ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আসল পরিচয় জামশেদ হোসেন ॥ আহত নারী জঙ্গীদেরও পরিচয় মিলেছে

আজিমপুরে অভিযানের সময় মৃত জঙ্গী আত্মহত্যা করেছে

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আজিমপুরে অভিযানের সময় মৃত জঙ্গী আত্মহত্যা করেছে

শংকর কুমার দে ॥ মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে জঙ্গী মেজর জাহিদুল ইসলাম নিহত হওয়ার পর তার পলাতক দুই সন্তানসহ স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাতে গিয়েই আজিমপুরে সন্ধান পাওয়া যায় নারী জঙ্গী আস্তানার। নারী জঙ্গী আস্তানায় নিহত পুরুষ জঙ্গী করিমের প্রকৃত পরিচয় হচ্ছে জামশেদ হোসেন ওরফে শমসের উদ্দিন, বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলার মেহেরচন্ডী গ্রামে। পুলিশী অভিযানের সময় গলাকাটা অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়, সে আত্মহত্যা করেছে বলে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার। জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানোকালে আহত অবস্থায় গ্রেফতারকৃত তিন নারী জঙ্গীর মধ্যে মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা, নিহত জঙ্গী জামশেদের স্ত্রী শাহেলা ও পলাতক জঙ্গী চকলেটের স্ত্রী শারমিন এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিন নারী জঙ্গীই সুইসাইড স্কোয়াডের (আত্মঘাতী দলের) সদস্য বলে মনে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। নারী জঙ্গী আস্তানা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে ৪টি পিস্তল, ৫০ রাউন্ড গুলি, ৪টি ল্যাপটপ, প্রায় ৩ লাখ টাকা ও বিস্ফোরক। এখান থেকে উদ্ধার করা তিন শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। নারী জঙ্গী ও শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে রাজধানী ঢাকায় ও আশপাশের এলাকায় আরও জঙ্গী আস্তানা আছে। আজিমপুরের নারী জঙ্গী আস্তানায় আরও অনেক পুরুষ জঙ্গীর যাতায়াত ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ঈদ-উল-ফিতরের দিনে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের অদূরে জঙ্গী হামলার মতো আবারও ঈদ-উল-আযহায় জঙ্গী হামলার আশঙ্কায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নারী জঙ্গী আস্তানায় অভিযান শেষে রবিবার সেই বাড়িটি ঘিরে কৌতুহলী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। রাজধানীর আজিমপুরে বিজিবি সদর দফতরের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন ২০৯/৫ নম্বরের ছয়তলা বাড়ির সামনের রাস্তায় কৌতুহলী মানুষের ভিড়। ছয়তলা এই বাড়িটির মালিক হাজী কায়সারের মালিকানাধীন ছয়তলা বাড়িটির দোতলায় খোঁজ পাওয়া যায় নারী জঙ্গীর আস্তানাটির। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জঙ্গী আস্তানার খোঁজ পেয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। ঘনবসতি এলাকার জনাকীর্ণ রাস্তার পাশের এ বাড়িটিতে অভিযান চালানোর আগে কেউ ভাবতেই পারেনি এখানে কোন জঙ্গী আস্তানা থাকতে পারে। শনিবার রাত সাড়ে সাতটা থেকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অভিযানের সমাপ্তি টানা হয় রাত বারোটায়। সরেজমিন দেখা যায়, নারী জঙ্গী আস্তানায় অভিযান শেষ হওয়ার পর থেকেই এ বাড়িটির সামনের রাস্তায় ও আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। রবিবার আজিমপুরের নারী জঙ্গী আস্তানা ঘিরে দেখা গেছে কৌতুহলী মানুষের ভিড়। এক সময়ের বিজিবি ২ নম্বর গেট থেকে সোজা মেডিক্যাল স্টাফ কোয়ার্টারে যাওয়ার মাঝামাঝি স্থানে রাস্তার পূর্ব পাশের সরুগলিতে প্রবেশ পথে পশ্চিমমুখী ছয়তলা বাড়িটির অবস্থান। ছয়তলা বাড়িটির দোতলার নারী জঙ্গী আস্তানায় শনিবার রাতে অভিযান চালানোর