ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানীর উত্তাপ মসলার বাজারে ॥ পেঁয়াজ স্থিতিশীল

প্রকাশিত: ০৮:১১, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কোরবানীর উত্তাপ মসলার বাজারে ॥ পেঁয়াজ স্থিতিশীল

এম শাহজাহান ॥ কোরবানির উত্তাপে পুড়ছে গরম মসলার বাজার। এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ ও জিরাসহ সব ধরনের মসলার দাম এখন উর্ধমুখী। প্রতিকেজি আমদানিকৃত ভালমানের রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। আদা ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কোরবানি সামনে রেখে এ বছর স্থিতিশীল রয়েছে পেঁয়াজের বাজার। জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২-৪০ টাকায়। তাই মসলার দাম বেশি হলেও আপাতত পেঁয়াজে স্বস্তি পাচ্ছেন ভোক্তারা। জানা গেছে, পাইকারি বাজারে মসলা কেনাবেচা হয়ে গেছে আরও পনেরো দিন আগে। এখন সেই মসলা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। তাই খুচরা পর্যায়েই এখন যত কারসাজি। বেশি মুনাফা লাভের আশায় চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে দেশে যে একটি আইন রয়েছে মসলা বাজারে গেলে তা পরিলক্ষিত হয় না। সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি’র সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, কোরবানি সামনে রেখে প্রায় সব ধরনের গরম মসলার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, হলুদ, ধনে এবং তেজপাতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর গত কয়েক মাস ধরে অস্থির রসুনের বাজার। এত দাম দিয়ে ইতোপূর্বে রসুন কেনা হয়নিÑআক্ষেপ করে জানালেন, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের ক্রেতা সাদেক হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের পর এবার রসুন নিয়ে সিন্ডিকেশন চলছে। আর এ কারণেই বেড়ে আর রসুনের দাম কমছে না। তিনি বলেন, বাজারে এখন দু’ধরনের রসুন পাওয়া যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বড় কোয়া হওয়ায় আমদানিকৃত রসুনের চাহিদা এবং মূল্য দুই-ই বেশি। তবে দেশে পর্যাপ্ত রসুন আমদানি হওয়ার পরও কেন দাম কমছে না সেটাই এখন খুঁজে দেখার বিষয়। কোরবানির সময় কেন মসলার দাম বেশি নেয়া হচ্ছে-পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি জানান, বিশ্বের অনেক দেশে উৎসবকালীন সময়ে পণ্যমূল্যে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ঠিক তার উল্টো। এখানে দাম বাড়বে বৈকি কমবে না। জানা গেছে, এবার কোরবানিতে মসলার দাম বাড়লেও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। শুধুমাত্র মসলার দাম বাড়িয়ে এবার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারী তথ্যমতে, জাত ও মানভেদে বর্তমান প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২২-৪০, রসুন ১৫০-২০০, শুকনো মরিচ ১৫০-২০০, হলুদ ১৫০-২০০, আদা ১০০-১৪০, জিরা ৩৮০-৪৫০, দারুচিনি ২৮০-৩৫০, এলাচ ১২শ’ থেকে ১৮শ’ ধনে ১২০-১৫০, তেজপাতা ১৩০-১৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, পাইকারিতে ভারতীয় জিরা লেনদেন হয়েছে প্রতিকেজি ২৯০-২৯৫ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে পণ্যটির দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৪০-২৪৫ টাকা। ওই সময় আফগানিস্তান থেকে আমদানি করা জিরা বিক্রি হয়েছিল প্রতিকেজি ২৯৫ টাকায়। তবে এখন তা লেনদেন হচ্ছে ৩৩০ টাকায়। পাশাপাশি তুরস্ক ও সিরিয়া থেকে আমদানি হওয়া জিরার দামও সমপরিমাণ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোপূর্বে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসা হয়েছে। কোরবানি সামনে রেখে চাহিদা থাকে মসলার। আর এ কারণে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার আশায় দাম কিছুটা বাড়াতেও পারে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আশা করছি, মসলার দাম তারা বাড়াবে না। এদিকে, কোরবানি সামনে রেখে ঢাকায় শুকনা মরিচের দামও বেড়েছে। দেশীয় উত্তোলন মৌসুম শেষ হলেও ভাল মানের মরিচের সরবরাহ না থাকায় আমদানিকৃত ও দেশী উভয় পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। দেশীয় উত্তোলন মৌসুমে কিছুটা ভেজা মরিচের সরবরাহ বেশি থাকায় ভাল মানের পণ্যের সরবরাহ সঙ্কট রয়েছে। মসলা ব্যবসায়ী ও মৌলভী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ এনায়েতুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, কোরবানি সামনে রেখে কয়েকটি মসলার বেড়েছে। তবে অধিকাংশ মসলার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে বেচাবিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এখন পাইকারি বাজারে ঈদের ছুটি বিরাজ করছে। তবে খুচরা পর্যায়ে যাতে দাম না বাড়তে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। জানা গেছে, দেশে জিরা ও এলাচের মোট চাহিদা প্রায় ৩০ হাজার টন। চাহিদা পূরণে অবৈধভাবে দেশে মসলা আনছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে প্রায় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে যেসব ব্যবসায়ী শুল্ক পরিশোধ করে বৈধ পথে মসলা আমদানি করছেন, তারা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেশে মসলা আমদানিতে ৬১ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয়, যা ভারতে ১০-১৫ শতাংশ মাত্র।
×