ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত ও বিপাক ই স্তান

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত ও বিপাক ই স্তান

কূটনৈতিক শিষ্টাচার না মানাটা পাকিস্তানের পুরনো খাছলত। সেদেশে বহুমাত্রিক জেনারেলরা একের পর এক গদিতে আসতেন আর এমন সব ফতোয়া দিতেন মনে হতো স্বয়ং দেবদূত বা ফেরেশতা নেমে এসেছে। দীর্ঘকাল সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হবার পর পাকিস্তানের প্রথম সিভিল শাসক যদি ভুট্টোকে ধরি তো তার আচরণের কথাই মনে করুন। জাতিসংঘে তার সেই অসভ্য আচরণ ভুলে গেলে চলবে? আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি নিশ্চিত জেনে এবং তাদের দুই মিত্র আমেরিকা আর চীনের আস্ফালনের পরও কাজ হচ্ছে না দেখে ভুট্টোও কাগজপত্র কুটি কুটি করে ছিঁড়ে জাতিসংঘকে অপমান করে বেরিয়ে গিয়েছিল। এই পাকিস্তান কমনওয়েলথ থেকে বহিষ্কৃৃত দেশ। এদের খেলোয়াড়রা অলিম্পিকের মতো খেলায় বিজয়ী হতে না পেরে রৌপ্য বা ব্রোঞ্জের পদক পায়ে বেঁধে খেলাকে অপমান করে শাস্তি পেয়েছিল। এ এমন দেশ যার জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মাথা গরম আর পিছু হটার বাইরে কোন ইতিহাস নেই। আমাদের ব্যাপারে তাদের এলার্জি সাংঘাতিক। তথাকথিত সেরা সেনাবহিনীর নাকানি-চুবানি আর নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের ইতিহাস পাকিরা আজও ভুলতে পারেনি। মাঝখানে কিছু সময় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কথিত ভাল সম্পর্কের কারণ ছিল অধীনতামূলক মিত্রতার নীতি মানা বিএনপি ও তাদের ফেলে যাওয়া দালাল জামায়াতীদের শাসন। সে সময় তারা ধরে নিয়েছিল বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে এক না হতে পারলেও তাদের ছোট ভাই ও ছায়া হয়ে থাকবে। কথায় কথায় তাকে দাবড়ানো যাবে। তার মাথায় হাত বুলানো যাবে। বাংলাস্তানের ভেতর দিয়ে তাদের খায়েশ পূরণের চেষ্টা আজ যখন একেবারে ব্যর্থ ও হুমকির মুখে আবার তারা আসল চেহারায় বেরিয়ে এসেছে। তারা জানত না বাঘের ওপর টাগ আছে। সময় কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। পাকিস্তানের সঙ্গে এবং ভারতের সঙ্গেও আমাদের স্বাধীনতার বড় তফাত যুদ্ধে আত্মত্যাগে। তারা ধারাবাহিক সংগ্রামে মানুষের জীবন হারালেও আমাদের মতো গণহত্যার শিকার হয়নি। তাদের ওপর কেউ জঘন্য কায়দায় ঝাঁপিয়ে পড়েনি। এক রাষ্ট্র হবার পরও পাকিরা আমাদের নারীদের ধর্ষণ করেছিল। জীবন কেড়ে নিতে পশুর মতো আচরণ করে বুঝিয়ে দিয়েছিল তারা কত জঘন্য হতে পারে। বাংলাদেশের প্রকৃতি চরিত্র আর মানুষ কোনদিনও তাদের সঙ্গে যায় না, মেলে না। আমরা শ্যামল দেশের সহজ মানুষ। কিন্তু একবার যদি তেড়ে যাই তো কেউই ঠেকাতে পারে না। সে ইতিহাসের অনিবার্য পরাজিত দুশমন পাকিস্তান তাই আমাদের সহ্য করতে পারে না। আজ যখন আমাদের দেশ ইতিহাস শুদ্ধ করে তার চূড়ান্ত উন্নয়ন গন্তব্যে ধাবমান পাকিরা ফের শুরু করেছে তাদের কাগুজে তা-ব। প্রত্যেক দেশের ইতিহাস বিচার ও শাস্তি নিরূপিত হয় তাদের নিজস্ব আদলে। আমরা তো আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণকারী মানবতাবিরোধী দেশদ্রোহীদের বিনা বিচারে ছেড়ে দিতে পারি না। আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা ছিলেন। ছিলেন তাজউদ্দীনের মতো সাহসী মানুষ। একাত্তর তেমন কোন পুরনো ঘটনা নয় যে, ভুলে যাব বা ভুলে যেতে পারব আমরা। পাকিরা জানে না আজ থেকে এক শ’ বছর পরও এদেশের মানুষের মনে গাঁথা থাকবে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ও শোকের কথা। সে কারণে পাকিস্তানের মতো অসভ্য দেশ ও মানুষের সঙ্গে আমাদের শিষ্টাচার ব্যতীত আর কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। যতদিন না তাদের বাঁকা লেজ সোজা হচ্ছে ততদিন এটাই সত্য। