ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিমুক্ত দেশ

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঝুঁকিমুক্ত দেশ

জঙ্গীবাদের করাল থাবায় আক্রান্ত বিশ্ব। অসহায়, বিপন্ন মানুষের জীবন হরণের মধ্য দিয়ে এরা স্বর্গীয় সুষমার সন্ধান করে আসছে। বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি আর ব্যাপক মানুষ হত্যার এই ক্রান্তিকালে বিশ্ববাসী জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু জঙ্গীদের তৎপরতার উৎসমূলে যে অর্থ ও অস্ত্রের ব্যাপক সরবরাহের আধিক্য দেখা যায়, সেই অর্থও অস্ত্র সরবরাহকারীদের চিহ্নিত করা না গেলেও অর্থায়নের উৎস নিরূপণ ও তা অপসারণের কাজটিও জরুরী। বাংলাদেশে সমগ্র জঙ্গী গোষ্ঠী তাদের কর্মকা- পরিচালনে সব অর্থ বিদেশ থেকেই পেয়ে থাকে। দেশীয় নানা উৎস হতেও এরা আর্থিক সহায়তা পেয়ে আসছে। অর্থের জন্য ব্যাংক ডাকাতি, ছিনতাই পর্যন্ত এরা করে থাকে। দেশে জঙ্গীবাদের অর্থায়নের উৎস জামায়াত প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ এদেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিকাশ ও বিস্তার ঘটানোর কাজটি জামায়াত ও বিএনপির তত্ত্বাবধানে হয়ে আসছে। তাই এদের অর্থকড়ির সঙ্কট নেই। অস্ত্র সংগ্রহেও এরা বিপুল অর্থ ব্যয় করে। ব্যাংকসহ অন্যান্য মাধ্যমে এদের অর্থের চালান হয়। একটা বিশাল চক্র এই কাজে জড়িত। এসব জঙ্গীর অর্থের উৎস বন্ধে সরকার তৎপরতা চালিয়ে আসছে। সরকার জঙ্গী নির্মূল ও অর্থায়ন বন্ধে ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। যার সাফল্য দৃশ্যমান। আর সে কারণেই অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছে এপিজি। কয়েক বছরে ছয়টি জঙ্গী সংগঠন নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ। মামলা করা হয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী সংগঠনের নামে। পাশাপাশি অবৈধ অর্থায়ন ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তথ্য আদান-প্রদানও হয়েছে। বাংলাদেশ পাচার করা টাকা ফেরত আনার সাফল্য দেখিয়েছে। আবার বিদেশ থেকে অবৈধভাবে আনা টাকাও ফেরত পাঠিয়েছে। সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদানে প্রণয়ন হয়েছে আইনও। আর এতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। এটা একটা বড় অর্জন বৈকি! যুক্তরাষ্ট্রে ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত উনিশতম বার্ষিক সভায় গৃহীত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ হিসেবে রেটিং করা হয়েছে। এই সম্মেলন গত ২৪-২৮ জুলাই ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গুলশানে জঙ্গী হামলার কারণে নিরাপত্তার অজুহাতে তা স্থানান্তর করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। একচল্লিশ দেশ এই সংস্থার সদস্য। অর্থ পাচার ও জঙ্গী হামলার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ‘কালো তালিকাভুক্ত’ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু সরকার গৃহীত পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের রেটিং নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা হতে ভাল অবস্থানে রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক উন্নত দেশ হতেও ভাল অবস্থানে রয়েছে। যা সন্ত্রাস, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, জঙ্গীবাদ, মানিলন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধ নির্মূলকরণে বাংলাদেশের অবস্থানকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করেছে। সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের এই সাফল্য সবার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সহযোগিতার ফল। ঝুঁকিমুক্ত বাংলাদেশের জন্য এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আগের চেয়ে সহজ হবে। আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে জটিলতা কমবে। একই সঙ্গে দেশে-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতেও সহযোগিতা করবে। এতে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ করা সম্ভব হবে। শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গীবাদ নির্মূলে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার সুফল ক্রমশ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের দক্ষভাবে মোকাবেলা করে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদকে ‘না’ বলার জন্য জনসচেতনতাও তৈরি করছে। জঙ্গী ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় মডেলে পরিণত হবেই।
×