ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্ধকোটি শিক্ষার্থীর সরকারী স্বীকৃতি অনিশ্চিত

জামায়াতী চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান কওমী আলেম সমাজের

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জামায়াতী চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান কওমী আলেম সমাজের

বিভাষ বাড়ৈ ॥ জামায়াতী মদদপুষ্ট কিছু উগ্রবাদী নেতার কারণে কওমী মাদ্রাসার প্রায় অর্ধকোটি শিক্ষার্থীর সরকারী স্বীকৃতি অনিশ্চিত হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে এবার স্বীকৃতির দাবি নিয়ে নতুন করে মাঠে নেমেছে কওমী আলেম সমাজ। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে জামায়াতপন্থীদের চক্রান্ত বন্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছেন কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ ইসলামী চিন্তাবিদরা। ‘এগিয়ে এলেই কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেব’- প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে সরকারী স্বীকৃতির দাবি নিয়ে তারা মাঠে নেমেছেন। এদিকে হেফাজতের একটি বড় অংশও এখন সনদের পক্ষে। স্বীকৃতি পেলে সরকারী-বেসরকারী চাকরির সুযোগ নিশ্চিত হওয়া ছাড়াও আর্থিকভাবেও তারা স্বাবলম্বী হয়ে দাঁড়াতে পারবে বলেও আশা করছেন কওমী আলেমরা। জানা গেছে, বিতর্কিত কয়েক হেফাজত নেতার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির কবলে পড়েই মূলত কপাল পুড়েছিল দেশের কওমী মাদ্রাসার প্রায় ৫০ লাখ সাধারণ শিক্ষার্থীর। বছরের পর বছর ধরে তারা আশার আলো দেখলেও ওই বিতর্কিত ব্যক্তিদের হুমকিতেই দেশের প্রায় ২৫ হাজার কওমী মাদ্রাসা ও এর শিক্ষার্থীদের সনদের সরকারী স্বীকৃতির উদ্যোগ বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে এসে ২০১৪ সালে বন্ধ রাখে সরকার। জামায়াত মদদপুষ্ট হেফাজত নেতাদের কারণে কওমী শিক্ষার্থীর ক্ষতি হচ্ছে অভিযোগ এনে এবার আলেম সমাজ বলছে, স্বীকৃতি নিয়ে কেউ রাজনীতি করলে তাদের ছাড়াই স্বীকৃতি চাই। কিছু ধর্ম ব্যবসায়ীর সনদের বিরোধিতা ও হুমকিতে সরকার পিছু হঠায় অবশ্য হতাশা প্রকাশ করে তারা বলছেন, এই স্বীকৃতি দিলে সরকারের ইমেজ অর্ধকোটি কওমী শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের কাছে উজ্জ্বল হবে। হেফাজতের একটি অংশের ভয়ে সরকার চুপ হয়ে বসে থাকলে লাভ হবে জামায়াত-শিবিরের। কওমী আলেমরা ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে রক্ষায় অবিলম্বে শিক্ষা সনদের সরকারী স্বীকৃতি দানের আহবান জানিয়েছেন। নিজেদের স্বার্থে কিছু ধর্মব্যবসায়ী সনদের বিরোধিতা করছে- এমন অভিযোগ এনে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ব্যবসা ও রাজনীতি রক্ষা করতে এরা স্বীকৃতির বিরোধিতা করছে। কওমী মাদ্রাসার উন্নয়ন সাধারণ মানুষ চাইলেও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হেফাজত নেতারা চান না লাখ লাখ শিক্ষার্থী লাভবান হোক, চাকরি কিংবা অন্য কোন সুবিধা পাক। এর আগে গত মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দাবি অনুসারে কওমী মাদ্রাসার সনদের জন্য কাজ শুরু করেছিল। আলেম-ওলামাদের নিয়ে গঠন করা হয় কমিশন। এমনকি সেখানে মূল দায়িত্বই পালন করেন হেফাজতের আমির আহমদ শফী। অথচ এখন শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হলেও বিএনপি-জামায়াত জোটের রাজনীতি করতে গিয়ে হেফাজত নেতাদের একটি অংশ স্বীকৃতির বিরোধিতা করছেন। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় থেকেই কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের সনদের স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছিল। চারদলীয় জোট ওই সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে বহুবার ইসলামী দল ও সংগঠনের নেতারা সনদের স্বীকৃতিদানের দাবি জানিয়েও সাড়া পাননি। ওই নেতারা এখন প্রায় প্রত্যেকেই হেফাজতের ব্যানারে রাজনীতি করছেন। অথচ ২০০৬ সালে ইসলামী ঐক্যজোটের ব্যানারে এখনকার হেফাজত নেতারাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে সনদের স্বীকৃতি দাবি করেছিলেন। ওই দিন ঘোষণা দেয়া হয়, কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি ঘোষণা করবে সরকার। কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের (ইসলামী শিক্ষা/আরবী সাহিত্য) সমমান দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ে আলেমদের ডেকে এনে এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার ফাজিলকে ডিগ্রী এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমানের করারও আশ্বাস দেন। তবে খালেদা জিয়ার ঘোষণা আর বাস্তবায়ন হয়নি। ওই ঘটনায় ইসলামী ওই নেতারা চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনেরও ঘোষণা করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলেই সেই নেতারা স্বীকৃতির দাবি তোলেন। ইতিবাচক সাড়া দিয়ে সরকার কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামীর আমির শাহ আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে ১৭ সদস্যের কমিশন গঠন