ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিরোধিতার অন্ধ রাজনীতি যে কারণে ব্যর্থ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিরোধিতার অন্ধ রাজনীতি যে কারণে ব্যর্থ হচ্ছে

এটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট ঈদ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এখন এ খবর কতটা স্বস্তির তা বোঝার জন্য দূর অতীতে যাওয়ার দরকার পড়ে না। ঈদ-উল-ফিতরের সময় শোলাকিয়ার ঘটনায় আমরা দেখেছি হিংসা কত নির্মম হতে পারে। সরকারের সমালোচনা করাটা ন্যায্য এবং প্রয়োজনীয়; কিন্তু যারা অন্ধ তারা এই সার্থকতার কথা একবারও বলবেন না। রাজনীতি এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে হিংসা আর সমালোচনার নামে বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই নেই তার কাছে। এই সরকারের অন্ধ সমর্থক আমি নই। হওয়ার কারণও দেখি না। কিন্তু যারা আমাকে জোর করে তা হতে বাধ্য করেন সেই মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদীদের দিকে তাকান। এরা এ দেশের এ সরকারের উন্নয়নের পুরোটা ভোগ করার পর অকারণে আস্ফালনে মত্ত। এমন শুনবেন না এরা কোথাও চাঁদাবাজি ঠেকিয়েছেন বা সরকারী দলের সন্ত্রাস বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। সেগুলো তাদের জীবনে হয়ত ঘটে না বা তারা এসবের আওতার বাইরে। বাকিদের বেলায় তারা দর্শক আর মজা লুটেরা। মজাটা লুটেই সফেদ ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি বা দামী শার্ট গায়ে চাপিয়ে ছোটেন টিভি অফিসে। টকশোতে মধ্যরাতে রোগী বা বয়সী মানুষের হার্টের কথা বিবেচনায় না রেখেই তারা তারস্বরে তাদের মতামত চাপাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এবার ঈদে মানুষের আনন্দ কি কম ছিল কোথাও? যারা আওয়ামী লীগ করেন না, যারা শেখ হাসিনার সমর্থক না, তারা কি এই নির্বিঘেœ ঈদ উদযাপন করেননি? তাদের ঘরে কি আনন্দের হাওয়া বয়ে যায়নি? তারা কি কোরবানি দেননি? অথচ খালেদা জিয়া বলেছেন দেশে নাকি মানুষ গুমোট এক অস্বস্তিতে থাকার কারণে ঈদের কোন আনন্দ নেই। ঈদ উদ্যাপন নিয়ে তাঁর এই সংশয় কি বাস্তবোচিত? আমরা কি এই রাজনীতি চাই? কেন আমরা বলছি না বিরোধিতার ধারাও পাল্টাতে হবে। কেন তিনি পিন পয়েন্টে কথা বলবেন না? সরকারের যেসব কাজের সমালোচনা করা উচিত তাদের সাবধান করে দেয়া উচিত, বা নিজেদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে মানুষকে সংগঠিত করা উচিত তিনি কেন সে সব কথা বলেন না? আর কতকাল এসব বস্তা পচা কথা শুনব আমরা। তাঁর সুদর্শন মার্জিত কথার মহাসচিবকেও দেখলাম ঘুমভাঙ্গা চোখে ঈদের প্রার্থনা শেষ করেই টিভি ক্যামেরার সামনে বকবক করে পুরনো কথা আওড়ে গেলেন। গেছেন ঈদের নামাজ পড়তে। ফিরছেন আনন্দ নিয়ে বাড়ি গিয়ে কোরবানি দিতে। বলছেন জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চান। আর সে এক কথা- আমাদের কর্মীরা ভাল নেই। কারা ভাল নেই ফখরুল সাহেব? আপনার নামী-দামী নেতা-নেত্রী, পাতি-উপপাতি সবাই তো দেখি বহাল তবিয়তে আছে। যারা নেই, যারা অন্তরীণ তাদের দিয়ে আপনারা কি কিছু করাতে চেয়েছিলেন? সে সব হতভাগ্যের জন্য আজ মায়াকান্না কাঁদছেন বটে; একবার ভেবে দেখুন নিয়মমাফিক রাজনীতিতে থাকলে বা রাজনীতি করলে তাদের এই হাল হতো না। আগের মতো নৈরাজ্য, ধ্বংস আর ভাংচুর করতে না পারার কারণে মন খারাপ সেটা কিন্তু বললেন না। সব জায়গায় এই ধরনের হয় মিথ্যা নয় অর্ধ সত্যের দাপট। কোরবানির গরু নিয়েও রাজনীতি। খবরে দেখলাম দেশীয় গরু যে দামে কেনা সে দামে বিক্রি না হওয়ার কারণ হিসেবে আঙ্গুল উঠেছে ভারতের দিকে। ভারতীয় গরু যদি সস্তায় পাওয়া যায় মানুষ দাম বেশি দিয়ে দেশের গরু নাও কিনতে পারে। এর নাম মুক্তবাজার। আমরা মুক্তবাজার মানব, প্রতিযোগিতা মানব, বিশ্বায়নের সুফল নেব; কিন্তু ভারতের গরুকেও ছাড় দেব