ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘নাম্বার ওয়ান হয়েও আমি প্রীত নই!’

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘নাম্বার ওয়ান হয়েও আমি প্রীত নই!’

রুমেল খান ॥ ‘ওয়ালটন উন্মুক্ত টেনিস টুর্নামেন্ট’-এর প্রথম আসর বৃহস্পতিবার রমনার জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্সে শেষ হয়েছে। এতে দ্বি মুকুট জেতেন আফরানা ইসলাম প্রীতি। মহিলা এককে বিকেএসপিতে উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক বিষয় নিয়ে পড়া প্রীতি একই প্রতিষ্ঠানের পপি আক্তারকে এবং বালিকা এককে (অ-১৮) শাহ সাফিনা লাক্সমিকে (বিকেএসপি) হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। ম্যাচ শেষে কথা হয় ষোড়শী সুদর্শনা বাগেরহাটের মেয়ে প্রীতির সঙ্গে। একটু আগেই (বৃহস্পতিবার) জিতেছেন মহিলা এককের শিরোপা। অনুভূতি জানতে চাইলে বিরক্তমাখা কন্টে জানান, ‘ফাইনাল খেলার আগে খেলা চালানোর জন্য কোন আম্পায়ারই পাওয়া যাচ্ছিল না। বলতে গেলে এক ধরনের জোর জবরদস্তি করেই ফেডারেশনের কাছ থেকে আম্পায়ার হিসেবে যাকে ম্যানেজ করে নিই, সে নিজেও এই টুর্নামেন্টের একজন খেলোয়াড়! এমনও শুনতে হয়েছে, ‘দুই ফাইনালিস্টই তো বিকেএসপির, তাহলে আর আম্পায়ার লাগবে কেন? এটা কোন কথা হলো? শুধু তাই নয়, কোন বলবয় না থাকায় আমাদেরই বলবয়ের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে ফাইনালে। তাছাড়া খেলতেও হয়েছে প্রচ- গরমের মধ্যে। সব মিলিয়ে আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে।’ ঘাম ঝরানো জয়ে শিরোপা জিতেও প্রীত নন প্রীতি, ‘গরমের কারণে স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারিনি। চ্যাম্পিয়ন হয়েও মন ভরেনি।’ আরও যোগ করেন, ‘ম্যাচের আগে শিরোপা জেতা নিয়ে আত্মবিশ্বাস থাকলেও খেলার মাঝ পথে সেটার অবনমন ঘটে। তারপর নিজেকেই নিজে সাহস জোগাই, কনফিডেন্স বাড়াই। এবং ম্যাচে ফিরে আসি। বুধবার বালিকা এককের (অ-১৮) ফাইনাল ম্যাচ খেলি বিকেলে। রোদ ছিল কম। ম্যাচে জিতি বেশ প্রাধান্য বিস্তার করেই।’ এই আসরে মহিলা খেলোয়াড় সঙ্কট থাকায় মেয়েদের ডাবলস ইভেন্টটি রাখেননি আয়োজকরা। রাখলে বিকেএসপির শাহ্ সাফিনা লাক্সমিকে ডাবলস পার্টনার করার ইচ্ছা ছিল বলে জানান প্রীতি। ২০১০ থেকে টেনিস শুরু। ২০১১ সাল থেকে টুর্নামেন্ট খেলা আরম্ভ। সিনিয়র পর্যায়ে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো একক শিরোপা জিতলেন প্রীতি। দুটি তো এই আসরেই। আরেকটি এ বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। ন্যাশাল-ইন্টারন্যাশনাল এবং একক-দ্বৈত মিলিয়ে জুনিয়র পর্যায়ে শিরোপা সংখ্যা ঈর্ষণীয়Ñ ২৫টি। তারপরও তৃপ্ত নন প্রীতি। বরং আছে একরাশ হতাশা ও ক্ষোভ, ‘এত কষ্ট করে খেলি ও নিজেকে হাইলাইটস করি, অথচ ফেডারেশন থেকে সে রকম সুযোগ-সুবিধা পাই না। যে প্রাইজমানি দেয়া হয়, তা দিয়ে একজোড়া জুতোও কেনা যায় না। এমন অঙ্কের প্রাইজমানি দেয়া উচিত, যাতে এটা কাজে লাগে এবং সবাই খেলতে আগ্রহী হয়।’ সারা বছর যে পরিমাণ টুর্নামেন্ট হয়, তা নিতান্তই অপ্রতুল। এর সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে বলে জানান প্রীতি, ‘আমাদের নিজেদের মধ্যে খেলে তো লাভ হচ্ছে না। এতে স্কিল বাড়ছে না। এজন্য ফেডারেশনের উচিত আমাদের বিদেশের টুর্নামেন্টে খেলতে পাঠানো (কমপক্ষে ৪-৫টি টুর্নামেন্টে) এবং বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো। অথবা দেশে যদি খেলোয়াড় বাছাই করে বছরে অন্তত দু’বার যদি কমপক্ষে এক-দুই মাসের জন্য আমাদের ট্রেনিং দেয়া হতো, তাহলেও অনেক উপকৃত হতাম। ’ টেনিসে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য প্রীতি অবশ্য বিদেশ সফর করেছেন অনেকবারই। থাইল্যান্ডে ৩ এবং ভিয়েতনামে ২ বার। তবে সেটা বিকেএসপির মাধ্যমে। ফেডারেশনের মাধ্যমে একবার একবারই ভারতে গেছেন এসএ গেমস খেলতে। যদিও বিকেএসপিতে প্রীতিদের রোজই টেনিস প্র্যাকটিস করতে হয়, তবে কোন টুর্নামেন্টের জন্য স্পেশালভাবে প্র্যাকটিস করতে হয়। ‘কলেজ টাইম অফ করে দিয়ে সকালে ৩ এবং বিকেলে ৩ ঘণ্টা প্র্যাকটিস করে থাকি। টেনিস ফেডারেশন থেকে বিকেএসপিতে চিঠি পাঠানো হয় টুর্নামেন্ট প্রসঙ্গে। সেটা পাওয়ার পরই কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের খেলা ও অনুশীলনের জন্য অনুমতি দেয়।’ সেরেনা উইলিয়ামকেই আদর্শ মানেন প্রীতি। তবে ভাল লাগে মারিয়া শারাপোভাকেও। কিন্তু ডোপ টেস্টে পজেটিভ হয়ে শারাপোভা এখন বহিষ্কৃৃত। বিষয়টা পীড়া দেয় প্রীতিকে, ‘ও একটা ভুল করে ফেলেছে। তাকে একটা শেষ সুযোগ দেয়া উচিত দ্রুত টেনিসে ফিরতে।’ ডোপ টেস্ট সম্পর্কে প্রীতির উপলব্ধি, ‘এবার এসএ গেমসে আমাদের ডোপ টেস্ট করার কথা থাকলেও সেটা করা হয়নি। সবচেয়ে বড় কথাÑ আমাদের টেনিস ফেডারেশন থেকে কখনই জানানো হয় না বা কোন তালিকা দেয়া হয় না, কোন ঔষধগুলো আমাদের খাওয়া যাবে না, যেগুলো ড্রাগ হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত। এভাবে চললে ভবিষ্যতে বিদেশে খেলতে গেলে যখন ডোপ টেস্ট করা হবে, তখন তো আমরা বিপদে পড়ব।’ আগামী নবেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে আইটিএফ ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্ট। এই আসরের শিরোপা জিততে হবে, সেটা এখন থেকেই লক্ষ্যস্থির করেছেন প্রীতি। টেনিস নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা? ‘আমার স্বপ্ন টেনিস খেলে বাংলাদেশকে টেনিস বিশ্বে সুপরিচিত করা এবং বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে একদিন নিজের অবস্থান করে নেয়া। দেশে যদি সব ধরনের টেনিস ফ্যাসিলিটিজ পাই, তাহলে গ্রীন কার্ড পেলেও কোনদিনও বিদেশ যাব না বৈশাখী বা শারদা আপুদের মতো।’ ক্যারিয়ারে স্মরণীয় ঘটনা? ‘শারদা আলম দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষে এবং জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। ২০১৪ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিতে তিনি আমার কাছে হেরে যান। এরপর তিনি আর কোনদিন টুর্নামেন্টই খেলেননি এবং খেলাই ছেড়ে দেন। তবে কেন, সেটা আমার জানা নেই। তবে মজাটা এখানেইÑ আমার কাছে হেরেই তার ক্যারিয়ারের ইতি।’ সবশেষে প্রীতির ভাষ্য, ‘সিনিয়র লেভেলে এককে দেশে আমিই এখন নাম্বার ওয়ান। তবে এতে আমি সন্তুষ্ট নই। কেননা আমি চাই আরও ভাল খেলতে। কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাউকেই মনে করি না। সবাইকেই সমান সমীহ করি।’ প্রীতির সাফল্যের ধারাবাহিকতা যেন আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকে, তার স্বপ্ন সফল হোক, সেটাই টেনিসপ্রেমীদের নিগূঢ় প্রত্যাশা।
×