ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিরক্ষরমুক্ত দেশ

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নিরক্ষরমুক্ত দেশ

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনামূলক কিছু কথা বলেছেন, যা মানুষের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই। গণসাক্ষরতার মতো বিশাল একটি কাজে শতভাগ সাফল্য পাওয়া কোন সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। এতে চাই জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত, আন্তরিক ও সক্রিয় অংশগ্রহণ। একজন নিরক্ষর মানুষকে অক্ষরজ্ঞান করার কাজটি সুমহান, কোন সন্দেহ নেই। এটি সংশ্লিষ্ট দুটি মানুষকে (শিক্ষক ও শিক্ষার্থী) অনির্বচনীয় আনন্দ ও তৃপ্তি প্রদান করে। তবু শুধু উদ্যম ও উদ্যোগের অভাবেই অনেক সময় ব্রতটি সফলতার মুখ দেখে না। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, সকলের উদ্যোগেই আমরা এদেশকে নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা করতে পারব, যদি সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্ব স্ব এলাকার নিরক্ষর লোকদের শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে ছাত্রসমাজ, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দেশে সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশে উন্নীত করতে সমর্থ হয়েছি। সমগ্র দেশে আমাদের জনপ্রতিনিধিরা আছেন, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা আছেন, পাশাপাশি সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন শ্রেণীপেশার নাগরিক রয়েছেন; প্রত্যেকেই যদি উদ্যোগ নেন তা হলেই আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব। বর্তমান সরকার শিক্ষা সম্প্রসারণের কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। ’৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগের পদক্ষেপের ফলে মাত্র দু’বছরে সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়। এ অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ‘ইউনেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮’ লাভ করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ শাসন আমলে সাক্ষরতার হার বাড়েনি। উল্টো কমে ৪৪ শতাংশে নেমে যায়। উল্লেখ্য, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ হচ্ছে। বর্তমান সরকার গত ৭ বছরে বিনামূল্যে ১৯৩ কোটি বই বিতরণ করেছে। গত ১ জানুয়ারি ২০১৬ দেশব্যাপী ‘বই উৎসব’ পালিতও হয়েছে। বিবিএসের গত বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল সাক্ষরতার হার ৬৪.০৬ শতাংশ। ১৫ বছরের উর্ধ বয়সের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ হারÑ পুরুষ হচ্ছে ৬৭.০৬ শতাংশ আর মহিলা হচ্ছে ৬১.০৪ শতাংশ। শিক্ষার সঙ্গে সাক্ষরতার প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। বর্তমানে তা বেড়ে ৭১ শতাংশ হয়েছে যা বেশ সন্তোষজনক। ঢাকা মহানগরীতে দুই কোটি লোকের বাস বলে ধরে নেয়া হয়। এর একটি বড় অংশ গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। বিবাহিত গৃহকর্মীদের সন্তানদের ভেতর হাতে গোনা সামান্য সংখ্যকই বিদ্যালয়ে যায়। গৃহকর্মী এবং তাদের অন্তত একটি করে সন্তানকে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে তুলতে হলে শুধু উদ্বুদ্ধ করলেই সবটা করা হয় না। এজন্য প্রয়োজন সক্রিয় উদ্যোগ। ওই পরিবারের কোন সদস্য যদি নিজে উদ্যোগী হয়ে নিরক্ষরকে সাক্ষর করেন তাহলেই এক ধাপে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নাগরিক নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে আলোর পথযাত্রী হয়ে উঠবে। এজন্য প্রতিটি পরিবারের গৃহকর্তা ও গৃহিণীর কাছে হৃদয়স্পর্শীভাবে আহ্বান জানানো জরুরী। বস্ত্র শ্রমিকদের মধ্যেও নিরক্ষরতা দূরের অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া যায়। প্রতিটি সচেতন নাগরিক নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়ার কাজে আন্তরিকভাবে এগিয়ে এলে সত্যি সত্যি একদিন এ দেশে একজনও অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
×