ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শুষ্ক মৌসুমে কাজের গতি কয়েক গুণ বাড়বে

ট্রানজিশন কেয়ারের কাজ শুরু ॥ প্রথম প্রস্তুত হচ্ছে ৩৭ নম্বর পিলার

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ট্রানজিশন কেয়ারের কাজ শুরু ॥ প্রথম প্রস্তুত হচ্ছে ৩৭ নম্বর পিলার

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর ৩৭ নম্বর পাইল আগে প্রস্তুত হচ্ছে। এ পাইলে প্রথম তিনটি বটম পাইলের ওপর টপ পাইল স্থাপনের পর আরও দু’টি অর্থাৎ পাঁচটি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। আরও একটি স্থাপনের কাজ চলছে এখন। এটি সম্পন্ন হলে প্রথম ৩৭ নম্বর পিলারটি পরিপূর্ণ হবে। এই ৩৭ ও পাশের ৩৮ নম্বর পিলারেই প্রথম সুপার স্ট্রাকচার স্থান করা হবে। তাই ৩৭ নম্বর প্রস্তুত হলেই ৩৮ নম্বর পিলারের বাকি কাজ শুরু হবে। ৩৮ নম্বরে এখন পর্যন্ত তিনটি বটম পাইল স্থাপন হয়েছে। পদ্মায় এ পর্যন্ত ২৯টি পাইল স্থাপন হয়েছে। এদিকে পদ্মা সেতুর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে ট্রানজিশন কেয়ারের কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার থেকে জাজিরা প্রান্তে ট্রানজিশন কেয়ারের ১৬টি পাইলে কাজ শুরু হয়েছে একযোগে। আরও অগ্রগতির নতুন খবর হচ্ছে- সুপার স্ট্রাকচারের দ্বিতীয় চালান নিয়ে চীন থেকে সমুদ্র পথে মাদার ভেসেল কুতুবদিয়া চ্যানেলে পৌঁছায় গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে। এগুলো বার্জে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এই সুপার স্ট্রাকচারের কিছু অংশ ভর্তি করে বুধবার দু’টি বার্জ মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। বার্জ দু’টির ১২ সেপ্টেম্বর ঈদের আগের দিন মাওয়া পৌঁছার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় চালানের বাকি মালামাল নিয়ে অন্য বার্জগুলোও মাওয়া রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে ২ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার জার্মানী বিশাল হ্যামার এখন নেদারল্যান্ড হয়ে সমুদ্র পথে বাংলাদেশে আসছে। এটি অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে পৌঁছার কথা রয়েছে। হ্যামারটি পৌঁছলে পদ্মায় পাইল স্থাপনে গতি বেড়ে যাবে। এদিকে সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) পাইল স্থাপনের কাজ আবার শুরু হয়েছে। ইকো সাউন্ডার মেশিন বিকল হওয়ায় এই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে নতুন দু’টি ইকো সাউন্ডার প্রকল্পে এসে পৌঁছেছে। তাই বৃহস্পতিবার থেকে পদ্মা তীরের জাজিরা প্রান্তে এই মূল পাইল স্থাপনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। গত ৮ আগস্ট এই পাইল স্থাপন শুরু হয়ে তিনটি পাইল স্থাপন করা হয়। আরও দু’টি স্থাপনের সময় প্রযুক্তির অধুনা সংযোজন ইকো সাউন্ডার বিকল হয়ে যায়। তাই জাপান থেকে একটি এবং চায়না থেকে আরেকটি মোট দু’টি ইকো সাউন্ডার আনা হয়। পাইল মাটির নিচে যথাযথভাবে প্রবেশ করছে কিনা যন্ত্রটি তা নিশ্চিত করছে। এদিকে চীন থেকে আসা সুপার স্ট্রাকচার ফিটিংয়ের কাজ নিয়ে মাওয়ার কুমারভোগের বিশেষ ওয়ার্কসপে এখন হরদম ব্যস্ততা। রাত দিন ভারি ভারি এই লৌহ খ- জোড়া লাগানোর কাজ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে পিলারের ওপর এ অবকাঠামো স্থাপনে টার্গেট সামনে রেখে এগিয়ে চলছে নানামুখী কাজ। গত ৮ আগস্ট থেকে এই সুপার স্ট্রাকচার এই ইয়ার্ডে আসতে শুরু করে। প্রথম চালানের সব মালামাল আসার পর চীন থেকে একটি উচ পর্যায়ের টেকনিশিয়ান দল আসে গত ২৫ আগস্ট। এরপরই এই কাজের অগ্রগতি বেড়ে যায়। চীনে প্রায় ৮০ মিলিমিটার পুরু স্ট্রিলপ্লেট কেটে ওয়েল্ডিং করে তৈরি করা হয়েছে এ সেতুর উপরের অংশের এই অবকাঠামো। মাওয়ায় ল্যাব টেস্ট করার পর ক্রমান্বয়ে ১২৯টি ¯প্যানকে জোড়া দিয়ে তৈরি করা হবে প্রায় ৩ হাজার টন ওজনের এক একটি সুপার স্ট্রাকচার। যা দুটি পিলারের মধ্যে বসিয়ে তৈরি করা হবে সংযোগ। আর গার্ডারসহ দ্বিতল সুপার স্ট্রাকচার বসিয়ে দেয়া হলে এর নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন ও ওপর দিয়ে অন্য যানবাহন। মাওয়া ও জাজিরা এই দুই প্রান্তের ৮টি পিলারের মধ্যে ৩টি করে ২৪টি এবং ২৭ নম্বর পিলারে ৫টি পদ্মা নদীতে এখন পর্যন্ত ২৯টি পাইল বসানো হয়েছে। এর ২৬টি বটম পাইল। বাকি ৩টিতে টপ পাইল হয়েছে। সেতুর পাইলিংয়ের কাজে গতি আনতে আরও নানা যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে। বর্ষা বিদায় নিচ্ছে। তাই এই শুষ্ক মৌসুমে কাজের গতি কয়েক ধাপ বাড়ানো হচ্ছে। মূল সেতুর কাজ করছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। পদ্মায় যেমন চলছে বড় আকারের এই কাজ! আবার পদ্মা তীরেও মূল সেতুর আরেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সংযোগ সেতু (ভায়াডাক্ট)। এর ২২ নম্বর পিলারে তিনটি পাইল ইতোমধ্যেই স্থাপন হয়ে গেছে। ভায়াডাক্টের ২০ নম্বর পিলারে আরও দু’টি পাইল স্থাপনের কাজ দিয়েই আবার বৃহস্পতিবার রাতে পুরোদমে শুরু হয়েছে।
×