ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যানজট নিরসনের নামে চাঁদাবাজি ॥ জিম্মি ২১ জেলার চালক

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যানজট নিরসনের নামে  চাঁদাবাজি ॥ জিম্মি ২১  জেলার চালক

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ১১ সেপ্টেম্বর ॥ ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করতে সরকার পুরোদমে চেষ্টা করে গেলেও ঠিক তার উল্টো চিত্র কাওড়াকান্দি-ভাঙ্গা-বরিশাল-খুলনা মহাসড়কে। যানজট নিরসনের নামে সুকৌশলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এই রুটের হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে। শুধু ঢাকা-বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে কাওড়াকান্দি ঘাট পর্যন্ত ৫টি স্থানে চলছে নীবর চাঁদাবাজি। একদিকে ঘরেফেরা মানুষের ভিড়, অন্যদিকে পুলিশী হয়রানি, সব মিলিয়ে দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় যাতায়াতকারী পরিবহন চালকরা। রবিবার সরেজমিন একাধিক পরিবহন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাতায়াতের অন্যতম ব্যস্ত ঢাকা-বরিশাল-খুলনা মহাসড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। রোজা ও কোরবানির ঈদে অন্য সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন যাতায়াত করে। এ কারণে প্রতিনিয়ত ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। আর এ সুযোগে এক অভিনব কৌশলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় হাইওয়ে পুলিশসহ দালাল চক্র। রুটের ভাঙ্গা থেকে ৫টি স্থানে দফায় দফায় ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় পুলিশ ও তাদের দালালদের। ফলে সহজেই মিলে সিরিয়াল বা আগে যাওয়ার টিকিট। একাধিক ভুক্তভোগী ট্রাক ড্রাইভার অভিযোগ করে জানান, প্রথমে ভাঙ্গার চৌরাস্তার মোড় থেকে টাকা দিতে হয়, দ্বিতীয় মালিগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে, তৃতীয় পুলিয়ার বাজার এলাকায়, তারপর আড়িয়াল খাঁ ব্রিজের আগে ও পরে। সর্বশেষ পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ডে টাকা না দিলে সেদিন আর সিরিয়াল মিলে না। এসব স্থানে টাকা দিতে কোন ট্রাক ড্রাইভার রাজি না হলে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্ধারিত ৫০ টাকার স্থলে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এই অবৈধ টাকা আত্মসাতের সঙ্গে স্থানীয় দালাল, বিআইডব্লিউটিএর কর্মী এবং হাইওয়ে পুলিশ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ঈদে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক থেকে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বরিশাল থেকে আসা গরুর ট্রাক ড্রাইভার আমজেদ হোসেন বলেন, ‘ভাঙ্গায় পুলিশকে ৫শ’ দিয়ে আড়িয়াল খাঁ ব্রিজের কাছে আসতেই আরও ৫শ’ দিতে হয়েছে। পাঁচ্চর আসার পর এক রাত থাকতে হয়েছে, সেখানেও সিরিয়াল পেতে হাইওয়ে পুলিশকে এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে। শিবচর থানা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজ এসব অভিযোগের সঙ্গে পুলিশ জড়িত থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। সেই সঙ্গে তাদের চালকদের অতিরিক্ত অর্থ না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমাদের কোন পুলিশ চাঁদা নেয় না। আমরা ঈদে জেলা পুলিশের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করি। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঈদে যাত্রীদের নির্বিঘেœ সেবা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। ঈদের আগে ও পরে মোট ১০ দিন বিশেষ সেবা হিসেবে জেলা পুলিশের প্রায় আড়াই শ’ পুলিশ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। যদি কেউ অতিরিক্ত টাকা দাবি করে, তাহলে আমরা দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।’
×