না। কেউ কি আমাদের মাথার দিব্যি দিয়েছিল ভারত থেকে গরু আনতে? না আনলেই তো হয়। সরকার কি এ কাজের জন্য ইনসেনটিভ দিয়েছিল? না বলেছিল যারা আনবে তারা শুল্কমুক্ত ব্যবসা করতে পারবে? তারপরও এই অজুহাত বা দোষ দেয়ার কারণ আওয়ামী লীগের আমলে ভারতীয় আধিপত্যের পুরনো কাসুন্দির অবতারণা। এ লেখার জন্য যারা আমার ধর্মীয় পরিচয় টেনে গালাগাল দেবেন তাদের অন্তরে পাকি গরু। পাকি গরু এসে বাজার দখল করলেও তাদের আপত্তি নেই। আর আমরা চাই কোন দেশের না, কেবল বাংলাদেশের বাজার থাক বাংলাদেশের। নিজ হাতে সুবিধা করতে না পারা দেশ ও জাতিকে হাফ পাকিস্তানী করে রাখার রাজনীতিকে বলি নিরাপদে আনন্দে উৎসব করেছেন অথচ বালুচিস্তানের খবর রাখেন না। তারাও খাঁটি মুসলমান। আজ তাদের নারীরা ধর্ষণের শিকার। যারা পাক আমলে ধর্ষণ হয়নি বলে তড়পান, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় পাক সেনাদের সাধুতা আর দালালদের চরিত্র নিয়ে বাহাস করেন তাদের বলি চোখ মেলে তাকান- আজ আমরা কোথায়? একই দেশের মানুষ নির্যাতন আর এক পতাকার তলায় বসবাসকারী নারীরা সে দেশের সেনাদের লালসার শিকার। তবু আপনাদের মোহভঙ্গ হয় না। ঈদের আনন্দ শেষ হওয়ার আগেই নতুন কোন ঝামেলার কারণ খুঁজে না পাওয়া বিরোধীদের জন্য করুণা হয়। অথচ দেশে অনেক ইস্যু আছে, যা নিয়ে কথা বললে আমরা লাভবান হতে পারি। আমাদের জাতীয় স্বার্থ বা কল্যাণকর বিষয়ে তাদের মনোযোগ থাকাটা দরকার হলেও নেই। নেই বলেই তারা একচোখা। তাদের মূল টার্গেট শেখ হাসিনা। তাঁকে সরাতে পারলেই তারা খুশি। পথের কাঁটা হওয়ার কারণ যে সাহস ও উত্তরাধিকার সেটা তাদের নেই। তারা কি দেখে না প্রধানমন্ত্রী কিভাবে একজন কবিকে সম্মান করেন? কিভাবে তাঁর শয্যার পাশে গিয়ে বসেন? এই আন্তরিকতা খালেদা জিয়ার আছে? থাকলে তিনি এ দেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমানের কান টেনে দেবার মতো উচ্চবাচ্য বা অসভ্য বাক্য বলতে পারতেন? তারপরও লেখালেখির জগতের একাংশ শেখ হাসিনার বিরোধিতায় খালেদা জিয়ার পায়ে গড়াগড়ি খেতে ভালবাসে। একদিকে দেশপ্রেমের অভাব, আরেকদিকে পাকিস্তান ভাঙ্গার যন্ত্রণা। আছে সাম্প্রদায়িকতা ও ভারত বিদ্বেষ। কিন্তু যেটা থাকলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হতে পারত সেই দূরদর্শিতা বা সাদা চোখে দেখাটাই নেই। যে কারণে রাজনীতির ওপর মানুষের বিশ্বাস বা আস্থাও নেই। তারা আজকাল রাজনীতিকে বিদায় জানাতে পারলেই বেঁচে যায়। বাংলাদেশের ভবিষ্যত বিনির্মাণ ও স্বাভাবিকতা বাঁচিয়ে রাখার দায় কেবল প্রধানমন্ত্রীর একার হতে পারে না। যারা রাজনীতির নামে এ দেশের শাসনভার চায় আর মানুষের ভাগ্য নিয়ে দেন-দরবার করে আজ তাদের সামনে জবাবদিহিতা আর স্বচ্ছতার সময় হাজির। ভুল পথে পা বাড়িয়ে এ দেশে কোনকালেও কেউ টিকতে পারেনি। একদা ফুলে-ফেঁপে বড় হয়ে ওঠা বিএনপিকে দেখেও যারা তা মানেন না তাদের জন্য সহানুভূতি ছাড়া আর কি থাকতে পারে? জনগণ এত বোকা নয়। তারা জানে তারা কোথায় কোন্্ জায়গায় কিভাবে কি করতে হয়। ঈদের আনন্দে ভাসমান দেশে সমঝোতা ও সহাবস্থানের বিষয়টি যেভাবে সামনে এসেছে সরকার তা সমুন্নত রাখতে পারলে শান্তিও বহাল থাকবে। এসব নিবু রাজনীতি না করে কঠোর হলেই সিংহাসন নিরাপদ থাকে। সেটাই আবার জানলাম আমরা। বাংলাদেশের চরিত্র ও আদর্শের জায়গাটা যারা ধরতে পারে না তারা সাময়িকভাবে গদি পেলেও আখেরে থাকতে পারে না। খন্দকার মোশতাকের সময়কাল ছিল ৮১ দিন। জিয়াউর রহমানের আমলও নাতিদীর্ঘ। এরশাদ নয় বছর থাকার পরও মানুষের মনে জায়গা নিতে পারেননি সেভাবে। আওয়ামী লীগকেও এটা মাথায় রাখতে হবে। মেয়াদ দীর্ঘ হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের আধুনিকায়ন ও স্বচ্ছতার বিষয়ে যত তারা এগিয়ে আসবেন ততই মঙ্গল। সামনে শারদ উৎসবে নিরাপদ-নির্বিঘœ থাকতে চাওয়া দেশ সে আশায় দিন গুনছে। [email protected]
×