ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নৌকাবাইচ

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নৌকাবাইচ

প্রতিবছরই সিরাজগঞ্জের অধিকাংশ উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। যমুনা বড়াল, ইছামতি, দৈভাঙ্গা, করতোয়া, ফুলজোড় নদীতে অনুষ্ঠিত হয় নৌকাবাইচ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আনন্দ আয়োজন, উৎসব ও খেলাধুলা সবকিছুতেই নদী ও নৌকার সরব আনাগোনা। নৌকাবাইচ নদীমাতৃক বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাম। এটির সঙ্গে মিশে আছে গ্রাম বাংলার মানুষের আবেগ-অনুভূতি ভালবাসা। হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংস্করণ বাংলাদেশের এই নৌকাবাইচ। এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ নানা বয়সী ও পেশার মানুষ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশে এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে নৌকাবাইচে অংশগ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন সাইজের নৌকা তৈরি করা হয়। যেমন ছিপ, কোষা, হরঙ্গা, পানসিসহ নানা জাতের নৌকা। আবার বাইচের অংশগ্রহণ করা নৌকাগুলোর বিভিন্ন নাম দেয়া হয়। যেমন, অগ্রদূত, ঝড়ের পাখি, পঙ্খিরাজ, ময়ূরপঙ্খী, সাইমুন, তুফান মেল, সোনার তরী, দীপরাজ ইত্যাদি। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশে নৌকার মাঝিরা নৌকায় ওঠার কিছুটা সাজগোজ করে নেন। সকলে পাক-পবিত্র হয়ে গেঞ্জি গায়ে মাথায় একই রঙের রুমাল বেঁধে নেয়। সবার মধ্যখানে থাকেন নৌকার নির্দেশক। দাঁড়িয়ে থেকে নৌকা চালান পেছনের মাঝি। প্রতিটি নৌকায় ৭, ২৫, ৫০ বা ১০০ জন বৈঠার মাঝি থাকেন। নৌকায় দু’পাশে মাঝিরা সার বেঁধে বসে পড়ে বৈঠা হাতে। মাঝিদের বৈঠা টানাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য একজন পরিচালক থাকে যাকে বলা হয় গায়েন। সে বসবে নৌকার গলুই-এ।। মাঝিরা একত্রে জয়ধ্বনি সহকারে নৌকা ছেড়ে দিয়েই এক সাথে কোনো একটি গান গাইতে আরম্ভ করে এবং সেই গানের তালের ঝোঁকে ঝোঁকে বৈঠা টানে; যার ফলে কারও বৈঠা পরস্পর ঠোকাঠুকি না-লেগে এক সঙ্গে পানিতে আছর সৃষ্টি করে। গায়েন বা পরিচালক কাঁসির শব্দে এই বৈঠার এবং গানের গতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। অন্য সব নৌকাকে পেছনে ফেলে নিজেদের নৌকাকে সবার আগে যাওয়ার চেষ্টায় প্রয়োজন বোধে কাঁসির শব্দে বৈঠার গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয় এবং সেই সঙ্গে গানের গতিও বেড়ে চলে। এছাড়া এই সময় দেহ ও মনের উত্তেজনার বশেই গানের মধ্যে ‘হেইয়া, হেইয়া’ এই ধরনের শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। এটি সারি গানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই প্রতিযোগিতায় প্রথম দ্বিতীয় ও স্থান অধিকারী নৌকার মালিককে ফ্রিজ, রঙিন টেলিভিশনসহ অন্যান্য পুরস্কার দেয়া হয়। Ñবাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে
×