ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সোমবার সন্ধ্যার পর লড়াই বন্ধ হবে ॥ আইএসবিরোধী অভিযানে যাবে দু’পরাশক্তি

সিরিয়া প্রশ্নে রুশ-মার্কিন মতৈক্য

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সিরিয়া প্রশ্নে রুশ-মার্কিন মতৈক্য

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় সহিংসতা বন্ধ করার লক্ষ্যে শনিবার এক নতুন পরিকল্পনা নিয়ে একমত হয়েছে। এ পরিকল্পনা সফল হলে দু’পরাশক্তি সিরিয়ায় ইসলামী জিহাদীদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো যৌথ সামরিক অভিযান চালাতে পারে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসির। ঐ যৌথ পরিকল্পনার আওতায় সোমবার সূর্যাস্তের পর সিরিয়ায় লড়াই বন্ধ করা হবে। সিরীয় সরকার বিরোধী পক্ষের অধিকৃত সুনির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে সামরিক অভিযান বন্ধ করবে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ইসলামিক স্টেট ও আলনুসরা জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে এক যৌথ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও তার রুশ প্রতিপক্ষ সের্গেই লাভরভের মধ্যে আলোচনার পর ঐ ঘোষণা দেয়া হয়। জেনেভায় কেরি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী সিরীয় শাসকগোষ্ঠী ও বিরোধী পক্ষ উভয়েই তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ করবে। বিরোধী পক্ষ পরিকল্পনা মেনে চলবে বলে ইতোপূর্বে আভাস দিয়েছিল। তবে সিরীয় সরকারকেও আন্তরিকতা দেখাতে হবে। কেরি একথা জানান। লাভরভ জানান, রাশিয়া এ বন্দোবস্ত সম্পর্কে সিরীয় সরকারকে অবহিত করেছে এবং সিরীয় সরকার এটি মেনে চলতে রাজি। চুক্তিতে দুর্গত এলাকায় মানবিক ত্রাণসামগ্রী পৌঁছতে দেয়ারও বিধান রয়েছে। কেরি বলেন, সহিংসতা বন্ধের স্বার্থে আলেপ্পোসহ সব অবরুদ্ধ ও দুর্গম এলাকাতে ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর সুযোগ দিতে হবে। যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার সাতদিন পর রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ইসলামিক স্টেট দল এবং আল কায়েদা সম্পৃক্ত নুসরা জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে এক যৌথ বাস্তবায়ন কেন্দ্র স্থাপন করবে। লাভরভ বলেন, যৌথ বাস্তবায়ন কেন্দ্র রুশ ও মার্কিন বাহিনীকে মধ্যপন্থী বিরোধী পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের আলাদা করতে দেবে। তিনি জানান, রুশ ও মার্কিন বিমান বাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান চালাবে এবং কোন কোন এলাকায় সিরিয়ার বিমান বাহিনী হামলা চালাবে না। তিনি বলেন, কোন্ কোন্ এলাকায় এরূপ সমন্বিত হামলা চালানো হবে, সেই সম্পর্কে আমরা মতৈক্যে পৌঁছেছি এবং সে সব এলাকায় কেবল রুশ ও বিমান বাহিনীই কাজ করবে। কিন্তু লাভরভ আরও বলেন, রুশ-মার্কিন সামরিক অভিযানের জন্য চিহ্নিত এলাকাগুলোর বাইরে অন্যান্য এলাকায় সিরীয় বিমান বাহিনী তৎপরও থাকবে। চুক্তিটি অনেকাংশে বিরোধী দলগুলোকে তাদের আরও চরমপন্থী মিত্রদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে আনতে আমেরিকার সামর্থ্য এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনীকে সংযত রাখতে রাশিয়ার সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে। লাভরভ বলেন, দামেস্ক এর বাধ্যবাধকতা পালন করবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু এটি এক জটিল পরিকল্পনা এবং সব পক্ষের সম্মত বাধ্যবাধকতা পালনের ওপর নির্ভর করে। জেনেভায় স্বাক্ষরিত সব চুক্তিই সব সময়ই বাস্তবায়িত হয়, এমন নয়। লাভরভ ও কেরি জোর দিয়ে বলেন, পরিকল্পনাটি এক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথ সুগম করতে পারে। কেরি বলেন, পরিকল্পনাটি অদ্যাবধি পেশ করা যে কোন প্রস্তাবের চেয়ে আরও নির্দেশনামূলক ও সুদূরপ্রসারী। যদি সর্বপক্ষ এটি বাস্তবায়ন করে, তা হলে সিরিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের দূত স্তাফান দ্য মিসতুরা চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, জাতিসংঘ ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে সব চেষ্টা চালিয়ে যাবে। পূর্ব আলেপ্পোতে সম্প্রতি সিরীয় সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াই তীব্র রূপ নেয়। সেখানে আড়াই লাখ লোকের বাস। রবিবার সিরিয়ার সরকারী বাহিনী আলেপ্পোর কিছু কিছু অংশ পুনরায় দখল করে নেয় বলে জানা যায়। এতে শহরের পূর্বদিকে কোন কোন বিদ্রোহী অধিকৃত এলাকা আবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গত মাসে এসব অংশ বিদ্রোহীরা দখল করেছিল। ২০১১ সালে সূচিত সিরীয় সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোকে সমর্থন করে। ওয়াশিংটনের ভাষায়, মধ্যপন্থী এমন বিদ্রোহী দলগুলোর এক কোয়ালিশনকে সমর্থন করে। আর মস্কোকে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রধান মিত্র হিসেবে দেখা হয়।
×