ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দাম নাগালে, বাজারে ‘ইলিশ উৎসব’

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দাম নাগালে, বাজারে  ‘ইলিশ উৎসব’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বাজারগুলোতে যেন ‘ইলিশ উৎসব’ শুরু হয়েছে। মাছের বাজার ঢু’ মারলেই চোখে পড়বে ইলিশ। যেন ইলিশও তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। গত কয়েক দিনে সাগর ও নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে এই জাতীয় মাছটি। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বাজারেও। দামও বছরের অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় কম। আর তাই রসনা বিলাসীদের দৃষ্টি এখন ইলিশের দিকেই। ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। সামনে কোরবানির মাংস সংরক্ষণে খালি করা হচ্ছে ফ্রিজ। তাই দাম কমলেও ইলিশ সেভাবে মজুদ হচ্ছে না নগরবাসীর ফ্রিজগুলোতে। এতে করে স্বাদের এই মাছটি যেন নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছেন তাঁতীবাজারের উমেশ চরণ মজুমদার। তিনি জানালেন, দাম কমায় ইলিশ একটু বেশি করে কেনা হয়েছে। পাতে এখন ইলিশের টুকরা থাকতেই হবে। পরিবারের সবার প্রিয় এই মাছটির দাম কিছুটা কমায় খুশি তিনি। আর তাই বেশি করে কিনে রাখছেন ইলিশ মাছ। তিনি বলেন, ডিম ছাড়ার মৌসুমে এই মাছটি ধরার উপর সরকারী নিষেধাজ্ঞা কঠোর হওয়ার কারণে গত কয়েক বছর ধরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। এখন বাজারে বড় সাইজের ইলিশ দেখা যাচ্ছে, যা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। এছাড়া জাটকা ধরারও উপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সব মিলিয়ে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে হলে সরকারকে এ ব্যাপারে আরও কিছু ভাল সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবেই ভাতে-মাছে বাঙালী ইলিশের স্বাদ নিতে পারবেন। এদিকে, শুক্রবার বাজারে দেখা যায়, এক হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হওয়া ইলিশের দাম নেমে এসেছে ৬০০ টাকার মধ্যে। কাপ্তান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান জানালেন, কিছুদিন আগে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি করেছি ৯০০ টাকায় সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকার মধ্যে। সাগরে এখন ইলিশ ধরা পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এক কেজি বা তার কাছাকাছি ইলিশ বিক্রি করেছি সর্বনিম্ন ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। সেটি এখন বিক্রি করছি ৭০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকার মধ্যে। আর ইলিশের দাম কমায় খুশি ক্রেতারাও। দাম কমায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষও ভিড় করছেন ইলিশের বাজারে। আয় ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করে কিনে নিচ্ছেন এই মাছটি। রিক্সাচালক ইয়াছিন জানালেন, ফুটপাথের ফেরিওয়ালার কাছ থেকে আড়াইশ’ টাকা দিয়ে গতকাল ছোট সাইজের একটি ইলিশ মাছ কেনা হয়েছে। তিনি বলেন, দাম এত বেশি যে, গত দেড় বছর এই মাছটি আর খাওয়া হয়নি। দাম কমায় এবার ইলিশ কেনা সম্ভব হয়েছে। বাজার দর ॥ কোরবানি ঈদ সামনে রেখে শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে মসলার বাজারে বেচা-বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। পেঁয়াজ, রসুন ও আদার চাহিদা ও সরবরাহ দুটোই বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম কমতে থাকায় ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি নেমে এসেছে। তবে চীন থেকে আমদানি করা আদা ও রসুনের দামে নৈরাজ্য চলছে। পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা দামের যৌক্তিক মিল নেই বললেই চলে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। এছাড়া চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আটা ও চিনির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দারুচিনি, এলাচ ও জিরাসহ অন্যান্য মসলার দাম কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। উপকূলে প্রচুর ইলিশ ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট থেকে জানান, বঙ্গোপসাগরসহ সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ পড়ছে জেলেদের জালে। দস্যুদের উপদ্রব তুলনামূলক কম এবং অনুকূল আবহাওয়া ছোট-বড় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে। গত এক মাসের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে কিনতে পারায় ক্রেতারাও আনন্দিত। বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য আড়ত কেবি বাজার চত্বরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মৎস্য ব্যবসায়ীদের আশা এ বছর মৌসুমজুড়ে সাগরে এভাবে ইলিশ ধরা পড়লে গত বছরের ধারদেনা পরিশোধ করে তারা লাভের মুখ দেখতে পারবেন। শুক্রবার জেলার প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দড়াটানা নদীতে ইলিশ নিয়ে নোঙ্গর করে রয়েছে বেশ কিছু ইলিশ বোঝাই ট্রলার। কাক ডাকা ভোর থেকে শরু হয় এ মৎস্য বন্দরের কার্যক্রম। প্রথমে নদীর ঘাটে ভেড়ানো ট্রলার থেকে ঝাকা বোঝাই করে নামানো হয় ইলিশ। সকাল সাড়ে ৬টায় ঘণ্টা বাজিয়ে ইলিশ পাইকারিভাবে বেচাকেনার ডাক শুরু হয়। সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে ইলিশের পাইকারি বেচাকেনা। প্রতিদিনই প্রায় কয়েক টন ইলিশ বিক্রি হয় এ বাজারে। লেনদেন হয় কয়েক কোটি টাকার। ইলিশের দাম কমসহ অধিক মাছ ধরা পড়ায় এ মৌসুমের শুরুতে পাইকারি বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও তাই বেশি।
×