ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের পরই মাশরাফি-মুশফিকদের বিরামহীন ব্যস্ততা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঈদের পরই মাশরাফি-মুশফিকদের বিরামহীন ব্যস্ততা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনেকদিন হয়ে গেল। এ বছর মার্চ থেকেই আর কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে না বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ছয় মাস পর আবার ক্রিকেটে ফিরছেন মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিমরা। ঈদের পরই ক্রিকেটারদের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে। টানা ক্রিকেটের মধ্যেই থাকতে হবে। দম ফেলার ফুরসতও মিলবে না। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে নির্ধারিত ওভার ও মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে টেস্ট ক্রিকেটের ব্যস্ত সময় শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশের। সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত দেড় বছর টানা খেলার মধ্যেই থাকতে হবে। বিরামহীন ক্রিকেট খেলেই যাবেন ক্রিকেটাররা। এখন ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। ২০ জুলাই ফিটনেস ক্যাম্প শুরু হয়েছিল। আগস্টে শুরু হয়েছে ‘ব্যাট-বলে’র অনুশীলন। নিজেদের মধ্যে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছেন জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে থাকা ৩০ ক্রিকেটার। এখন ছুটি কাটাতে কেউ কেউ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে গেছেন। আবার কেউ কেউ যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। পরিবার-আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ছুটির সময়টি উপভোগ করবেন। মঙ্গলবার প্রস্তুতি ম্যাচ শেষেই ছুটি পেয়ে গেছেন ক্রিকেটাররা। সেই ছুটি শেষ হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। ১১ দিনের ছুটি পেয়েছেন। এরই মধ্যে প্রাথমিক দল থেকে ১০ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে। ২০ ক্রিকেটারের পুল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে পুলের ২০ ক্রিকেটারকে নিয়ে শুরু হয়ে যাবে আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের জন্য প্রস্তুতি। যে পুলে আছেনÑ তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, এনামুল হক বিজয়, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, মুশফিকুর রহীম, সাব্বির রহমান রুম্মন, তাইজুল ইসলাম, মাশরাফি বিন মর্তুজা, শফিউল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, শুভাশীষ রায় চৌধুরী, মেহেদী মিরাজ, মোশাররফ হোসেন রুবেল, আলাউদ্দিন বাবু, আল আমিন হোসেন। এ ক্রিকেটারদের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের কাছে সকাল ৯টায় রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। এই পুল থেকেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো খেলতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের জন্য সেরা ১৪ জনকে রাখা হবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৫ সেপ্টেম্বর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ দিয়েই ১০ মাস পর ওয়ানডেতে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। গত বছর নবেম্বরে সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন মাশরাফিরা। এরপর থেকে শুধু টি২০ ম্যাচই খেলেছেন। এই ম্যাচ দিয়েই আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে এতদিন বিরতিতে ছিল বাংলাদেশ, সেই বিরতি ভাঙ্গবে। এই ম্যাচ দিয়েই আবার শুরু হয়ে যাবে ব্যস্ত সূচী। ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলার পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১ অক্টোবর তৃতীয় ওয়ানডেতে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এরমধ্য দিয়ে আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ শেষ হয়ে যাবে। আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ শেষের পরই আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামতে হবে। ৭, ৯ ও ১২ অক্টোবর যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের জন্য প্রস্তুত হতে হবে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০ অক্টোবর প্রথম টেস্টে খেলতে নামার আগে প্রস্তুত হতে মাত্র ৭ দিন হাতে সময় পাবেন মুশফিকুর রহীমরা। গত বছর জুলাই-আগস্টে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ১৩ মাস পর আবার টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। দুই দলের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ২৮ অক্টোবর। ১ নবেম্বর টেস্টটি শেষ হবে। এরপর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে, তিন টি২০ ও দুই টেস্ট খেলতে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিউজিল্যান্ড যাবে বাংলাদেশ দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার পর মাঝে