ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে নৌকা বাইচ

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

হারিয়ে যাচ্ছে নৌকা বাইচ

নৌকাবাইচ হচ্ছে নদীতে নৌকা চালনার প্রতিযোগিতা। বাইচ শব্দটি ফার্সি বাজি শব্দজাত যার বিবর্তন-বাজি, বাইজ, বাইচ। যার অর্থ হচ্ছে খেলা। এ খেলায় লাভ হচ্ছে আমোদ-প্রমোদমূলক প্রতিযোগিতা। একদল মাঝি নিয়ে একেকটি দল গঠিত হয়। এমন অনেক দলের মধ্যে নৌকা চালনা প্রতিযোগিতাই হচ্ছে নৌকাবাইচ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আনন্দ আয়োজন, উৎসব ও খেলাধুলা সবকিছুতেই নদী ও নৌকার সরব আনাগোনা। হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংস্করণ বাংলাদেশের নৌকাবাইচ। এক সময় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগ ছিল নদীকেন্দ্রিক আর বাহন ছিল নৌকা। কালের বিবর্তনে আজ অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। তেমনি অনেক এলাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য থেকে মুছে যাচ্ছে নৌকাবাইচের প্রচলন। নৌকাবাইচ লোকায়ত বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি অংশ। তবে নদীমাতৃক দক্ষিণাঞ্চলে কবে কখন গণবিনোদন হিসেবে নৌকাবাইচের প্রচলন হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায়নি। বরিশালের ইতিহাসবোদ্ধা কবি শিকদার রেজাউল করিমের মতে, মধ্যযুগের মুসলমান নবাব, সুবেদার, ভূস্বামীরা এই প্রতিযোগিতামূলক বিনোদনের সূত্রপাত করেছিলেন। তবে এ বিষয়ে তিনি দুটি জনশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন। একটি হচ্ছে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রাকে কেন্দ্র করে। জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার সময় স্নানার্থীদের নিয়ে বহু নৌকার ছড়াছড়ি পড়ে যায়। এ সময় মাঝি-মাল্লা ও যাত্রীরা প্রতিযোগিতায় আনন্দ পায়। এ থেকেই কালক্রমে নৌকাবাইচের শুরু। দ্বিতীয়টি পীরগাজীকে কেন্দ্র করে। আঠারো শতকের শুরুর দিকে কোন এক গাজী পীর মেঘনা নদীর এক পাড়ে দাঁড়িয়ে অন্য পাড়ে থাকা তার ভক্তদের কাছে আসার আহ্বান করেন। কিন্তু ঘাটে কোন নৌকা ছিল না। ভক্তরা তার কাছে আসতে একটি ডিঙ্গি নৌকা খুঁজে বের করেন। যখনই নৌকাটি মাঝ নদীতে আসে তখনই নদীতে তোলপাড় শুরু হয়। নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠে। তখন চারপাশের যত নৌকা ছিল তারা খবর পেয়ে ছুটে আসে। তখন সারি সারি নৌকা একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলে। এ থেকেই নৌকাবাইচের গোড়াপত্তন শুরু হয়। নৌকাবাইচের জন্য দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের নৌকা দেখা যায়। বাইচের নৌকার গঠন কিছুটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এ নৌকা হয় সরু ও লম্বাটে। লম্বায় যেমন অনেক দীঘল; ঠিক তেমনি চওড়ায় খুবই সরু। -খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে
×