করে। কমিশনের কো-চেয়ারম্যান হন শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। সদস্যসচিব করা হয় গোপালগঞ্জের গওহরডাঙা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রূহুল আমীনকে। জানা গেছে, এ ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক স্থানে। সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও সরকারী-বেসরকারী গবেষণা সংস্থা বলছে, এই মুহূর্তে দেশে অন্তত ২৫ হাজার কওমী মাদ্রাসা চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। যেখানে গড়ে ২০০ ছাত্র আছে। তবে নিজেদের বিতর্কিত কর্মকা- বাধাহীন রাখতেই হেফাজতের কিছু নেতা নিজেদের মতো এগুলো চালাতে চায়। শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলনরত আলেম-ওলামারা বলছেন, রাজনীতি আর ব্যবসার অংশ হিসেবেই হেফাজত নেতাদের একটির অংশ স্বীকৃতির বিরোধিতা করেছেন লাখ লাখ শিক্ষার্থীর স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে। হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ‘কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা আইন-২০১৩ পাস হলে দেশে লাখ লাখ লাশ পড়বে’ বলে হুঁশিয়ারিও দেন। একই সুরে কওমী মাদ্রাসা বোর্ড নেতা আবদুল জব্বার ‘লাশ পড়বে’ বলে হুঁশিয়ারি দেন। কেবল তাই নয়, একই দাবি নিয়ে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশেরও ডাক দিয়েছিল হেফাজত। এই অবস্থায় উদ্যোগ প্রায় চূড়ান্ত করেও অরাজকতা এড়াতে সনদের স্বীকৃতি স্থগিত করেছিল সরকার। কিন্তু সরকারের সঙ্গে স্বীকৃতি নিয়ে কোন আলোচনা না করে হেফাজত ও বেফাকের অনীহায় হতাশা প্রকাশ করছেন কওমী আলেমরা। আইনের সর্বশেষ খসড়া দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার আলেমদের কাছে তুলে ধরে স্বীকৃতির দাবি নিয়ে এখন এক হচ্ছেন তারা। ইতোমধ্যে সারাদেশে সনদের পক্ষে স্বীকৃতির জন্য প্রচারাভিযান শেষ হয়েছে। স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বীকৃতি দিলে আপত্তি নেই-এই সেøাগান নিয়ে হেফাজতের একটি অংশও মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। এদিকে স্বীকৃতির পক্ষে সংঘবদ্ধ হওয়ার মধ্যেই গত ১১ আগস্ট ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাঁর গ্র্যান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের তত্ত্বাবধানে সংগৃহীত একলাখ মুফতি, উলামা ও আইম্মার দস্তখত সংবলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী মানব কল্যাণে শান্তির ফতোয়ার কপি প্রধানমন্ত্রীর হাতে অর্পণ করা হয় এক সম্মেলনের মাধ্যমে। এ উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত উলামা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে এলেই কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলেন। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেয়ার জন্যই আমরা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলাম। কওমী মাদ্রাসা সনদ দেয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সনদ দিতে হলে ন্যূনতম একটা কারিকুলাম দরকার। আমরা কওমী মাদ্রাসা কমিশন গঠন করে দিয়েছি। কিন্তু কওমী মাদ্রাসার পাঁচটি বোর্ড একমত হতে পারেনি। সবাই একমত হোন অথবা যারা আগ্রহী তারা একমত হোন, আমরা বাস্তবায়ন শুরু করে দেব। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর রীতিমতো জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে কওমী মাদ্রাসাগুলোতে। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে সরকারী স্বীকৃতির দাবি নিয়ে তারা মাঠে নেমেছেন। স্বীকৃতির আশ^াস দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১১১ প্রখ্যাত আলেম। ১১১ আলেমের স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে জামিআ ইকরা বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমী শিক্ষার্থীদের সনদের স্বীকৃতির আশ^াস দেয়ায় আমরা আনন্দিত। দেশের লাখ লাখ কওমী শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছে। বিশিষ্ট আলেমরা বলেছেন, কওমী সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা যেন আর বিলম্ব না হয়। অবিলম্বে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়ে এ দেশের আলেম-ওলামার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে আসবেন। কিছুতেই পিছপা না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাওলানা মারুফ বলেন, কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি প্রদান করলে দেশের শিক্ষার হার যেমন বাড়বে তেমনি কওমী অঙ্গন মেধাবী তারুণ্যের সম্পৃক্ততায় উপকৃত হবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী আলেমদের মধ্যে আছেন মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফ, মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন, মাওলানা হুসাইনুল বান্না, মাওলানা আবদুর রহীম কাসেমী, মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, মাওলানা মুহাম্মদ শোয়াইব, মাওলানা মাসউদুল কাদির, মাওলানা আবদুল আলীম ফরিদী, মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান, মুফতি