা হয়। শ্যামলী চৌগাছার রঘুনাথপুর গ্রামের ফজলুর রহমানের মেয়ে। মোশারফ হোসেন মণিরামপুরের শ্যামকুড় ইউনিয়নের আবুল কাশেমের ছেলে। বর্তমানে সে যশোরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকে। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শ্যামলী যশোর সরকারী এমএম কলেজে লেখাপড়া করে। থাকে কলেজের আসাদ গেটের পাশে ‘তারা মেস’-এ। ২০১৪ সালে তার বিয়ে হয় শাহীনের সঙ্গে। কিন্তু ওই বিয়ের কথা গোপন রয়েছে এলাকায়। শাহীন প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করেন। মোশারফের স্ত্রী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চাকরি করেন। তিনি এক সময় চৌগাছায় চাকরি করেছেন। সে সময় মোশারফের সঙ্গে শাহীনের পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে শাহীন দ্বিতীয় স্ত্রী শ্যামলীকে নিয়ে মাঝেমধ্যে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কোয়ার্টারে সময় কাটাতেন। শ্যামলী দাবি করেছেন, কাশেম চেয়ারম্যান তাকে মোবাইল ফোনে উত্ত্যক্ত করতেন। দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিতেন। শ্যামলীর জবানবন্দীতে বলা হয়, কাশেম চেয়ারম্যানের কুপ্রস্তাবের কথা শ্যামলী তার স্বামী শাহীনকে জানান। এতে শাহীন ক্ষিপ্ত হন। এক সময় শ্যামলী মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। কিন্তু শাহীনের স্ত্রী তিনি; এ কথা কাউকে বলতে পারেন না। ফলে কাশেম সুযোগ নিতে চান। তিনি যশোরে এসে শ্যামলীকে খুঁজে বের করে তাকে নতুন মোবাইল ফোন কিনে দেন। ওই মোবাইল ফোনে যে সিমকার্ড রয়েছে সেটিও কাশেমের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। শাহীনও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য শ্যামলীকে চাপে রাখেন। অন্যদিকে, শ্যামলীকে পেতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন কাশেম। গত ৩১ আগস্ট বিকেলে কাশেম যশোর শহরে আসেন। শহরের দড়াটানায় আসার পর তিনি ফোন করেন শ্যামলীকে। শ্যামলী সন্ধ্যার দিকে দড়াটানায় এসে কাশেমকে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কোয়ার্টারে নিয়ে যান; যেখানে তার সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছেন শ্যামলী। সে সময় কোয়ার্টারে মোশারফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তার স্ত্রীর ছিল নাইট ডিউটি। এ সময় শাহীন অজ্ঞাত দুই যুবককে সঙ্গে নিয়ে সেখানে হাজির হন। শাহীনের সঙ্গে কাশেমের তর্কবিতর্ক ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন শ্যামলী সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর কী হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে জবানবন্দীতে বলেছেন। আটক মোশারফ জানান, ওই কোয়ার্টারে কাশেম ও শাহীনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। কিছু সময় পর বিছানার চাদরে জড়িয়ে একজনকে কালো রঙের থ্রি-হুইলারে করে নিয়ে যাওয়া হয়। বাইরে চলে যাওয়ার পর আর কিছুই জানেন না তিনি। দুদিন পর তিনি জানতে পারেন ওই লাশটি পাশাপোল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের; যাকে হত্যা করা হয় তারই সরকারী কোয়ার্টারে। কোতোয়ালি থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন বলেন, দুই আসামি হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। হত্যার কাহিনী তারা বর্ণনা করেছেন।
×