ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র হজের মৌসুমে ওমরাহ ও ইবাদতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি মসজিদের বিষয় এখানে কিঞ্চিত উল্লেখ করতে চাই। তা হলো আয়িশা মসজিদ। স্মরণ করা যেতে পারে হযরত আয়িশা (রা.) আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রিয়তম সহধর্মিণী। নবীজীর কথা, কর্ম ও আদর্শের নিকটতম সাক্ষী এ মহীয়সী মহিলা। মহানবীর তিরোধানের পর ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য জীবন্ত কিংবদন্তি ছিলেন হযরত আয়িশা (রা.)। সাহাবী পরবর্তী যুগের প্রখ্যাত তাবেঈ আতা ইবনে আবী রাবাহ (রহ.) বলেন, হযরত আয়িশা ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফকীহ বা ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ, সবচেয়ে জানা ব্যক্তি এবং আমজনতার মধ্যে সুন্দর মতামতের অধিকারিণী (আল মুসতাদরিক)। হযরত আয়িশা নিজে বলতেন, আমি গর্বের জন্য নয়, বরং বাস্তব কথাই বলছি। আর তা হলো, আল্লাহ তায়ালা আমাকে এমন কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যার আর কাউকে দান করেননি। যেমন, ফেরেশতা রাসূলুল্লাহকে স্বপ্নের মধ্যে আমার ছবি দেখিয়েছেন, আমার সাত বছর বয়সে রাসূল আমাকে বিয়ে করেছেন, নয় বছর বয়সে আমি স্বামী গৃহে গমন করেছি, আমার নির্দোষিতা ঘোষণা করে কুরআন শরীফের আয়াত নাযিল হয়েছে, জিবরাঈল ফেরেশতাকে আমি স্বচক্ষে দেখেছি, আমারই কক্ষে নবীজীর কাছে ওহী নাযিল হয়েছে এবং তার কবর স্থাপিত হয়েছে ইত্যাদি। হযরত রাসূলে কারীম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা জ্ঞানের অর্ধেকই আয়িশা হুমায়রা থেকে গ্রহণ কর।’ মহানবী যে প্রিয়তমা স্ত্রী সম্পর্কে উম্মতদের জ্ঞান আহরণের এত উচ্চ তাগিদ দিয়েছেন আজ আমরা তার থেকে জ্ঞানের ফায়দা হাসিল তো দূরের কথা, তার সম্পর্কেও অনেক নারী-পুরুষের মোটামুটি ধারণা কম রয়েছে। হযরত আয়িশার দ্বীনদারী ও স্বামীভক্তি ছিল অতুলনীয়। আল্লাহর ওয়াস্তে তার আমল ছিল অতি উচ্চাঙ্গের। একবার আরাফাতের দিন আয়িশা (রা.) রোযা রাখলেন। প্রচ- গরমের কারণে মাথায় পানির ছিটা দিচ্ছিলেন। একজন রোযা ভেঙ্গে ফেলার পরামর্শ দিলেন। তিনি বললেন : আমি রাসূলুল্লাহ (স.) এর নিকট শুনেছি যে, আরাফাতের দিন রোযা রাখলে সারা বছরের পাপ মোচন হয়ে যায়, তখন তা কিভাবে ভাঙতে পারি? (মুসনাদ ৬/১২৮)। অত্যন্ত কঠোরভাবে হজের পাবন্দ ছিলেন তিনি। এমন বছর খুব কমই যেত, যাতে তিনি হজ আদায় করতেন না। খলীফা উমর তার জীবনের শেষ পর্যায়ে হযরত উসমান ও আবদুর রহমান ইবন আওফকে (রা.) রাসূলুল্লাহর (স.) সহধর্মিণীদের সাথে হজে পাঠান। উল্লেখ্য, বিদায় হজে কমবেশি প্রায় এক লাখ মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। উঁচু স্তরের সকল সাহাবী এ সফরে রাসূলুল্লাহর (স.) সফরসঙ্গী ছিলেন। এ সফরের যাবতীয় ঘটনা সকলের জানা থাকার কথা। হযরত আয়িশা (রা.)ও স্মৃতিতে ঘটনাটি ধরে রাখেন। ঠিক হজের অনুষ্ঠানাদি আদায়কালীন সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তিনি ভীষণ কষ্ট পান। হযরত তাকে সান্ত¡না দেন এবং ‘তানঈম’ নামক স্থানে নতুন ইহরাম বেঁধে কা’বার তাওয়াফ করার নির্দেশ দেন। নবীপতœী হযরত আয়িশা তানঈম এলাকায় নতুন করে ইহরাম পড়ে ওমরাহ পালন করেছিলেন বলে আজও লাখো লাখো হাজী সে এলাকা থেকে ইহরাম বেঁধে উমরা পালন করেন। সৌদি সরকার এখানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশাল সুন্দর মসজিদ। এ মসজিদকে হযরত আয়িশার পূর্ণ স্মৃতির কারণে মসজিদে আয়িশা বলা হয়। স্থানীয়রা তানঈম এবং ওমরা মসজিদও বলে। হাফিজ ইবন কায়্যিম হযরত আয়িশার (রা) এ বর্ণনাটি নকল করার পর বলেছেন, হযরত আয়িশার (রা.) আমল ও হাদীস থেকে হজের অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মূলনীতি গৃহীত হয়েছে। যেমন, নারীদের ক্ষেত্রে শারীরিক বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে তাওয়াফুল কুদুম রহিত হয়ে যাবে। এ অবস্থায় হজের পর উমরার নিয়্যত করা যায়িজ। নারীরা বিশেষ অবস্থায় শুধু কা’বার তাওয়াফ ছাড়া হজের অন্যসব কাজ আদায় করতে পারবে। ‘তানঈম’ এলাকা হারামের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং হারামের বাইরে। উমরা এক বছরে এমনকি এক মাসেও দুই বার আদায় করা যায়। (যা’দুল মাআদ ১/২০৭, আসহাবে রাসূলের জীবনকথা ৫/১৭০)।
×