ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘চাচি চাচার লাশ পাইছি, চেনা যায় না এক্কেবারে পুইড়া গেছে’

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘চাচি চাচার লাশ  পাইছি, চেনা  যায় না এক্কেবারে  পুইড়া গেছে’

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ‘চাচি, চাচার লাশ পাইছি, চেহারা চেনা যায় না, এক্কেবারে পুইড়া গেছে।’ কথাগুলো মোবাইলে নিহত হাসান মিয়ার (৪৪) স্ত্রীকে বলছিলেন ভাতিজা খাইরুল ইসলাম। পরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জণকণ্ঠকে বলেন, এ লাশের সামনে দিয়ে বার বার গিয়েছি, তবে এটাই যে আমার চাচা, তা বুঝতে পারিনি। চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। তিনি বলেন, ভালভাবে তাকানোর পর চাচাকে চিনতে পারি। শনিবার খায়রুলের চাচার কারখানা ছুটি হলে একসঙ্গে ঈদ করতে বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল বলে জানায় সে। রুবেল আরেক হতভাগা, এই ঈদের ছুটিতে হাতে মেহেদি রাঙিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল চট্টগ্রামের এ যুবকের। রুবেল টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়লস লিমিটেডের তৃতীয় তলায় প্যাকেজিং সেকশনে কাজ করত। রুবেলের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা কেউ জানে না। দুর্ঘটনার সময় রুবেলের কারখানার ভেতরে থাকার কথা- তার ভাই হৃদয় নিশ্চিত করলেও দুর্ঘটনার পর রুবেলের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করতে পারেননি বলে তিনি জানান। তাই রুবেলের ভাগ্যে কী ঘটেছে, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে টঙ্গী বিসিক এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছেন তার এ সহোদর। খায়রুল ও হৃদয়ের মতো প্রিয়জনের খোঁজ না পেয়ে টঙ্গী বিসিক এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে আর্তনাদ করে বেড়াচ্ছেন অনেকেরই স্বজন। কেউবা ছুটে গেছেন হাসপাতালগুলোতে। যদি মেলে সন্ধান! যখনই উদ্ধারকর্মীরা কোন লাশ বের করছেন, তখন তারা ছুটে যেতে চাইছেন লাশগুলোর কাছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মীদের বাঁধা ডিঙিয়ে কেউ কেউ কোন রকমে লাশের কাছে পৌঁছাতে পারছেন কিন্তু পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া লাশগুলোকে স্বজনদের বলে শনাক্ত করতে সমর্থ হচ্ছেন না। ভাইয়ের খোঁজ পেতে দিশাহারা হৃদয় বলেন, শুক্রবার রাত ১০টায় নাইট শিফটের ডিউটি করতে কারখানায় ঢুকেছিল। সকাল ছয়টায় ওর বের হওয়ার কথা। তিনি বলেন, কারখানার ছুটির পর কোরবানির ঈদ করতে একসঙ্গে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল আমাদের। ওর বিয়েও ঠিক হয়ে রয়েছে। কারখানায় বিস্ফোরণের পর থেকেই আমি ওকে পাগলের মতো খুঁজছি। কোন হদিস পাচ্ছি না। আরেকজন নুরুল ইসলাম, অনেক খোঁজাখুঁজির পর নিহত চাচাত ভাই মাইনুদ্দিনের (৩২) লাশ পেয়েছেন বাঁকানো অবস্থায়। তিনি বলেন, ‘ওর দিকে তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে, কি অবস্থা হয়েছে! একেবারে বাঁকিয়ে গেছে।’ টঙ্গী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে নিজের নাতির খোঁজ করছিলেন দাদি। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, তার নাতি রাজেশ এখানে ক্লিনারের কাজ করে। ঘটনার পর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নিহত প্রকৌশলী আনিসুর রহমানের স্ত্রী নিগার সুলতানা জানান, সকাল পৌনে ছয়টার দিকে একটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। কারখানার পাশে গোপালপুর এলাকায় তার বাসা। শব্দ শুনে বেরিয়ে স্বামীর কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখে ছুটে যান নিগার। গিয়ে দেখেন তার স্বামীসহ কয়েকজনের লাশ বের করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ঈদের আগে এটি একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা। হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
×