ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রুমানার হ্যাটট্রিকে সিরিজ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রুমানার হ্যাটট্রিকে সিরিজ বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথম দুটি ওয়ানডেই বৃষ্টির কারণে ভেসে গেছে। তাই বেলফাস্টে শনিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ছিল সিরিজ নির্ধারণী। সেই ম্যাচে ১০ রানের ছোট্ট জয়ে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে সফরকারী বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। এমন একটি জয় এসেছে মূলত লেগস্পিন অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদের অবিস্মরণীয় কীর্তির কারণে। প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। আইরিশ মেয়েদের মিডল অর্ডারে তিনি টানা তিন বলে এলবিডব্লিউ করে ফিরিয়ে দেন কিম গার্থ, ক্লেয়ার শিলিংটন ও ম্যারি ওয়ালড্রন। ৪০.১ ওভারে মাত্র ১০৬ রানেই গুটিয়ে যায় জাহানারা আলমের দল। জবাবে রুমানার দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকের মুখে ৩৭.৫ ওভারে মাত্র ৯৬ রানেই গুটিয়ে যায় আইরিশ মেয়েরা। এ জয়ের ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতে আয়ারল্যান্ড সফর শেষ করল বাংলাদেশ। রুমানার ভাগ্যটা সুপ্রসন্নই বলা যায়। কারণ এবার আয়ারল্যান্ড সফরে ২ টি২০ ও ২ ওয়ানডের সিরিজ ছিল। তবে বৃষ্টিতে একটি টি২০ ও দুই ওয়ানডে পরিত্যক্ত হওয়ার পর তৃতীয় ওয়ানডে সূচীতে যোগ করা হয়। বেলফাস্টের ইস্টোনিয়ান্স ক্রিকেট ক্লাবের শজ ব্রিজ লোয়ার গ্রাউন্ডে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু টপঅর্ডারদের ব্যর্থতায় ঘোরতর বিপদে পড়ে সফরকারী দল। আর এ বিপদের মূলে ছিলেন মিডিয়াম পেসার এ্যামি কেনিলি। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে তিনি বাংলাদেশের ৬ টপঅর্ডার ব্যাটারের চারজনকেই সাজঘরে ফিরিয়ে দেন। এই বিপর্যয় একাই সামাল দিয়ে যাচ্ছিলেন ওপেনার সানজিদা ইসলাম। পরের দিকে রিতু মনি ১৩, অধিনায়ক জাহানারা ১৪ ও নাহিদা আকতার ১১ রানের তিনটি ক্ষুদ্র ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে আরও বাজে অবস্থায় পড়া থেকে রক্ষা করেন। আর অতিরিক্ত থেকে ২৬ রান আসে। মাত্র ২৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সানজিদা ৫৩ বলে ৪ চারে ৩৩ রানের একটি ইনিংস খেলে ফিরে যান। ৪০.১ ওভারে মাত্র ১০৬ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। কেনিলি মাত্র ৩২ রানে নেন ৪ উইকেট। জবাব দিতে নেমে দারুণ এক ওপেনিং জুটি পায় আইরিশ মেয়েরা। মেগ কেনডাল ও সিসিলিয়া জয়েস দারুণ ব্যাটিং করে ৫২ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের ভিত গড়ে দেন। প্রথম আঘাত হানেন অফস্পিনার খাদিজাতুল কুবরা, ফিরিয়ে দেন কেনডালকে (৫৬ বলে ২ চারে ২৩)। তিনি শনা কাভানাফকেও শিকার করেন একই ওভারে। ফলে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশের মেয়েরা। দারুণ ব্যাট করা সিসিলিয়াও ৭৭ বলে ৪ চারে ৩৫ রান তুলে রানআউটের শিকার হন। এরপরই বিপদ নেমে আসে। অধিনায়ক লরা ডেলানি ছাড়াপ আর কেউ বাংলাদেশী স্পিনারদের বিপক্ষে দাঁড়াতে পারেননি। টানা তিন বলে গার্থ, শিলিংটন ও ওয়ালড্রনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে হ্যাটট্রিক করেন লেগস্পিনার রুমানা। মহিলা ওয়ানডের ইতিহাসে এটি ছিল মাত্র নবম হ্যাটট্রিকের দৃষ্টান্ত আর বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম। আগের আটজন হলেনÑ ক্যারোল হজ (ইংল্যান্ড, ১৯৯৩), জুলি হ্যারিস (নিউজিল্যান্ড, ১৯৯৩), এমিলি ড্রাম (নিউজিল্যান্ড, ১৯৯৬), ক্লেয়ার কনর (ইংল্যান্ড, ১৯৯৯), সেইভ ইয়ং (আয়ারল্যান্ড, ২০০১), লটে এগিং (নেদারল্যান্ডস, ২০০৮), ড্যান ভ্যান নিকার্ক (দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১৩) ও ইনোকা রণবীরা (শ্রীলঙ্কা, ২০১৫)। ডেলানি ৫৩ বলে ৩ চারে ২৬ রান করে ফিরে যাওয়ার পরই নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের জয়। ৩৭.৫ ওভারে মাত্র ৯৬ রানে থুবড়ে পড়ে আইরিশ মেয়েদের ইনিংস। ৭.৫ ওভারে দুটি মেডেনসহ ২০ রানে ৩ উইকেট নেন রুমানা। ১০ রানের জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতে যায় বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল আয়ারল্যান্ড। স্কোর ॥ বাংলাদেশ মহিলা দলের ইনিংস- ১০৬/১০; ৪০.১ ওভার (সানজিদা ৩৩, জাহানারা ১৪, রিতু ১৩, নাহিদা ১১; কেনিলি ৪/৩২, গার্থ ২/২৪)। আয়ারল্যান্ড মহিলা দলের ইনিংস- ৯৬/১০; ৩৭.৫ ওভার (সিসিলিয়া ৩৫, ডেলানি ২৬, কেনডাল ২৩; রুমানা ৩/২০, ফাহিমা ২/১৩, খাদিজা ২/২০)। ফল ॥ বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল ১০ রানে জয়ী। সিরিজ ॥ ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল ১-০ ব্যবধানে জয়ী। সিরিজ সেরা ॥ রুমানা আহমেদ (বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল)।
×