কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলার পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহুত্ববাদ বজায় রাখার লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন চেয়েছে ভারত। প্রতিবেশী দেশটির এই প্রস্তাবের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার নয়াদিল্লীতে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই আলোচনা হয়। ভারতের আনন্দবাজার ও দি হিন্দু পত্রিকার প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
নয়াদিল্লীতে ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বক্তৃতায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছে। এই মুহূর্তে সমালোচনার চেয়ে সমর্থন পাওয়াটা তাদের বেশি প্রয়োজন। ভারত বরাবর তাদের পাশে থেকেছে। আন্তর্জাতিক মহলেরও উচিত ঢাকার পাশে দাঁড়ানো।
সম্প্রতি ইসলামিক স্টেটের নাম করে বাংলাদেশে জঙ্গীদের হামলার উল্লেখ করে ড. জয়শঙ্কর বলেন, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদকে রক্ষা করা না গেলে সেখানে জঙ্গীপনা আরও বাড়বে। জয়শঙ্কর বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপ সমর্থনযোগ্য, বিরোধিতা করার প্রশ্নই নেই। বিশ্বেরও উচিত তার পাশে দাঁড়ানো।
জয়শঙ্কর বলেন, সন্ত্রাসবাদ কোন একটি দেশের সমস্যা নয়। যারা হাত গুটিয়ে থাকবেন তাদের জানা উচিতÑ সন্ত্রাস তাদের দেশেও পৌঁছতে সময় লাগবে না। চীনকে খোঁচা দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বেজিংয়ের সঙ্গে দিল্লীর সম্পর্ক বহুমাত্রিক। বহু বিষয়ে দু’দেশ সহমত। কিন্তু অন্য দেশের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় চীনের বাধা দেয়া উচিত নয়। সম্প্রতি মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার প্রশ্নে ভারতের উদ্যোগে চীন বাধা দিয়েছে। জয়শঙ্কর সেই প্রসঙ্গটিরই উল্লেখ করেছেন।
কাশ্মীরে সাম্প্রতিক অশান্তি ও পাঠানকোটের হামলায় পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়েও বিভিন্ন মন্তব্য করেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, এটা শুধু ভারতের সমস্যা নয়। বিশ্বের বড় শক্তিগুলো বিষয়টা না বুঝলে সন্ত্রাসের আগুনে তাদেরও পুড়তে হবে। ভাল সন্ত্রাস ও খারাপ সন্ত্রাস বলে কিছু হয় না।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের মন্তব্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব পাবলিক এ্যাফেয়ার্স অব সাউথ এবং সেন্ট্রাল এশিয়া এ্যাঞ্জেলা এ্যাগিলার বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আমরাও ড. জয়শঙ্করের সঙ্গে সহমত। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি কয়েক দিন আগেই ঢাকা সফরে গিয়ে হাসিনা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, সন্ত্রাসের একটিও ভাল দিক নেই। সেটা সব সময়েই খারাপ। তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসন যেভাবে জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাশেম আলির ফাঁসি দিয়েছে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্ন রয়েছে বলেও তিনি জানান। এ্যাঞ্জেলা বলেন, বিচার প্রক্রিয়া সব সময় স্বাধীন এবং স্বচ্ছ হওয়া দরকার বলেও তারা মনে করেন।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. জয়শঙ্কর যে সময় বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঠিক তখনই বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সমর্থনের কথাও জানায় ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে ভারত। এর আগে মে মাসে জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদ-ের সময়ও বিচার প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানিয়েছিল ভারত।
