ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাফল্যের স্বীকৃতি দিয়েছেন অমর্ত্য সেনরা বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উদযাপনে আসছেন স্বয়ং বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ বিশ্বে অনুকরণীয় নাম

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ বিশ্বে অনুকরণীয় নাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সামনে এক অনুকরণীয় নাম। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনসহ দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের স্বীকৃতি মিলেছে অমর্ত্য সেন, কৌশিক বসুসহ বড় বড় অর্থনীতিবিদের কাছ থেকে। ২০০০ সালে দেশে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৬০ শতাংশের কাছাকাছি, এখন সেটি ২৩ শতাংশের ঘরে। শুধু তাই নয়, গড় আয়ু, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু হার, সবার জন্য শিক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশনসহ সামাজিক সূচকগুলোতে এরই মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ ‘বিস্ময়কর উন্নয়ন’ নজরে এসেছে অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংকেরও। তাই আগামী ১৭ অক্টোবরের ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন’ দিবসটি এ দেশেই উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এরই ধারাবাহিকতায় তিন দিনের সফরেঢাকায় আসছেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। তিনি ঢাকা আসবেন ১৬ অক্টোবর। পরদিন ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’ উদযাপন করবেন এখানেই। সেদিন ঢাকায় দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে একটি ‘পাবলিক লেকচার’ হবে। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেবেন কিম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা বক্তৃতা করবেন ওই অনুষ্ঠানে। ঢাকায় অবস্থানকালে বিশ্বব্যাংকপ্রধান শেখ হাসিনা ও আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশের কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পও তিনি ঘুরে দেখবেন। জিম ইয়ং কিমের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি অর্থমন্ত্রী মুহিত এবং বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট অভিভূত। তাই নিজের আগ্রহেই বাংলাদেশ সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উপলক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছেন ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’। বাংলাদেশে এবার দিবসটি ভিন্ন আঙ্গিকে পালিত হবে। জাহিদ হোসেন বলেন, ঢাকায় তিন দিনের সফরে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী মুহিতের সঙ্গে সাক্ষাত করার পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। তিনি বলেন, এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অর্জন শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, অনুকরণীয় হয়েছে উন্নয়নশীল বিশ্বে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় মাথাপিছু আয় কম হওয়ার পরও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশ দেখিয়েছে প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য বিমোচনের একমাত্র অবলম্বন নয়, স্বল্প আয় নিয়েও অনেক অর্জন সম্ভব। এ সাফল্য দেখতেই বাংলাদেশ সফরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্বব্যাংকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঢাকা আসছেন জিম ইয়ং কিম। সর্বশেষ ২০০৭ সালের নবেম্বরে দু’দিনের সফরে ঢাকা আসেন তখনকার বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কিছুটা টানাপোড়েন তৈরি হলেও সেটিকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চায় বিশ্বব্যাংক। তার অংশ হিসেবে প্রতিবছরই বাংলাদেশে অর্থায়ন বাড়ানো হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা যে ভুল ছিল, সেটি এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার এবং এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এবারের দারিদ্র্য বিমোচন দিবসে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এ ধরনের ইতিবাচক বক্তব্য এলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের সামনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতিবছর দারিদ্র্য বিমোচন দিবস পালন করে আসছে জাতিসংঘ। সাধারণত যেসব দেশের দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা প্রশংসনীয়, সেসব দেশেই দিবসটি উদযাপন করা হয়।
×