খবর শুনেই কৌতুহলী মানুষের ভিড় দেখা যায়। এ বাড়িটির সামনে রয়েছে কয়েকটি দোকান ও দারুল হুদা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট নামে একটি মাদ্রাসা। বাড়ির গলির মুখে বেঞ্চ পেতে বসে রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। গলিতে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। অদূরে পুলিশের একটি বড় ও একটি ছোট ভ্যানগাড়ি রয়েছে। রাস্তাসংলগ্ন হওয়ায় যারাই এ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন তারাই খানিকটা থেমে, উপরের দিকে তাকিয়ে বাড়িটি দেখছিলেন। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা আজিমপুর নারী জঙ্গী আস্তানায় নিহত জামশেদ ওরফে করিমের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ সোহেল মাহমুদ বলেন, ওই যুবকের গলার বাঁ পাশে কাটা জখম রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, সুইসাইড করলে যে ধরনের নমুনা থাকে, অর্থাৎ ডান হাতে ছুরি ধরে বাম গলায় আঘাত, এই যুবকের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। এ নমুনা থেকে ধারণা করছিÑ এটা আত্মহত্যা। ওই যুবকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি ছোট ছোট আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। যেগুলো ছুরির খোঁচা বলে মনে হয়েছে চিকিৎসকের কাছে। তবে গলার আঘাত থেকে রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, তার ডান হাতের কাছে ঝলসানো জখমও রয়েছে। বোমা বিস্ফোরণ থেকে ওটা হয়েছে বলে ধারণা করছি। শনিবার সন্ধ্যায় আজিমপুর বিজিবি সদর দফতরের ২ নম্বর গেটের এক বাসায় পুলিশের অভিযানের সময় ওই লাশ পাওয়া যায়। আহত হন সন্দেহভাজন তিন নারী জঙ্গী ও পাঁচ পুলিশ সদস্য। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গুলশান হামলাকারীদের জন্য বসুন্ধরায় ‘আবদুল করিম’ নাম ব্যবহার করে যিনি বাসাভাড়া নিয়েছিলেন, তার ছবির সঙ্গে আজিমপুরে নিহতের চেহারার মিল পাওয়া গেছে। নিহত জঙ্গীর প্রকৃত পরিচয় ॥ ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান বলেন, ১২-১৩ বছর বয়সী যে কিশোরকে ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সে পুলিশকে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তি তার বাবা, তার নাম জামশেদ, বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলার মেহেরচন্ডী গ্রামে। জঙ্গীবিরোধী অভিযানে ওই বাসা থেকে একটি ছেলেসহ ৩ শিশুকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের মধ্যে সবার বড় ছেলেটির বয়স ১২-১৩ বছর। আর দুটি মেয়ের মধ্যে একজনের বয়স ৯-১০ বছর, অন্যটির বয়স বছরখানেক। তিন শিশুর মধ্যে ছেলেটিই নিহতের নাম ‘জামশেদ’ বলে পুলিশকে জানিয়েছে। ওই নামেই সে আজিমপুরের বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নিহত জঙ্গীর আঙ্গুলের ছাপ নিয়েও তা জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এর মাধ্যমে তার নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নিহত ব্যক্তির নাম শমসের, জামসেদ। বাবার নাম মোসলেহ উদ্দীন। বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলার মেহেরচন্ডী গ্রামে। তবে শমসেরের ব্যাপারে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি বলে জানা গেছে। জঙ্গীবিরোধী অভিযানের পর পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তির সাংগঠনিক নাম আবদুল করিম। গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলাকারী তরুণদের বাসাভাড়া করে দিয়েছিলেন করিম নামের ওই নিহত জঙ্গী। এর আগে শনিবার রাতে পুলিশ বলেছিল, নিহত যুবক নব্য জেএমবির নেতা এবং গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলাকারীদের সহযোগী ‘আবদুল করিম’ বলে তাদের ধারণা। শনিবার সন্ধ্যায় আজিমপুর বিজিবি সদর দফতরের ২ নম্বর গেটের ওই বাসায় পুলিশের অভিযানের সময় জামশেদ ওরফে আবদুল করিমের লাশ পাওয়া যায়। আহত হন সন্দেহভাজন তিন নারী জঙ্গী ও পাঁচ পুলিশ সদস্য। রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গীর গলা কাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কে এই জামশেদ নামের জঙ্গী করিম ॥ আজিমপুর অভিযানে নিহত হয়েছে করিম নামের এক জঙ্গী। কেই এই করিম? পুলিশ জানিয়েছে, গুলশানের হলি আর্টিজান, শোলাকিয়ায় ও কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন স্থানে জঙ্গীদের আস্তানা গড়ে তুলতে বাসাভাড়া নিত এই করিম। জঙ্গী করিমের প্রকৃত নাম জামসেদ ওরফে তানভীর বলে পুলিশের একটি সূূত্র জানিয়েছে। করিমের কাজই হচ্ছে জঙ্গীদের জন্য বাসাভাড়া করা। তার স্ত্রীও জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। এর আগে বসুন্ধরা, কল্যাণপুর ও শোলাকিয়ায় এই করিমই স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ জঙ্গীদের জন্য সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে বাসাভাড়া নিয়েছিল বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। তবে তার বিস্তারিত তথ্য এখনও সংগ্রহ করা হচ্ছে। করিম দম্পতি একসঙ্গে একাধিক বাসাভাড়া নিয়ে রেখেছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এসব বাসার কয়েকটিতে অভিযানও চালানো হয়েছে। তবে তাদের সেসব জায়গায় পাওয়া যায়নি। করিমের মাধ্যমে রাজধানীতে আরও যেসব বাসাভাড়া নেয়া হয়েছে, তা শনাক্ত হওয়া অন্তত তিনটি বাসায় অভিযান চালিয়েছে গোয়েন্দারা। যেসব বাসা ভাড়া নেয়া হয়েছে সেসব বাড়িওয়ালারা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাদের না জানিয়েই ভাড়াটেরা কোথাও চলে গেছে। ওই সব বাসায় উল্লেখযাগ্য কোন আসবাবপত্রও নেই। কোনরকমে ঘুমানোর জন্য কিছু তোষক ও বিছানাপত্র ও রান্নার জন্য হাঁড়িপাতিল পাওয়া গেছে। পুলিশের আইজি যা বলেছেন ॥ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নিহত যুবকের সঙ্গে গুলশান হামলায় সন্দেহভাজন একজনের চেহারার মিল পেয়েছেন তারা। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় ওই হামলার কিছুদিন আগে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাটে হামলাকারীরা আশ্রয় নিয়েছিল। সেই ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়া হয়েছিল ‘আব্দুল করিম’ নামে। করিম আর জামশেদ একই ব্যক্তি বলে পুলিশের ধারণা। তিনি বলেছেন, রূপনগরে অপারেশনের পরে আমরা জানতে পেরেছিলাম, রূপনগরে মারা যাওয়া জাহিদের ফ্যামিলি এবং আরও দুই-তিনজন জঙ্গী আজিমপুর এলাকায় কোথাও লুকিয়ে আছে। আমরা বেশ কয়েক দিন যাবত এটা তল্লাশি করছি। তল্লাশিতে আমরা তাদের আস্তানা খুঁজে পেয়েছি বলে জানিয়েছেন আইজিপি। বাড়িটিতে পাহারা থাকবে ॥ রাজধানীর আজিমপুরে জঙ্গীবিরোধী অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে পুলিশ। শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। অভিযান স্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে এ তথ্য নিশ্চিত করেন লালবাগ জোনের ডিসি ইব্রাহিম খান। তিনি জানান, পুলিশ অভিযান শেষ হয়ে গেলেও আরও আলামত সংগ্রহের প্রয়োজনে পুলিশ বাড়িটি পাহারা দিয়ে রাখবে। কারণ ঘটনাস্থল থেকে আরও আলামত সংগ্রহের প্রয়োজন পড়তে পারে। যেভাবে নারী জঙ্গীরা হামলা চালায় ॥ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাজধানীর আজিমপুরে জঙ্গী আস্তানার খোঁজ পেয়ে বিজিবি সদর দফতরের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন ২০৯/৫ নম্বরের ছয়তলা বাড়ির দ্বিতীয়তলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। তখন রাত সাড়ে ৭টা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায় আজিমপুরের হাজী কায়সারের বাড়িতে। ছয়তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দরজা ধাক্কা দেন পুলিশ সদস্যরা। আসছি বলে ভেতর থেকে মহিলা সদস্যরা ছোরা ও মরিচের গুঁড়া হাতে নিয়ে দরজা খোলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নারী জঙ্গীরা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে মরিচের গুঁড়া ছুড়ে মারে। তাদের একজন দুই পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেছেন, পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায়। বোমার স্পিøন্টারে ও ছুরিকাঘাতে আহত হন পাঁচ পুলিশ সদস্য। অভিযানের একপর্যায়ে ভেতরে থাকা নারী জঙ্গীরা পুলিশকে ছুরিকাঘাত ও মরিচের গুঁড়া ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের সঙ্গে থাকা পুরুষ জঙ্গী পুলিশের উদ্দেশে বোমা ছুড়ে মারে। এ সময় পুলিশও গুলি ছোড়ে। এতে পুরুষ জঙ্গী করিম নিহত হয়, যা পরে জানা যায় যে, গলা কাটা অবস্থায় তার লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশের ধারণা পুরুষ জঙ্গী আত্মহত্যা করেছে। ছুরিকাঘাত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিন নারী জঙ্গীকে আটক করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এলাকার বাসিন্দা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘গোলাগুলির একপর্যায়ে সেলোয়ার কামিজ পরা এক নারীকে ছুরি হাতে দৌড়াতে দেখি। এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি করে। একই সময় আহত এক পুলিশ সদস্য চিৎকার করে ঘটনাস্থলে আরও পুলিশ সদস্যকে পাঠাতে বলেন। তখন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক নারী সদস্যকে পুলিশ আটক করে। তিন নারী জঙ্গীর মধ্যে অপর দুই নারী জঙ্গীও আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে পুলিশ জানায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহত নারী জঙ্গীরা হলোÑ শাহেলা, শারমিন ও জেবুন্নাহার। আর নিহত জঙ্গী করিমের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের পাঁচ সদস্য। অভিযান শেষে ওই বাসা থেকে পুলিশ ৪টি পিস্তল, ৫০ রাউন্ড গুলি, চারটি ল্যাপটপ ও প্রায় ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করে। এ সময় কিছু বিস্ফোরকও উদ্ধার করা হয়। তিন শিশু ও নারী জঙ্গী সমাচার ॥ উদ্ধার হওয়া তিন শিশুর মধ্যে ছেলে শিশুটি হচ্ছে নিহত জঙ্গী জামশেদ ওরফে করিমের। অপর দুই শিশু হচ্ছে জঙ্গী মেজর জাহিদুল ইসলামের। অভিযানের পর শিশুদের ভয়ার্ত দেখা গেছে। এই জঙ্গী করিমই শিশুসন্তান ও স্ত্রীকে ব্যবহার করে জঙ্গীদের আস্তানা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন স্থানে বাসাভাড়া নিত। এর আগে কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েও জঙ্গী করিমকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। সর্বশেষ আজিমপুরের অভিযানে মারা যায় করিম। আহত তিন নারীর একজন হচ্ছে মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গী মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা। আটক তিন নারীর মধ্যে একজন পেটে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বাকি দুজনের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওই দুইজনও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা। এই তিন নারীই জঙ্গী দলের আত্মঘাতী সদস্য বলে মনে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। আলামত সংগ্রহ ॥ আজিমপুরের নারী জঙ্গী আস্তানা থেকে পুলিশের ক্রাইমসিন বিভাগের সদস্যরা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ জোনের উপকমিশনার ইব্রাহিম খান। তদন্ত ও আরও আলামত সংগ্রহের প্রয়োজনে পুলিশ জঙ্গী আস্তানা ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
×