ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে টনক নড়ল সবার

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অবশেষে টনক নড়ল সবার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুটি প্রবাদ আছে, ‘সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকা করতে হয়’ এবং ‘শুকনো কথায় চিড়া ভেজে না।’ এদেশে কাউকে চক্ষুলজ্জা না দিলে বা কুম্ভকর্ণের ঘুম না ভাঙলে কোন কাজ হয় না। গত ৭ সেপ্টেম্বর জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছিল ‘শুধুই প্রশংসা, অর্থ সাহায্য কেন নয়?’ শিরোনামে একটি ক্রীড়াবিষয়ক প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে মূলত তীব্র সমালোচনা করা হয়েছিল সেসব মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, নেতা-নেত্রী, ব্যবসায়ী, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলোর হীন ও ক্ষুদ্র মানসিকতার; যারা শুধু বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাফল্যে আবেগী হয়ে ক্রিকেট দলকে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা এবং গাড়ি, বাড়ি, জমিসহ আকর্ষণীয় আরও অনেক কিছুই উপহার হিসেবে দিয়ে দেন। অথচ গত নয় মাসে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৪ এবং অনুর্ধ-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল এএফসি আয়োজিত তিনটি ফুটবল আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও তাদের কেউ একটা দিয়েও পুরস্কৃত করেনি। শুধু তাদের অভিনন্দন জানিয়ে কর্তব্য সম্পাদন করেছে। এ নিয়ে দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা যখন তীব্র সমালোচনায় মুখর, তখন চক্ষুলজ্জার খাতিরেই হোক আর অন্য কারণেই হোকÑ ঘুম ভাঙ্গছে ওইসব অর্থ পুরস্কারদাতাদের। এখন সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কে কার আগে মেয়েদের সংবর্ধনার আয়োজন করে তাদের অর্থের বন্যায় ভাসিয়ে দিতে পারবে! ইতোমধ্যেই কৃষ্ণা-সানজিদাদের সংর্বধনার মাধ্যমে অর্থ পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং ওয়ালটন। এমনকি মেয়েরা যখন চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরে যায় তখন যে বাফুফে তাদের হাতে মাত্র ৫ হাজার টাকা করে ধরিয়ে দিয়েছিল, সেই বাফুফেও নাকি মেয়েদের অর্থ পুরস্কার দেবে জমকালো সংবর্ধনার আয়োজন করে! এসব ব্যাপার দেখে দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের সরস মন্তব্য, ‘অবশেষে দেরিতে হলেও ঘুম ভাঙ্গছে। আলসেমি, লজ্জা, বদভ্যাস কাটিয়ে সবার এই উদ্যোগে উপকৃত হতে যাচ্ছে দরিদ্র পরিবারের ২৩ ফুটবলার।’ এদিকে স্বতঃস্ফূর্ত হয়েই হোক কিংবা অন্যদের দেখাদেখিই হোক অনুর্ধ-১৬ দলকে আর্থিক পুরস্কারে সম্মানিত করার ঘোষণা দিয়েছে সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস লিমিটেড (এসজিএস)। মেয়েদের সাফল্য দেখে তাদের উন্নয়নে বাফুফের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮ যুব বিশ্বকাপ এবং এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপকে সামনে রেখে তাদের যৌথ পরিকল্পনায় স্থান পেয়েছে ফুটবলারদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি। এছাড়াও এএফসি অনুর্ধ-১৬ টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে মেয়েদের মুখোমুখি হতে হবে কঠিন প্রতিপক্ষের। তাই দলের পরীক্ষিত ও সফল কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনকেই দলের কোচ হিসেবে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাফুফে। তাকে সঙ্গে রেখেই বয়সভিত্তিক এই দলটির জন্য বিদেশী টেকনিক্যাল স্টাফ নিয়োগ দেয়ার কথা ভাবছে বাফুফে। এক্ষেত্রেও তাদের পাশে থাকতে চাইছে এসজিএস। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ‘অনুর্ধ-১৬ দলের মেয়েদের একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছান পর্যন্ত আমরা পাশে থাকব। একটা প্যাকেজ তৈরি করতে যাচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদী বেতন কাঠামো হতে পারে। তাদের নিউট্রিশনে যে খরচ হবে তার একটা অংশ আমরা স্পন্সর করব।’ এদিকে এএফসি অনুর্ধ-১৬ প্রতিযোগিতার গ্রুপ পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের তিন সদস্যের পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসন। এরা হলো ঃ অনুর্ধ-১৬ দলের অধিনায়ক টাঙ্গাইলের গোপালপুরের মেয়ে কৃষ্ণা রানী সরকার এবং তার দুই সতীর্থ জ্যোৎস্না আক্তার ও রুমা আক্তার। জেলা প্রশাসন জানিয়েছেÑ পড়ালেখা বাবদ এ তিনজনের প্রত্যেকের পরিবারকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হবে। এদিকে অনুর্ধ-১৬ দলের ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের ৯ ফুটবলারের লোকাল বাসে গ্রামের বাড়ি যাওয়া, বাসে খেলোয়াড়দের ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়া, গ্রামে গিয়ে এক ফুটবলারের বাবাকে স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষকের মারধর করা এবং ৯ ফুটবলারকে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেয়া ও জুতাপেটার হুমকি... এসব ঘটনায় বাফুফের প্রতি যে সমালোচনা হচ্ছে, তা নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে বাফুফে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেটা ঈদের ছুটির পর, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর। শনিবার এমনটাই বলেন বাফুফে সভাপিত কাজী মোঃ সালাউদ্দিন।
×