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে তারা চেনেনি। তিনি কথা বেশি বলেন। তিনি অনেক সময় বেফাঁস সত্য বলেন। আরও অনেক সীমাবদ্ধতার পরও তিনি আজ দুনিয়ার প্রতিষ্ঠিত এক সরকারপ্রধান। এই সেদিন জন কেরি ঘুরে গেছেন। ঝটিকা সফরে এসে প্রথমেই গিয়েছিলেন বত্রিশ নম্বর ধানম-িতে। পাপ স্খলনের এই ছবি কি পাকিরা দেখেনি? তারা যাঁকে সেখান থেকে বন্দী করে ফাঁসি দেবে বলে নিয়ে গিয়েছিল সে গৃহকোণ আজ তীর্থ। জন কেরি কার উত্তরসূরি? সেই কিসিঞ্জার আর নিক্সনের, যারা ইয়াহিয়ার দোসর। যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি। যারা স্বাধীনের পর আমাদের তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উপহাস করেছিল। সেই ঝুড়ি আজ কানায় কানায় পূর্ণ বলেই আমেরিকানরা পাকিস্তানে না গিয়ে ঢাকায় ছুটে আসে। এসব উন্নয়ন আর অগ্রগতির কা-ারি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাকিরা চিনতে পারেনি। তিনি ভাংলেও মচকান না। মচকান যে না সেটা জন কেরির চেয়ে ভাল আর কে জানে? পাকিবান্ধব দালাল রাজাকারদের ফাঁসি বন্ধ করতে টেলিফোন করেও হালে পানি পাননি ভদ্রলোক। উল্টো ঢাকা এসে লিখে দিয়ে গেছেন বাংলাদেশ চলছে জয়রথে। আর এই রথের কা-ারি জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। বিপরীতে পাকিরা যাবতীয় নিয়মনীতি ভেঙ্গে সমানে আমাদের বিরোধিতা করে চলেছে। একের পর এক যুদ্ধাপরাধীদের জন্য তাদের কান্না আর শোকের বহর দেখেই বলা যায় এরা একাত্তরে কি করেছিল। আমার মতে এ আরেক প্রমাণ। পাকিরাই প্রমাণ দিয়ে চলেছে এদের বিচার ও শাস্তি দেয়া ছিল কতটা যৌক্তিক। পাকিদের এসব আস্ফালন ও কথাকে আমরা থোড়াই পাত্তা দেই। তাদের সরকার জামায়াত ক্রিকেটার ইমরান খান সবাই এক ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে বললেও আমরা একত্রিত বা সম্মিলিত জবাব দিতে পারি না এটাই হলো দুঃখের। সে দুঃখ, সে কষ্টও লাঘব করতে এগিয়ে এসেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। তিনি এবার সার্ক সম্মেলনে যাবেন না এমন একটা খবর এখন হট টপিক। কারণ সেটি হবে পাকিস্তানে। তাঁর এই সিদ্ধান্ত কতটা আনন্দের সেটা সামাজিক মিডিয়া খুললেই বোঝা সম্ভব। তাছাড়া এর মতো কড়া জবাব আর কি আছে দেবার? এই সার্ক নাকি জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন। সে স্বপ্নদোষ দুষ্ট বিএনপিকে দেখুন। যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে একটা কথা বলে না। নীরবতার মানে যে বাংলায় আসলে সম্মতি সেটাও জানে না বেকুবের দল। আসলে সার্ক মূলত এদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের মানুষ ও সরকারের ঐক্যের জন্য গড়া আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরাম। সেখানে সবার আলাদা মর্যাদা, আলাদা সম্মান। বাংলাদেশ এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তাকে অপমান করার সাহস নেই কারও। পাকিস্তানের নির্বোধ মাথা মোটা নেতাদের সেটা বুঝতে দেয়ার জন্য না যাবার এই সিদ্ধান্ত তাই এক শ’ পার্সেন্ট যৌক্তিক। এই সার্কে যদি আমরা মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর কথা ধরি তো বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানই হচ্ছে সে দেশ। এর একটিও পাকিদের সঙ্গে নেই। উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা আর সম্ভাবনার সঙ্গে বিরোধ লাগিয়ে রাখা পাকিস্তান সেখানেও একা। ভারত তার বৈরী।। মালদ্বীপও তাকে তেমনভাবে চায় না। নেপাল, শ্রীলঙ্কা এসবে নেই। ফলে সার্কে পাকিদের আধিপত্য দিবাস্বপ্ন। বরং আমরাই আছি এগিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বলিষ্ঠ ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত সময়ই মূল্যায়ন করবে। নব্য রাজাকার সুশীল বা সুবিধাবাদীরা যাই বলুক যেমন কুকুর তেমন মুগুর না হলে চলে না। আমরা সার্কসহ সব মৈত্রীতায় আছি, থাকব। সমস্যা পাকিদের নিয়ে। যারা আইন সভ্যতা বিশ্বনীতি কিছুই মানে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার অকুতোভয় নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ এই সম্মানজনক জায়গায়। পাকিস্তানে না গেলে সে পালকে আরও একটি পালক যোগ হবে। আপনাকে ধন্যবাদ।
×