সাইফুল ইসলাম, মুফতি মোহাম্মদ উল্লাহ, মুফতি রিয়াজুল ইসলাম, মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ, মাওলানা শফিকুল। কাদা ছোড়াছুড়ি না করে কওমী সনদের স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। তিনি বলেছেন, কওমী মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি এ দেশের ছাত্রছাত্রীদের মানসম্মান ও অধিকার। তাদের অধিকার নিয়ে আমরা টানাটানি করতে পারি না। দেশের প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞ আলেমদের উচিত সনদের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টায় অংশিদার হওয়া। কওমী শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্রতি সযতœ আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে আল্লামা মাসউদ বলেন, কওমী স্বকিয়তা বজায় রেখেই আমরা স্বীকৃতি পেতে চাই। দারুল উলূম দেওবন্দের চিন্তাধারা ও কারিকুলামের মাধ্যমেই সনদের স্বীকৃতি এলে এদেশের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির জন্য আন্দোলরত সংগঠন দাওয়াতে ইসলাম অভিযোগ করেছে, কিছু ধর্মব্যবসায়ী সনদের বিরোধিতা করছে। এরা শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতো নিয়ন্ত্রণে রেখে ব্যবসা করতে চায়। সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা জহিরুল ইসলাম (মুস্তাকিম হুজুর) বলেছেন, সরকার যখন কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দিতে সব ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তখন কতিপয় আলেম নামধারী মুরব্বি বিরোধিতা করছেন। এতে কওমী শিক্ষা সনদের সরকারী স্বীকৃতি বাস্তবায়ন বাধার মুখে পড়েছে। কিছু মুরব্বি আলেম কওমী শিক্ষাকে নিয়ে ব্যবসা করছেন অভিযোগ করে দাওয়াতে ইসলাম বলেছে, মুরব্বি সেজে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছ থেকে যাকাত, ফিতরা, কোরবানির পশুর চামড়া ও দান-দক্ষিণা নিয়ে বড় বড় মাদ্রাসা করেছেন। এইসব দীনি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। মুরব্বি নামধারী এসব আলেম টাকা-পয়সা নিয়ে তাদের জীবনের উন্নতি সাধনে ব্যস্ত। গাজীপুরের তানযিমুল মাদারিসিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা চাই আমাদের ছাত্ররা সসম্মানে দেশের অন্য শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকুক। প্রায়ই কওমী মাদ্রাসাকে জঙ্গী উৎপাদন কেন্দ্র বলা হয়, আশা করছি সরকারের স্বীকৃতি পেলে এ অপবাদ থেকেও মুক্তি মিলবে। কেউ যদি কারও ক্ষমতা হ্রাস কিংবা রাজনৈতিক কারণে বিরোধিতা করেন তাতে সাধারণ আলেমদের সমর্থন নেই। আমরা মাদ্রাসার ছাত্রদের রাজনৈতিক বলি হতে দিতে পারি না। কেউ তাদের নিয়ে রাজনীতি করুক তাও আমরা চাই না। এদিকে স্বীকৃতির দাবি বাস্তবায়নে গঠন করা হয়েছে কওমী শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ। যার আহ্বায়ক আবুল কাসেম ও সদস্য সচিব ইয়াহইয়া মাহমুদ। ঘোষণা করা হয়েছে মজলিসে আমেলা ও শূরার দুটি কমিটি। সম্প্রতি রাজধানীর খিলগাঁও ইকরা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক উলামা বৈঠকীতে এই সংগঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। শিঘ্রই কওমী সনদের স্বীকৃতি আসছে- এই চিন্তা থেকেই এই পরিষদ গঠন করা হয়েছে। কওমী স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি জেলায় আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে পরিষদ নেতারা বলেন, আমরা শিক্ষাসনদের মান নিতে চাই। শতভাগ স্বকিয়তা বজায় রেখেই সনদের স্বীকৃতি চাই। এ স্বীকৃতির বিরুদ্ধে কথা বলা মানে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। কওমী মদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির আশ^াস দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ময়মনসিংহের জামিয়া আশরাফিয়ার ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ। প্রিন্সিপাল মুফতি তাজুল ইসলাম কাসেমী বলেন, দেশের সব প্রতিষ্ঠানেরই স্বীকৃতি আছে, আছে সনদের মূল্য, শুধু অবহেলিত এই কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমী সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের যে আশ^াস দিয়েছেন তাতে সমগ্র ময়মনসিংহবাসী আনন্দিত। আমরা দ্রুত এর বাস্তবায়ন চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি তুলেছেন খুলনা খালিসপুর আশরাফুল উলূম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি আবুল কাসেম। তিনি বলেন, স্বীকৃতি দিলে আর কোন অমত থাকবে না। স্বীকৃতি বিষয়ে সবাই একমত। এক-দু’জনের হুমকিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মশাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভয় পেলে চলবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়ে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সংগঠন জাতীয় শিক্ষার্থী পরিষদের আহ্বায়ক মাওলানা নাইমুল ইসলাম ও সদস্যসচিব আরিফ বিল্লাহ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সনদের স্বীকৃতি পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন লাখ লাখ শিক্ষার্থী।
×