দেড়মাসের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই বাংলাদেশের। এরপরও ব্যস্ততা কমবে না জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) যে খেলতে হবে। নবেম্বরের ২০ তারিখে শুরু হওয়ার কথা বিপিএল। একমাস ধরে চলবে লীগ। লীগ শেষেই বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ড চলে যাবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ থেকে শুরু করে এ বছর আর কোন অবসর নেই ক্রিকেটারদের। শুধুই খেলার মধ্যে থাকতে হবে। একই অবস্থা আগামী বছরেও চলবে। আগামী বছর জানুয়ারির ২৪ তারিখে নিউজিল্যান্ড সফর শেষ হবে বাংলাদেশের। এরপর দেশে ফিরে এসেই আবার ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত হতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। ৮ ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটি খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে খেলার পরই আবার শ্রীলঙ্কা সফর রয়েছে বাংলাদেশের। দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও দুই টি২০ খেলতে শ্রীলঙ্কা যাবে বাংলাদেশ। সফরটি মার্চ পর্যন্ত চলবে। এ সফর শেষে অবশ্য একমাস কোন আন্তর্জাতিক খেলা নেই বাংলাদেশের। ঢাকা লীগ হলে সেই লীগে খেলতে হবে। নয়তো প্রস্তুতি ক্যাম্পেই ব্যস্ত থাকবেন ক্রিকেটাররা। মে মাস থেকেই আবার শুরু হয়ে যাবে ব্যস্ততা। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ইংল্যান্ডে জুনে অনুষ্ঠিত হবে। এবার র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা আটে থাকায় বাংলাদেশ খেলবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। এ টুর্নামেন্টে প্রস্তুতি নিতে মে মাসে আয়ারল্যান্ডে একটি তিনজাতি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। যে সিরিজে বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ছাড়াও থাকবে নিউজিল্যান্ড। ডাবল লীগ পদ্ধতির এ সিরিজে ১২ মে বাংলাদেশ খেলতে নামবে। ২৪ মে সিরিজ শেষে ১ জুন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচেই স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচটি দিয়েই ২০০২ ও ২০০৪ সালের পর তৃতীয়বারের মতো টুর্নামেন্টের গ্রুপপর্বে খেলবে বাংলাদেশ। ৫ জুন অস্ট্রেলিয়া ও ৯ জুন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা দিয়ে গ্রুপপর্বের খেলা শেষ হবে বাংলাদেশের। যদি নকআউট পর্বে ওঠে বাংলাদেশ, তাহলে আরও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষ হবে ১৮ জুন। সেই সঙ্গে হয়তো মাশরাফিও নির্ধারিত ওভারের নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে পারেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে এসেই আবার আরেকটি সিরিজের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে। এবার পাকিস্তান খেলতে আসবে বাংলাদেশে। দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও ১টি টি২০ ম্যাচ খেলতে জুনের শেষেই বাংলাদেশে পা রাখার কথা পাকিস্তান ক্রিকেটারদের। জুলাই মাসটি জুড়েই হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ। এখানেই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের শেষ নয়। আছে আরও খেলা। আগস্টের শুরুতেই আবার অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। আইসিসির ভবিষ্যত সফরসূচী অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২ টেস্ট ও তিন ওয়ানডে সিরিজ খেলার কথা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। আবার এরমধ্যে গত বছর অক্টোবরে যে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে এসে খেলে যায়নি, সেই টেস্টটিও হতে পারে। অবশেষে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা খানিকটা বিরতি পাবে। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুরো মাসজুড়েই বিরতি পাবে। ২০১৭ সালের আগস্টে গিয়ে আবার ব্যস্ত হতে হবে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অক্টোবর-নবেম্বরে ২ টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও ২ টি২০ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সিরিজটি দক্ষিণ আফ্রিকায় হবে। নবেম্বরের মাঝামাঝি সিরিজ শেষ হবে। এরপর ২০১৭ সালে আর কোন সিরিজ নেই। ২০১৮ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্ট ও ১টি টি২০ সিরিজ খেলার পর তিনজাতি সিরিজও খেলতে পারে বাংলাদেশ। মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ২ টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও ১টি টি২০ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর থেকে আবার বিরতি শুরু হবে। দুইমাস বিরতির পর জুনে এশিয়া কাপ। নবেম্বরে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ খেলবে। আবার বিরতির মধ্য দিয়েই যেতে হবে বাংলাদেশকে। খেলা হবে আর লম্বা বিরতি থাকবে। তবে এ মাসের শেষদিক থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত টানা খেলতেই থাকবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ঈদের পরই শুরু হয়ে যাবে সেই বিরামহীন ব্যস্ততা।
×