ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইন ভোটিংয়েও মস্ত সমস্যা আছে

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অনলাইন ভোটিংয়েও মস্ত সমস্যা আছে

নির্বাচন এখনও অনেক ক্ষেত্রে এক মস্ত ঝক্কি ঝামেলার ব্যাপার। লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোটাররা অনেক সময় হাঁপিয়ে ওঠে আর ভাবে ভোট দেয়ার যদি সহজতর কোন উপায় থাকত। অনেকে বলে সে উপায় তো এখন রয়েছে আর সেটা হলো অনলাইন ভোটিং। ল্যাপটপ অথচ স্মার্টফোন ব্যবহার করেই যদি যে কোন জায়গা থেকে ভোট দেয়া যায় তাহলে আর কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজনটা কোথায়? এটা ঠিক যে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে অনলাইন ভোটিং ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারনেট ভোটিংয়ের সবচেয়ে ব্যাপক সুযোগ আছে আলাস্কায়। সেখানে যে কোন ভোটার ডিজিটাল এবসেন্টি ব্যালটের জন্য অনুরোধ জানাতে এবং তা অনলাইনে জমা দিতে পারে। এ বছর ইউটাহয় রিপাবলিকান ককাস অনলাইন ভোটিংয়ের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে দেখা দেয় বিপত্তি। এর মেসেজ আসে এবং এমন পেজ আসে সেগুলো লোড হয় না। বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে অনলাইন ভোটিংয়ে যে খরচ হয় সে তুলনায় সুবিধাটা বেশি পাওয়া যায় না। অনলাইন ভোটিং বাস্তবেই বেশ সুবিধাজনক হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে যে ব্যবস্থা আছে তাতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হতে পারে। আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবই হয় সাংবিধানিক নয়ত আইনগত বিধান আছে যেখানে ভোটারদের গোপন ব্যালটের অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তিতে ইন্টারনেট ভোটিংয়ের যে ব্যবস্থা এখন রয়েছে তাতে ভোটারদের পরিচিতি তাদের ভোট থেকে পৃথক করা মূলত অসম্ভব বলে এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যে ২৮টি অঙ্গরাজ্যে ইন্টারনেট ভোটিংয়ের সুযোগ আছে সেখানে নাগরিকদের গোপন ব্যালটের অধিকার ছেড়ে দিতে হয়। তবে অনেকেই এ কথা স্বীকার করতে ব্যর্থ হয় যে অনলাইন ভোটিংয়ে ভোটারদের ভোটের গোপনীয়তা বিসর্জন দেয়া হয়। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, অনলাইনে ভোট দেয়া মানে গোপন ব্যালটের অধিকার বিসর্জন দেয়া এবং নির্বাচনকে আরও বেশি জালিয়াতির দিকে ঠেলে দেয়া। নিরাপত্তা গবেষকরাও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে অনলাইন ভোটিং বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এটা হ্যাকারদের হাতে গিয়ে পড়তে পারে। তখন তারা ডিজিটালি নির্বাচন হাইজ্যাক করতে পারে। ইন্টারনেট ইতোমধ্যে এক এলোমেলো অবস্থায় পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে নির্বাচনের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যোগ করা হলে ঝামেলা বাড়ে বৈ কমে না। ইন্টারনেট ভোটিং ই-মেইল, ইলেকট্রনিক ফ্যাক্স বা অনলাইন পোটাল এই তিনটির যে কোনভাবে হতে পারে। ৩২টি রাজ্য ও জেলায় এই সুযোগ আছে। তবে সবার জন্য নয়। এ সুযোগ সামরিক বাহিনীর সদস্য ও প্রবাসী ভোটারদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। এক্ষেত্রে ভোটিং বুথের প্রাইভাসি না থাকায় নির্বাচনে জালিয়াতির সুযোগ থাকে। কারণ ভোটারদের জবরদস্তির আশ্রয় নিয়ে নয়ত ঘুষ দিয়ে কোন না কোন প্রার্থীকে ভোট দিতে অধিক সহজে বাধ্য করা যায়। ১৮০০ এর দশকে গোপন ব্যালট চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচনে এটাই ছিল প্রধান ধারা। এখন একই ধরনের জালিয়াতি হতে পারে ই-মেইলের মতো রিমোট ভোটিংয়ে। আবার অনেকের যুক্তি হলো ভোটকেন্দ্রে যাওয়া যাদের পক্ষে শারীরিক দিক দিয়ে অসুবিধাজনক তাদের জন্য অনলাইন ভোটিং ভাল। কারণ এদের জন্য আগে থেকেই ডাকযোগে ভোটের যে ব্যবস্থা আছে তাতে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ভোটাধিকার বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ থাকে। কারণ এই ব্যালট হারিয়ে যেতে কিংবা এত বিলম্বে পৌঁছাতে পারে যে এখন আর গণনার সুযোগ থাকে না। তথাপি অনলাইনে ভোটিংয়ের ব্যাপারটা এখনও অতি বাস্তব। ২০১৪ সালে স্মার্টম্যাটিক এস্তোনিয়ায় অনলাইন ভোটিং নিয়ে কাজ করেছে। বিশ্বে অনলাইন ভোটিংয়ের এটিই সবচেয়ে বড় হাই প্রোফাইল দৃষ্টান্ত। পূর্ব ইউরোপীয় এই দেশটিতে অনলাইন ভোটিংয়ের সুযোগ দেয়া শুরু হয় ২০০৫ সালে। এখন দেশের এক-তৃতীয়াংশ ভোটার এভাবেই ভোট দিচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন সে এস্তোনিয়ার অনলাইনে ভাটিং হ্যাকিং হওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৩ সালের নির্বাচনের মূল্যায়ন করে তারা অনলাইন ভোটিংয়ের ক্ষেত্র এমন কিছু ইস্যু পেয়েছেন যে অনলাইন ভোটিং বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশ করেছেন। তারা বলেন, অনলাইন ভোটিংয়ের যে অংশটুকু সরকারের নিয়ন্ত্রণে সেটা নিরাপদ থাকলেও নাগরিক ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও স্মার্টফোন ম্যালওয়্যার দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে যার মাধ্যমে তাদের ভোট হাইজ্যাক হয়ে যেতে পারে। অনুবাদ ॥ এনামুল হক
×