ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কট এড়াতে যমুনার পর্যাপ্ত পানি পেতে এ সিদ্ধান্ত

বড়পুকুরিয়া খনিমুখের দুটি বিদ্যুত কেন্দ্র গাইবান্ধায় সরানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বড়পুকুরিয়া খনিমুখের দুটি বিদ্যুত কেন্দ্র গাইবান্ধায় সরানো হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ পানি সঙ্কটে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনির মুখ থেকে পরিকল্পনাধীন দুটি বিদ্যুত কেন্দ্র গাইবান্ধায় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি (এপিএসসিএল) বিদ্যুত কেন্দ্র দুটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ানোয় স্থানীয় পর্যায়ে পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে খনিমুখে বিদ্যুত কেন্দ্র দুটি স্থাপনের প্রক্রিয়া বাতিল করা হচ্ছে। এখন গাইবান্ধার সুবিধাজনক স্থানে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যাতে বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনার জন্য যমুনার পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায়। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, দিনাজপুর থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত রেললাইন রয়েছে। এর বাইরে কয়লা পরিবহনে প্রকল্প পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ করা হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য পাওয়ার চায়নার সঙ্গে যৌথ মূলধনী কোম্পানির সঙ্গে একটি যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে। এজন্য পিডিবি বিদ্যুত বিভাগের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে। পাওয়ার চায়নার দুই হাজার ১শ’ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে। এর বাইরে তারা আরও ১৩২০ মেগাওয়াটের নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। যা ২০১৭ সালের শেষ দিকে উৎপাদনে আসবে বলে ওই চিঠিতে পিডিবি উল্লেখ করেছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হচ্ছে। এছাড়া বড়পুকুরিয়াতে একটি ২৫০ মেগাওয়াটের কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রের জন্যও পানি প্রয়োজন হচ্ছে। সম্প্রতি পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সঙ্গত কারণেই দিনাজপুরে আর বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ বাস্তব সম্মত হবে না বলে মনে করছে বিদ্যুত বিভাগ। বড়পুকুরিয়ায় পানি সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সরকারকে গোয়েন্দা সংস্থা একটি প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত কেন্দ্র ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে। এতে স্থানীয় ১৪ গ্রামে ভয়াবহ হচ্ছে পানি সঙ্কট। এই ১৪ গ্রামের মানুষ যে কোন মুহূর্তে ভয়ঙ্কর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে সরকারকে সতর্ক করা হয়। সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রটি পুরনো সাব ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির। এখানে আধুনিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার না করায় ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে বিদ্যুত কেন্দ্রটি ঠা-া রাখা হয়। অন্যদিকে বড়পুকুরিয়া খনির উত্তোলিত পানি পরিশোধন করে না। কিন্তু শুরুতে যে পরিকল্পনা ছিল তাতে দেখা যায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি বড়পুকুরিয়ার পরিশোধিত পানি ব্যবহার করবে। কিন্তু এখন ভূগর্ভস্থ পানি সঙ্কটে বড়পুকুরিয়াতে কোন অগভীর নলকূপে আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না। গত ১০ বছরে ১৩০ মিটার নিচে নেমে গেছে এই এলাকার পানির স্তর। সম্প্রতি এক বৈঠকে বিদ্যুত কেন্দ্র দুটি গাইবান্ধায় সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, এপিএসসিএল বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ফুলপুর নামে একটি নির্ধারণ করেছে। প্রাথমিক সমীক্ষাও শুরু হবে। বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এগিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত বিদ্যুত বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন নিজেরাই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে বলে জানা গেছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে তারা কোন কোম্পানিকে সঙ্গে নিচ্ছে না। এটি দেশের দ্বিতীয় উদ্যোগ। এর আগে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি মহেশখালীতে একটি বড় কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ প্রসঙ্গে বলেন, দিনাজপুরে পানি সঙ্কটের কারণে খনিমুখে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা যাচ্ছে না। আমরা গাইবান্ধায় কেন্দ্র দুটি সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যমুনার তীরে কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি সংস্থানের চেষ্টা চলছে। এজন্য গাইবান্ধা থেকে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত পৃথক রেললাইন নির্মাণ করা হবে।
×