ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বার্সিলোনায় ক্যারিয়ার শেষ করবেন মেসি?

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বার্সিলোনায় ক্যারিয়ার শেষ করবেন মেসি?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বার্সিলোনা আর লিওনেল মেসি একে অপরের পরিপূরক। সেই শিশুকাল থেকে স্প্যানিশ পরাশক্তিদের তাঁবুতে আছেন আর্জেন্টইন তারকা। বার্সার সঙ্গে মেসির চুক্তিও ছিল ঐতিহাসিক। সেই থেকে বছরের পর বছর কাতালানদের স্বর্ণ সাফল্য উপহার দিয়েছেন মেসি। এরপরও মাঝে মধ্যে গুঞ্জন রটে, হয়ত প্রাণের ক্লাব ছেড়ে চলে যাবেন আর্জেন্টইান তারকা। তবে বার্সিলোনা সভাপতি জাসেফ মারিয়া বার্টোমেউ এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, বার্সার সঙ্গে ‘আজীবন চুক্তি’ করার সুযোগ আছে মেসির। আর্জেন্টাইন তারকার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে সব। মেসি ন্যুক্যাম্পে যতদিন থাকতে চাইবেন ততদিনই থাকতে পারবেন। কাতালান ক্লাবটি তাকে আজীবন ধরে রাখার বন্দোবস্ত করতে যাচ্ছে। সামনের মাসেই মেসির সঙ্গে বার্সার আজীবন চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে বার্সা সভাপতি বার্টোমেউ বলেন, যতদিন চাইবেন ততদিনই মেসি বার্সিলোনায় থাকতে পারবেন। বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসের সবার সেরা মেসি, যিনি আমাদের হয়ে খেলে যাচ্ছেন। ফুটবলের জন্য তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা খুবই খুশি যে, ক্লাবের জন্যও তিনি অপরিহার্য। ভক্তদের কাছে এবং ফুটবলের জন্যও তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, আগামী মাসে অবশ্যই আমরা তার সঙ্গে আলোচনায় বসব। তিনি নিজেও জানেন যে, তার কাছে আজীবনের চুক্তি সুযোগ আছে। তার ক্ষেত্রে এখানে কোন সীমা নেই। এটা মেসিই নির্ধারণ করবেন এবং এই মুহূর্তে তার বয়স ২৯ বছর। প্রতিভাবান, উচ্চাকাক্সক্ষী এবং অনেক বছর খেলা চালিয়ে যাওয়ার মত নিখুঁত অবস্থাতেই আছেন তিনি। মেসি যে বার্সিলোনার হয়েই খেলা চালিয়ে যাবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এখন আগামী মাসে তা (নতুন চুক্তি) সম্পন্ন করার কথা ভাবছি আমরা। উল্লেখ্য, মেসির সঙ্গে বার্সার বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত। আজকের বিশ্বসেরা মেসির শুরুর পথটা মসৃণ ছিল না। এক সময় অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় ঝরে পড়ার উপক্রম হয়েছিল বিস্ময়কর এ প্রতিভার। ১৯৮৭ সালে আর্জেন্টিনার রোজারিও’তে জন্ম নেয়া মেসির বেড়ে ওঠার গল্পের সঙ্গে আজকের অবস্থান মেলাতে গেলে বিভ্রান্তিতে পড়তে বাধ্য। কেননা সে সময় মেসির বাবা-মা ছিলেন নিতান্তই গরিব। বাবা জর্জ মেসি কাজ করতেন ফ্যাক্টরিতে আর মা সিলিয়া ছিলেন পার্টটাইম ক্লিনার। এমন অসচ্ছল পরিবার থেকেই মেসির আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের বিজ বপন করেন তার বাবা জর্জ। মূলত বাবার প্রচ- উৎসাহ আর আগ্রহেই মাত্র পাঁচ বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দলিতে ফুটবলে হাতে খড়ি হয় মেসির। কিন্তু ১৯৯৫ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সেই জীবন নিয়ে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় তার। এ সময় শারীরিক বৃদ্ধিজনিত হরমোনশূন্যতায় ভুগছিলেন মেসি। তখন মেসির ঠিকানা ছিল নিউওয়েলস বয়েজ। ওই অবস্থায় তাকে দলে নিতে যাচ্ছিল রিভারপ্লেট। দলটির পক্ষে মেসির চিকিৎসার খরচ যোগানো অসম্ভব ছিল। সঙ্গত কারণে মেসির বাবা-মায়েরও মাসে ১৫০০ ডলার খরচ করার মতো অবস্থা ছিল না। অবস্থা এমন সৃষ্টি হলো যে মেসির বেঁচে থাকাটাই দায়। সেখানে আবার ফুটবল খেলা। কিন্তু না, মেসিকে অকালে ঝরে পড়তে হয়নি। অসামান্য এক ফুটবল প্রতিভাকে রক্ষা করতে ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসে বার্সিলোনা। তারা মেসির প্রতিভা চিনতে পেরে বিশেষ করে বার্সার সে সময়কার স্পোটিং ডিরেক্টর কার্লেস রেক্সাস মেসিতে মুগ্ধ হয়ে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করেন। এটিও ছিল এক যুগান্তকরী ঘটনা। মেসির সঙ্গে বার্সিলোনার চুক্তি হয়েছিল ব্যতিক্রমী আমেজে। মেসিতে মুগ্ধ হয়ে রেক্সাস চটজলদি চুক্তি সম্পন্ন করেন। কেননা অন্য কেউ যদি তাকে ছিনিয়ে নেয়। এ তাড়া থেকেই অদ্ভুতভাবে মেসির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেন রেক্সাস। দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সম্পনের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজন পড়ে একটি সাদা কাগজের। কিন্তু ধারে কাছে কোন সাদা কাগজ ছিল না। এরপরও চুক্তি থেমে থাকেনি। কিন্তু কিসের ওপর স্বাক্ষর করে চুক্তি হলো? হ্যাঁ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল ন্যাপকিনে অর্থাৎ টিস্যু পেপারে। সেই থেকে বার্সাকে স্বর্ণ সাফল্য দিয়ে চলেছেন মেসি। এই সম্পদকে তাই হারাতে চাচ্ছে না স্প্যানিশ পরাশক্তিরা।
×