ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব ও আলেপ্পোয় নিহত ৯৮, বিশ্বজুড়ে আত্মঘাতী হামলার হুমকি নুসরা ফ্রন্টের

চুক্তির পরও ব্যাপক বিমান হামলা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

চুক্তির পরও ব্যাপক বিমান হামলা

সিরিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধ অবসানে রুশ- মার্কিন অস্ত্রবিরতির পরিকল্পনাকে সিরীয় সরকারের অনুমোদনের কয়েক ঘণ্টা পরেই দেশটির বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো হয়। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর ইদলিব ও আলেপ্পোতে কারা এই হামলা চালিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এই হামলায় ৯৮ জন নিহত হয়েছে। এদিকে সিরিয়ার প্রধান বিদ্রোহী আমব্রেলা গ্রুপের এক সিনিয়র সদস্য শনিবার বলেছেন, তারা আশা করছেন যে, দেশের বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ কমাতে এই মার্কিন-রুশ চুক্তি কার্যকর হবে। অপরদিকে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা জাবাত ফাতাহ আল-শাম বা নুসরা ফ্রন্ট হুমকি দিয়েছে যে, যদি তাদের আমেরিকা ও রাশিয়া টার্গেট করে তাহলে তারা বিশ্বজুড়ে আত্মঘাতী হামলা চালাবে। খবর এএফপি ও ইয়াহু নিউজের। মার্কিন-রুশ যৌথ পরিকল্পনার আওতায় সোমবার সিরিয়ায় নতুন অস্ত্রবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে। সিরীয় সরকার বিরোধী পক্ষের অধিকৃত সুনির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে সামরিক অভিযান বন্ধ করবে এবং অবরুদ্ধ বেসামরিক নাগরিকদের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দেয়া হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও তার রুশ প্রতিপক্ষ সের্গেই লাভরভের মধ্যে আলোচনার পর ওই ঘোষণা দেয়া হয়। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ শনিবার এই চুক্তি অনুমোদন করেছেন। কিন্তু বিদ্রোহীরা চুক্তি সম্পর্কে সর্তক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, সরকার এই চুক্তি অনুমোদন করেছে এবং মানবিক কারণে আলেপ্পোয় অস্ত্রবিরতি চলবে। চুক্তি বিষয়ে ওয়াকিবহাল সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে সানা আরও জানায়, পুরো চুক্তি সম্পর্কে অবগত আছে সিরীয় সরকার। এদিকে সরকার বিরোধী গ্রুপ হাই নেগোসিয়েশনস কমিটি (এইচএনসি) আরও হুঁশিয়ার হয়ে বলেছে, তারা এখনও চুক্তির আনুষ্ঠানিক বার্তা পায়নি। এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও দেশটিতে হত্যাকা- অব্যাহত রয়েছে। ব্রিটিশভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ইদলিব নগরীর একটি বাজারসহ কয়েকটি এলাকায় বিমান হামলায় ৫৮ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৩ নারী ও ১৩ শিশু রয়েছে। এছাড়া আলেপ্পো শহরের আশপাশে অপ্সাত বিমান হামলায় ১২ এবং আলেপ্পো প্রদেশের অন্যত্র ১৮ জন নিহত হয়েছে। এইচএনসির এক সদস্য বাসমা কদমানি বলেছেন, তারা অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে সতর্কতার সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তারা দামেস্কের এই চুক্তি মেনে চলার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এই চুক্তি মেনে চলতে আসাদ সরকারকে চাপ দেয়া উচিত রাশিয়ার। মার্কিন-রুশ পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিরিয়ার সরকারী বাহিনী বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালানো বন্ধ করে দেবে এবং জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধেও অভিযান চালাতে পারবে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আল-কায়েদা সমর্থক আল-নুসরা থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখবে। বিভিন্ন এলাকায় আসাদবিরোধী লড়াইয়ে এসব বিদ্রোহী জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে অংশ নিয়েছে। রাশিয়া ও তার মিত্র আসাদ সরকার যদি সমঝোতার শর্ত মেনে সাত দিন যুদ্ধ বন্ধ রাখে, তবেই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একযোগে আইএস ও অন্যান্য জঙ্গী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের চার্লস লিস্টার বলেছেন, এই পরিকল্পনার পর বড় একটি প্রশ্ন ঘুরছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কিভাবে নির্ণয় করবে যে কোন এলাকায় বিরোধীরা জাবাত ফাতাহ আল-শাম জঙ্গীদের থেকে যথেষ্ট দূরত্বে আছে এবং কোন এলাকায় কাছাকাছি আছে। জঙ্গী সংগঠন নুসরা বর্তমান নাম জাবাত ফাতাহ আল-শাম (জেএসএস)। তিনি বলেন, এটি গোপন কোন বিষয় নয় যে, সিরিয়ার মূলধারার বিরোধীরা দক্ষিণাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও উল্টর-পশ্চিমাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে জেএসএস বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপকভাবে মিশে গিয়েছে। এদিকে জেমসএফর এক কর্মকর্তা বলেছেন, যদি মার্কিন ও রুশ বাহিনী তাদের উপর হামলা চালায় তাহলে তারা দ্রুত এর জবাব দেবে। এই মিশনের জন্য তাদের বহু আত্মঘাতী হামলাকারী প্রস্তুত রয়েছে।
×