ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কম মূল্য নির্ধারণে পাচারের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কম মূল্য নির্ধারণে পাচারের আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার বসে যশোরের রাজারহাটে। কোরবানি ঈদপরবর্তী সময়ে তাই এ বাজারের দিকে নজর থাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এবার এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের বকেয়া রয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। গত বছরের টাকা আজও তারা পরিশোধ করেনি। যে কারণে এবার চামড়া কিনতে পারবে না বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া লবণের দাম চড়া হবার কারণেও চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, এবার ট্যানারি মালিকরা গরুর চামড়া বর্গফুট ৪০ টাকা আর ছাগলের দাম নির্ধারণ করেছেন ২০ টাকা হারে। তারা বলছেন, রাজারহাটে চলতি মাসে গরুর চামড়া ৬০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ২৪ টাকা ফুট বিক্রি হয়েছে। কম দাম নির্ধারণ হবার কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচার করতে পারেন। কেননা যশোর সীমান্তবর্তী অঞ্চল। এখান থেকে খুব সহজে ভারতে চামড়া পাচার করা যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি ট্যানারি মালিকরা ঈদের আগেই পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে এবারের কোরবানিতে তারা চামড়া কিনতে পারবেন না। ফলে পাচারও বেড়ে যাবে আশঙ্কাজনকভাবে। এক কথায় ট্যানারি মালিকদের হাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এখনও যশোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকা পাবে। যা তারা পরিশোধ করছেন না। তবে প্রশাসন বলছেন, কোন অবস্থাতেই যশোর থেকে চামড়া পাচার হতে দেয়া হবে না। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যশোরের রাজারহাট ঢাকার পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মোকাম। সপ্তাহে দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। যশোর ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে হাজির হয় এই হাটে। রাজারহাটের এই চামড়াহাটকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান। দুই শতাধিক আড়ত রয়েছে এই মোকামে। প্রতি কোরবানির ঈদে রাজারহাটে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। শনিবার হাট ঘুরে দেখা গেছে, রাজারহাটে গরুর ভাল চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। নিম্নমানের চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, সরকার চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের কোটি কোটি টাকা ঋণ দিলেও সেই টাকা তারা চামড়াখাতে ব্যয় না করে অন্যখাতে ব্যয় করেন। কোরবানির সময় আসলে তাদের হাতে আর টাকা থাকে না, তখনই তারা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দেন। এবারও তাই হয়েছে। ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের ব্যবসায়ীদের বকেয়া রয়েছে ১০ কোটি টাকা। যা তারা দিচ্ছে না। টাকার অভাবে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে পারবে না। তাছাড়া লবণের দাম বৃদ্ধিার কারণে এবার অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। আলাউদ্দিন মুকুল আরও বলেন, স্থানীয় বাজার মূল্য থেকে দাম বেশি পাওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেছে নেয় সীমান্তের চোরাইপথ। এর প্রভাব পড়ে রফতানিযোগ্য এই শিল্পের ওপর। এজন্য চামড়া পাচার ঠেকাতে প্রশাসন এবার এগিয়ে এসেছেন। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন চামড়া পাচার হবে না। বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফ আলী জানান, গত বছর কোরবানি ঈদের আগে ট্যানারি মালিকদের কাছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পুঁজি আটকা পড়েছিল। সে কারণে তারা সেবার সঠিকভাবে চামড়া কিনতে পারেননি। এবারও তাই হতে চলেছে। সামনে আর মাত্র ঈদের ২ দিন বাকি আছে। এখনও আমরা গত বছরের চামড়ার প্রায় ১০ কোটি টাকা ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পায়নি। স্থানীয়ভাবে ব্যাংক ঋণ পান না ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী পাপ্পু জানান, পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ীদের পুঁজি সঙ্কটের সুযোগ নিবে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তারা বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করে থাকে। পরে বাজারে চাহিদামতো দাম না পেয়ে তারা পাচারকারী চক্রের হাতে চামড়া তুলে দেয়। এ ব্যাপারে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, রাজারহাটে চামড়া পাচার ঠেকাতে ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। তাছাড়া সীমান্তবর্তী থানাগুলোকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেয়া আছে যাতে কোনভাবেই চামড়া পাচার না হয়। বাংলাদেশ বডার গার্ড (বিজিবি) যশোরের কমান্ডিং অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মেজর মোহাম্মদ লিয়াকত বলেন, চামড়া পাচার প্রতিরোধে সীমান্তের সব বিওপি ক্যাম্পগুলোকে অধিক সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেই সাথে অতিরিক্ত টহলের ব্যবস্থা থাকবে। চামড়া পাচার ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছে। কোন অবস্থাতে চামড়া পাচার করতে দেয়া হবে না।
×