ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নেতৃত্ব ঢেলে সাজানো হবে

সম্মেলনে চমক আনতে চায় আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সম্মেলনে চমক আনতে চায় আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এবারের সম্মেলনে অনেক চমক আনতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। যে কোন বারের চেয়ে এবারের ২০তম জাতীয় সম্মেলনটি জাঁকজমক ও তাৎপর্যপূর্ণ করতে চায় তারা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা দলটির সম্মেলনে গতানুগতিক এজেন্ডার বাইরে বেশকিছু বড় চমক থাকছে তা বেশ জোরের সঙ্গেই জানান দিচ্ছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সম্মেলনে শক্তি ও সামর্থ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক এ দলটি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঢেলে সাজাতে চায়। পাশাপাশি গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং ঘোষণাপত্রে বেশকিছু চমকপ্রদ ঘোষণার মাধ্যমে দলটি দেশের মানুষের কাছে একটিই বার্তা পৌঁছাতে চায় যে, প্রগতি, উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে আওয়ামী লীগের বিকল্প একমাত্র আওয়ামী লীগই। আগামী ২২-২৩ অক্টোবর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক এ জাতীয় সম্মেলন। ‘সম্মেলনের অঙ্গীকার, রুখতে হবে জঙ্গীবাদ’- শীর্ষক এবারের সম্মেলনে হাজার হাজার নেতাকর্মী যেমন অংশ নেবেন, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের বাঘা বাঘা রাজনৈতিক নেতাকে উপস্থিত করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে চান আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, এবারের সম্মেলনে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের নতুন কমিটি সাজানো, ভবিষ্যত কার্যপদ্ধতি ও পরিকল্পনা নির্ধারণ এবং দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রে সংযোজন-বিয়োজনের মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। সম্মেলনের অতিথিদের উপস্থিতি, তাদের আপ্যায়ন, ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের রূপরেখা, কমিটির আকার বৃদ্ধিসহ সবকিছুতেই বড় চমক দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে জাতীয় পতাকার রং সবুজকেই গুরুত্ব দিতে চায় দলটি। সবুজ রংটি বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার প্রাপ্তিরও প্রভাব থাকছে। দলের পক্ষ থেকে সম্মেলনের খবর দেশের সব মুঠোফোন গ্রাহককে খুদেবার্তার মাধ্যমে জানানো হবে। সবুজ রংকে গুরুত্ব দিয়ে পাটের সুদৃশ্য ব্যাগ দেয়া হবে সম্মেলনে। সম্মেলন উপলক্ষে ছাপানো সব প্রকাশনা এ ব্যাগে দেয়া থাকবে। প্রকাশনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ সভাপতির ভাষণ, অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের ভাষণ, সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন, শোক প্রস্তাব, সম্মেলনের স্মরণিকা, সম্মেলন উপলক্ষে বিশেষ প্যাড, কলম। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের ‘আগুন-সন্ত্রাসের’ ডিভিডিও দেয়া হবে কাউন্সিলরসহ আগত অতিথিদের। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারও থাকবে। এছাড়া সম্মেলন উপলক্ষে পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে এবং টেলিভিশনে এক মিনিটের ফিলার প্রচার করা হবে। জানা গেছে, সম্মেলনের মূল মঞ্চটি তৈরি করা হবে আধুনিক প্রযুক্তি এবং দলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংস্কৃতি ধারণ করে। আগের মতো দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’র আদলে মঞ্চটি নির্মাণ করা হবে। তবে তাতে যুক্ত করা হবে ১৯৪৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেয়া সব নেতার ডিজিটাল ছবি, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্জিত বড় বড় সাফল্যের ছবিসহ ডিজিটাল বেশকিছু প্রযুক্তি, যাতে দর্শক সারিতে বসেই আগত সকল নেতাকর্মী, সমর্থক, কাউন্সিলর, ডেলিগেটস ছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথিরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সকল অর্জন দেখতে পারবেন। এ ব্যাপারে সম্মেলনের বিভিন্ন উপ-কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই এবারের সম্মেলনে বেশকিছু চমক আনতে চান দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এবারের সম্মেলনে যে নতুন কমিটি হবে সে নেতাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনে পুনরায় দলকে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এটা মাথায় রেখেই এবারের সম্মেলনে নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পদ-পদবিতে উল্লেখযোগ্য রদবদল না হলেও বেশকিছু চমক থাকতে পারে নতুন কমিটিতে। এবারের সম্মেলনে ছিটকে পড়তে পারেন সাংগঠনিক কর্মকা-ে ব্যর্থ ও বিতর্কিত বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে থাকা কয়েকজন ‘হেভিওয়েট’ নেতাকে পুনরায় সভাপতিম-লীর সদস্য পদে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনার ইঙ্গিতও দিচ্ছেন অনেকেই। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে থাকা নেতাদের আমলনামা এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিগত দিনের কর্মকা- তিনি চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। ইতোমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি ৭৩ থেকে ৮১-তে উন্নীত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ, সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থ, দুর্নীতি-অনিয়ম ও অথিকথনের জন্য বিতর্কিত বেশ কয়েকজন নেতার ভাগ্যে যে এবার বিপর্যয় ঘটবে এটি নিশ্চিত। অন্যদিকে সাংগঠনিকভাবে সফল, মাঠের রাজনীতি ও রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষকে মোকাবেলা করতে সক্ষম এমন বেশ কয়েকজন নেতার এবার পদোন্নতি ঘটতে পারে। আভাস পাওয়া গেছে, এবারের সম্মেলনে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক ছাত্রনেতা, ২০০১ সালের নির্বাচনপরবর্তী সময়ে দলের চরম দুর্দিনে অবদান রাখা নেতা এবং সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও জনপ্রিয় বেশ ক’জন তৃর্ণমূল নেতাকে এবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় বড় পদে নিয়ে এসে তাদের মূল্যায়ন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেক পদেই রদবদল, সংযোজন-বিয়োজনের কথা শোনা গেলেও আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি অর্থাৎ সাধারণ সম্পাদক কে হবেন এ নিয়ে কোন পর্যায়ের নেতাই মুখ খুলতে রাজি নন। এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলেই তাদের এক কথা- ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) যাকে সাধারণ সম্পাদক করবেন, তার সঙ্গেই আমরা কাজ করব। নেত্রী যা বলবেন সেটিই শেষ কথা।’ জানা গেছে, দু’দিনব্যাপী এবারের সম্মেলনেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনের কোন সম্ভাবনাই নেই। সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নেবেন না দলটির কোটি কোটি নেতাকর্মী, সমর্থক। আর সাধারণ সম্পাদক পদে প্রধানমন্ত্রী যাকে চাইবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন। দুটি পদ ছাড়া বাকি কেন্দ্রীয় কমিটির সকল পদে নেতা নির্বাচনের ভার কাউন্সিলররা দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপরই অর্পণ করবেন। তবে এখন পর্যন্ত দলের নানা পর্যায়ের আলোচনায় বলা হচ্ছে, এবারের সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদে ‘হ্যাটট্রিক’ করতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কী করবেন, সেদিকেই তাকিয়ে দলটির সারাদেশের নেতাকর্মীরা।
×