ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অফশোর ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অফশোর ব্যাংকিংয়ে  ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো

ঋণ বিতরণে অফশোর ব্যাংকিংয়ের দিকেই ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো। কম সুদ হওয়ায় গ্রাহকরাও এ ঋণে আকৃষ্ট হচ্ছেন। কম সুদে ঋণ নিতে অফশোর ব্যাংকিংয়ের বৈদেশিক মুদ্রার ঋণের দিকে ঝুঁকছেন উদ্যোক্তারা। ব্যবসার খাতিরে গ্রাহকদের এ ঋণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে ব্যাংক। হু হু করে বাড়ছে অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৮৫ সালে ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য শুধু একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও অফশোর ব্যাংকিংয়ের জন্য হয়নি পূর্ণাঙ্গ কোন নীতিমালা। ফলে ব্যাংকগুলোর অফশোর ইউনিট অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। শুরুতে বিদেশি ব্যাংকগুলো এ সেবায় থাকলেও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যাংক যুক্ত হচ্ছে অফশোর ব্যাংকিং সেবায়। গত পাঁচ বছরে এ ব্যাংকিং ব্যবস্থা বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে কারণে বিদেশী ব্যাংকের পাশাপাশি দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোও আলাদা শাখা বা ইউনিট খুলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এপ্রিল-জুন সময়ে মাত্র তিন মাসেই অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলোর ঋণ বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখযোগ্য পরিমাণের ঋণ বেড়েছে বিদেশী মালিকানার এইচএসবিসি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে। ব্যাংকগুলো অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট খুলে, আবার কোন ব্যাংক পৃথক শাখার মাধ্যমে এ ঋণ দিচ্ছে। এ ধরনের ঋণ বিতরণে নীতিমালা ও তদারকি না থাকায় ব্যাংকগুলোর আগ্রহও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের লাইসেন্স নেয়ার সময়ে তাদেরকে দেশের বাইরে থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত নিয়ে তা থেকে বিদেশে বা ইপিজেডগুলোতে ঋণ বিতরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো তা না করে বেশিরভাগ ঋণ বিতরণ করছে বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে। অফশোর ব্যাকিংয়ের ঋণের একটি অংশ তারা বেআইনীভাবে বৈদেশিক মুদ্রায় স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করছে। ফলে যে আমানত বা ঋণের দায় দেশের অর্থনীতিতে স্পর্শ করার কথা নয়, এখন সেগুলো দেশের অর্থনীতির ওপর বৈদেশিক ঋণের বোঝা হিসেবে চাপছে। একই সঙ্গে এসব ঋণ অপব্যবহারের ব্যাপক নজিরও পাওয়া যাচ্ছে। অফশোর ব্যাংকিং হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের ব্যাংকিং ইউনিট। মূল ব্যাংকের সঙ্গে এর সংযোগ থাকে না, শুধু লাভ-লোকসানের হিসাবের ভিত্তিতে মূল ব্যাংকের হিসাবকে প্রভাবিত করে। তবে মূল ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজে এর জবাবহিদিতা রয়েছে। এই ইউনিটের ব্যবস্থাপনা, হিসাব, আমানত, ঋণ এসবই থাকে সম্পূর্ণ আলাদা। অফশোর ব্যাংকিংয়ের আমানত সংগ্রহ করতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায়, ঋণও দিতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। স্থানীয় মুদ্রায় কোন কাজ হবে না। তবে এই ইউনিট থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের ইপিজেটগুলো থেকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ করতে পারবে। এর সুদের হার ৬ শতাংশের নিচে। এই ধরনের ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার সম্পর্ক নেই বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একে নিবিড় তদারকির আওতার বাইরে রেখেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে বড় ধরনের অনিয়মের সন্ধান পেয়েছে। এছাড়া তারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঋণ বিতরণ করছে এবং ঋণের জন্য তহবিল সংগ্রহ করছে। এ কারণে নতুন নীতিমালা করে তদারকি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক, বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইএফআইসি, এবি, ইসলামী, সিটি, ইউসিবি, ইস্টার্ন, প্রাইম, প্রিমিয়ার, ঢাকা, ডাচ্-বাংলা, মার্কেন্টাইল, ওয়ান, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ব্যাংক এশিয়া, বাংলাদেশ কমার্স, যমুনা, শাহজালাল, এক্সিম, এনসিসি, সাউথইস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া বিদেশি ৬টি ব্যাংকও অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট পরিচালনা করছে। বিশেষ করে ইপিজেড এলাকায় তারা এই ব্যাংকিং করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। তিন মাস আগের তুলনায় যা চার হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা বেশি। এর আগে গত মার্চ পর্যন্ত এক বছরে ঋণ বেড়েছিল পাঁচ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। গত তিন মাসে বেসরকারী ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিংয়ে দুই হাজার ৮১৩ কোটি টাকা বেড়ে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। বিদেশী ব্যাংকগুলোতে এক হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। আর সরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে একমাত্র অফশোর ব্যাংকিংয়ে থাকা অগ্রণীর ঋণ তিন মাসে ৪৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১১৯ কোটি টাকা হয়েছে।
×