ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আরও এক হাজার মে.ও. তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আরও এক হাজার মে.ও. তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ সঙ্কট সামলাতে তেলই শেষ ভরসা হয়ে উঠেছে বিদ্যুত উৎপাদনে। বেসরকারী খাতে আরও এক হাজার মেগাওয়াট তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রগুলো নির্মাণে জমাপড়া দরপত্রগুলো যাচাই বাছাই চলছে। কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসতে দেরি হওয়াতে নতুন এই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারের পরিকল্পনায় ২০১৫ সালের মধ্যে বড় কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে সরকারের এমন ধারণা ছিল। যদিও তা সম্ভব হয়নি। দেশের প্রথম কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ পায়রাতে শুরু হয়েছে। পায়রা-১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসতে অন্তত তিন বছর সময় প্রয়োজন হবে। এর বাইরে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণ চুক্তি হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ কাজ শুরু হবে। আশা করা যায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি ২০১৯-২০ অর্থবছরে অর্থাৎ তিন বছরের মধ্যে উৎপাদন শুরু করবে। সব কিছু মিলিয়ে কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন শুরুর জন্য আরও তিন থেকে সাড়ে তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। যদিও চায়না এক্সিম ব্যাংক এবং ভারতের এক্সিম ব্যাংক দেশের পায়রা ও রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রে বিনিয়োগ করছে। যা বিদ্যুত কেন্দ্র দুটিকেই নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে সহায়তা করবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এছাড়া বিকল্প নেই। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উৎপাদনে আসেনি। আমরা চুক্তি সই করেছি বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনে আসতে সময় প্রয়োজন হবে। এই সময় আমাদের যাতে কোন সংকটে পড়তে না হয় এজন্য তেলচালিত আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র বেসরকারী খাতে নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিদ্যুত সংকট সামাল দিতে তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। তখন তেলের বাড়তি দামের কারণে কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তী সময়ে সরকার কয়েকটি গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করে। তবে গ্যাসের সংকটের কথা মাথায় রেখে ২০১৪ সাল থেকে সরকার গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। ওই সময় থেকে নতুন করে আর গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে আসে সরকার। সিলেট অঞ্চলে তিনটি বেজলোড বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা থেকে একটিকে বাদ দেয়া হয়। ঢাকার মেঘনাঘাটে দ্বৈত জ্বালানির একটি বড় বিদ্যুত কেন্দ্রেও গ্যাস সরবরাহ করতে পারেনি। বিদ্যুত কেন্দ্রটি জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করছে। নতুন যে ১০টি তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলো দেশের ১০টি এলাকায় নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে ঢাকার নারায়ণগঞ্জে একটি বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। বাকি সব কেন্দ্রই ঢাকার বাইরে নির্মাণ করা হবে। নয়টি কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে চাঁদপুর, নওয়াখালীর চৌমুহনী, ফেনী, বাগেরহাট, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, বগুড়া, শান্তাহার এবং জামালপুরে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যর্থতার কারণেই সংকটে পড়লেই তেলের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। দেশে এখন তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। সম্প্রতি আরও ৪০০ মেগাওয়াটের তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও এক হাজার মেগাওয়াট তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসলে মোট বিদ্যুত উৎপাদনের ৪০ থেকে ৪৫ ভাগেই বেশি দরের তরল জ্বালানিতে উৎপাদন করতে হবে। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর সংকট সামাল দিতে তেল নির্ভরতা বৃদ্ধির কারণে ছয়বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের ভর্তুকি বেড়েছে। এভাবে এককভাবে তরল জ্বালানি নির্ভরতা আবারও বিদ্যুতের দাম উস্কে দেবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্লান অনুযায়ী মোট বিদ্যুত উৎপাদনের ১০ ভাগ তরল জ্বালানি নির্ভর হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এখনই যা ৩০ ভাগের উপরে রয়েছে। বেসরকারী খাতের কয়লাবিদ্যুত উৎপাদনের ব্যর্থতার পর সরকার (জি টু জি) কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এলএনজি (আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের কোন প্রকল্প হাতে নেয়নি। যদিও এলএনজি থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য ভারতীয় রিলায়েন্স পাওয়ারের সঙ্গে সম্প্রতি আলোচনা শুরু করেছে বিদ্যুত বিভাগ। এখন যে পরিমাণ এলএনজি আমদানি করার চিন্তা করা হচ্ছে তা দিয়ে দেশে গ্যাসের সঙ্কটই সামাল দেয়া কঠিন হবে। ফলে এই গ্যাস দিয়ে নতুন কোন বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব হবে না। আশা করা হচ্ছে ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হবে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই জ্বালানির বহুমুখীকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কয়লা এবং এলএনজিকে (আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) বিদ্যুত উৎপাদনের বিকল্প জ্বালানি বিবেচনা করা হয়। সরকার প্রথমে বিকল্প জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে দায়িত্ব বেসরকারী খাতের উপর ছেড়ে দেয়। দেশীয় একটি কোম্পানিকে ২০১১ সালে কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ দিলেও তারা এখনও পর্যন্ত কোন কেন্দ্র নির্মাণের কাজই শুরু করতে পারেনি। বেসরকারী খাত ব্যর্থ হচ্ছে দেখে সরকার যৌথ উদ্যোগে অন্যদেশের সরকারী বিদ্যুত উৎপাদন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে। কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য।
×