স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকদের আবাসিক জুবেরি ভবন থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর সেখানে আত্মহত্যার একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। ওই চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। শারীরিক, মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করলাম।’ তবে ছেলে সোয়াদকে তার বাবার হেফাজতে যেন না দেয়া হয়, সে বিষয়েও চিরকুটটিতে সতর্ক করা হয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, পুলিশের সঙ্গে আমরা তার রুমে গিয়ে সুইসাইড নোটটি পেয়েছি। চিঠিতে সই না থাকলেও এটা তার হাতের লেখা বলেই মনে হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘর তল্লাশি করে যে সুইসাইড নোট আমরা পেয়েছি, সেটা উনার ডায়েরির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। হাতের লেখা একই মনে হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষকদের আবাসিক ভবন জুবেরির ৩০৩ নম্বর কক্ষের দরজা ভেঙ্গে আকতার জাহানের লাশ উদ্ধার করা হয়।
তার সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আকতার জাহানকে তার ঘরে মশারির ভেতরে শোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মুখে ফেনা ও রক্ত বেরিয়ে আসার মতো কালো দাগ ছিল।
হাসপাতালে আনার অনেক আগেই আকতার জাহানের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মাহিনুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত না করে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।
জানা যায়, দীর্ঘদিন সংসার করার পর ২০১২ সালে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমেদের সঙ্গে আকতার জাহানের ছাড়াছাড়ি হয়। তাদের একমাত্র ছেলে চলতি বছরের শুরু থেকে ঢাকায় নানাবাড়িতে থেকে একটি ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলে পড়ছে।
আকতার জাহানের ঘরে পাওয়া চিরকুটে আরও লেখা হয়েছে, ছেলে ‘সোয়াদকে যেন ওর বাবা কোনভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে। যে বাবা সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে, সে যে কোন সময় সন্তানকে মেরেও ফেলতে পারে বা মরতে বাধ্য করতে পারে।’ মৃতদেহ ঢাকায় না পাঠিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিতেও অনুরোধ করা হয়েছে ওই চিরকুটে।
চিরকুটের বিষয়ে তানভীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সোয়াদ তো অনেকদিন আমার কাছেই ছিল। কিছুদিন আগে সে তার নানুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। ওর মা চাচ্ছিল ঢাকাতেই ও লেখাপড়া করুক। একজন মানুষ মরে যাওয়ার আগে কেন এরকম নোট লিখে গেল তা আমার বোধগম্য নয়।
রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবার বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।