ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ সচেতনতায় ননফিকশনধর্মী অনুষ্ঠান বেশি হওয়া উচিত ॥ আনজাম মাসুদ

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সমাজ সচেতনতায় ননফিকশনধর্মী অনুষ্ঠান বেশি হওয়া উচিত ॥ আনজাম মাসুদ

আনজাম মাসুদ। নন্দিত অনুষ্ঠান নির্মাতা ও জনপ্রিয় উপস্থাপক। গত ২০ বছর ধরে বিটিভিসহ একাধিক চ্যানেলের জন্য ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর নির্মিত অসংখ্য বিজ্ঞাপন জনপ্রিয় হয়েছে। গুণী এই নির্মাতা সম্প্রতি বিটিভির ‘পরিবর্তন’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত আছেন। ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ‘পরিবর্তন’ এর বিশেষ পর্ব অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। আপনার ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নির্মাণের শুরুর দিকটা জানতে চাই আনজাম মাসুদ : ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন মঞ্চ নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। বেইলী রোডের ‘চন্দ্রবিন্দু’ নামের একটি নাট্যদলে বেশ কিছুদিন কাজ করেছি। এরপর ১৯৯৬ সালের দিকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘বিদ্যাঙ্গন’ নামে বিটিভির নিজস্ব একটি অনুষ্ঠান করি। অনুষ্ঠানে বিনোদনমূলক বিষয় থাকায় দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। ওই অনুষ্ঠানের প্রযোজক আমাকে বলেন, আপনি তো বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ভাল করবেন। তো ওই বছরের শেষ দিকে শুরু করলাম ‘আজকাল’। সেই থেকে নিয়মিত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নির্মাণের ধারাবাহিকতায় এখন ‘পরিবর্তন’ করছি। এবারের ঈদের ‘পরিবর্তন’ এর বিশেষত্ব কি? আনজাম মাসুদ : ‘পরিবর্তন’ একটি গতানুগতি অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের কিছু অসঙ্গতি, অনৈতিক বিষয় আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করি। যেহেতু ঈদের পর্ব তাই বাড়তি কিছু আয়োজনের মাধ্যমে দর্শকদের সমাজের অসঙ্গতিগুলো দেখানো হয়েছে। আশা করি মেসেজের পাশাপাশি ‘পরিবর্তন’ এ দর্শকরা পরিপূর্ণ বিনোদন পাবেন। প্রায় দুই যুগ ধরে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান নির্মাণ করছেন দর্শকদের সারা কেমন? আনজাম মাসুদ : এই সময়ে প্রতি মাসে একটা করে অনুষ্ঠান করে দর্শককে আকৃষ্ট করা খুব কঠিন। কারণ দেশে এতগুলো চ্যানেলে এত অনুষ্ঠান দর্শক কি আসলেই দেখে কিনা এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দর্শকরা টিভির চেয়ে ইউটিউব বা ফেসবুকে বেশি দেখে। স্বল্প বাজেটেও অনুষ্ঠানের মানের বিষয়ে কোন কমপ্রোমাইজ করছি না। তবে এও সত্য এত তাড়াতাড়ি দর্শকের রেসপন্স পাওয়া যাবে না। সময় লাগবে। কারণ উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে, রিমোর্টের যুগে কোন চ্যানেলেরই কোন অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট কোন দর্শক নেই। আমাদের দেশের চ্যানেলের অনুষ্ঠানের দর্শক কমে যাওয়ার কারণে প্রচার রেটও কিন্তু কমে গেছে। এর কারণ কি চ্যানেলগুলো বেড়ে যাওয়া? আনজাম মাসুদ : হ্যাঁ এটা একটাও কারণ। এক সময় একটা কোম্পানির বিজ্ঞাপনের জন্য ১০ লাখ টাকা বাজেট ছিল। তাদের বাজেট বাড়েনি। চ্যানেল বেড়েছে। তাই ওই ১০ লাখ টাকা চ্যানেলগুলোর মধ্যে ভাগ হয়েছে। আর বাজেট কমে গেলে তো প্রোডাকশন ব্যয় কম হবে। কোয়ালিটিও সেই রকমই হবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে এটাও ঠিক আমাদের দেশের চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্য খুব কম। বেশিরভাগ সময়ই ঘুরে ফিরে ওই একই ধরনের অনুষ্ঠান হচ্ছে কোন নতুনত্ব নেই। এ অবস্থায় দর্শকদের করণীয় কি? আনজাম মাসুদ : দর্শকদেরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেবে, চ্যানেলগুলোকে ধ্বংস করে দেবে? আমাদের দেশে যাই হোক দেশের স্বার্থে দেশের সংস্কৃতির স্বার্থে দেশের চ্যানেলের অনুষ্ঠান তাদের দেখা উচিত। কারণ দেশের চ্যানেলের যে দর্শক সঙ্কট চলছে বা বলা হচ্ছে ভাল অনুষ্ঠান হচ্ছে না। এসবের কিছুই পরিবর্তন হবে না যদি না আমরা পরিবর্তন হই। নিজেরা সংশোধন হই। দর্শকদের এক ঘেয়েমি দূর করতে ননফিকশনধর্মী প্রোগ্রামগুলো আরও বেশি হওয়া উচিত। আপনি তো বিজ্ঞাপনও নির্মাণ করেছেন? আনজাম মাসুদ : হ্যাঁ। আমি এ পর্যন্ত শতাধিক বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে ‘আপন জুয়েলার্স’, ‘লিজান হারবাল’, ‘বোটানিক এ্যারোমা’ প্রভৃতি। সুযোগ হলে আরও নির্মাণ করতে চাই। তবে এই মুহূর্তে ‘পরিবর্তন’ নিয়েই আছি। এছাড়া তো প্রায় একই ধরনের আরও বেশকিছু অনুষ্ঠান করেছেন? আনজাম মাসুদ : হ্যাঁ এরপর এটিএন বাংলায় ‘এক দুই তিন, ‘আজকাল পরশু’, এরপর বিটিভির জন্য ‘আনন্দমেলা’ করেছি। ‘আনন্দমেলা’ অনুষ্ঠানের টানা ৬ পর্ব করেছি। আজ পর্যন্ত কেউ ‘আনন্দমেলা’র টানা ৬ পর্ব করেনি। এখন করছি ‘পরিবর্তন’। তবে আমি মনে করি সমাজ সচেনতনায় ‘ইত্যাদি’, ‘পরিবর্তন’, ‘শুভেচ্ছা’, ‘আজকাল’, ‘আজকাল পরশু’, ‘স্মাইল শো’ এ ধরনের ননফিকশনধর্মী অনুষ্ঠানগুলো বেশি বেশি হওয়া উচিত। বিভিন্ন চ্যানেল বা এফএম রেডিও বাড়ায় উপস্থাপনার বিষয়টি সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে আগ্রহীদের আপনার পরামর্শ কী? আনজাম মাসুদ : প্রথমে লোভ সংবরণ করতে হবে। একটা দুটো অনুষ্ঠান করে পরিচিতি পাওয়া, জনপ্রিয়তা বা তথাকথিত স্টার ইমেজের লোভ সামলাতে হবে। ভাল কিছুর জন্য অনুশীলন করতে হবে। জেনে বুঝে করতে হবে। মঞ্চে বা ক্যামেরার সামনে কিছু বলার আগে সেটা লিখে নিতে হবে। তার পর সেটার নিজস্ব ঢংয়ে মনের মাধুরী দিয়ে প্রকাশভঙ্গির চমৎকারিত্ব প্রদর্শন করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত কিছুই কিন্তু দর্শকরা নেয় না। সুতরাং সুন্দর কিছুর জন্য সাধনা, একাগ্রতা এবং চর্চার কোন বিকল্প নেই। দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ারে আপনার প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি কী? আনজাম মাসুদ : প্রাপ্তি দর্শকদের ভালবাসা। এই অনুষ্ঠানগুলোর জন্যই দর্শকরা, সাধারণ মানুষ আমাকে চেনেন। দেশ বিদেশের মানুষের ভালবাসা পাই। দেখা হলে কুশল জিজ্ঞেস করেন। তবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে আমার অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে নতুনদের সুযোগ দেই। তারা এখান থেকে শুরু করে সংস্কৃতি অঙ্গনে বিচরণ করে। আমি নতুনদের নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি, রিস্ক নিতে পছন্দ করি। নতুনদের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে শিল্পী তৈরির চেষ্টা করি যারা অন্যদের সঙ্গে কাজ করে। এটাই আমার বড় প্রাপ্তি বলে মনে করি। আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? আনজাম মাসুদ : আমি আসলে এটাই করতে চাই। অনেক কিছু করতে গেলে আসলে কিছুই করা হয় না। তাই আমি ম্যাগাজিন নিয়ে আছি এটা নিয়ে থাকতে চাই। নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই এটা করছি ভবিষ্যতেও করে যেতে চাই। -সাজু আহমেদ
×