ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের তেলেসমাতি নিরপরাধ দিনমজুরের হাজতবাস

প্রকাশিত: ০৪:১১, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পুলিশের তেলেসমাতি নিরপরাধ দিনমজুরের হাজতবাস

স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম ॥ পুলিশের তেলেসমাতির কারণে নিরপরাধ দিনমজুর আলম সরদারকে (৫০) করতে হলো চারদিন হাজতবাস। তাই বলে এত বড় ভুল পুলিশ করল কিভাবে, তা নিয়ে চলছে নানা গুনঞ্জন। মামলার সাক্ষীকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হিসাবে চালান করে দেয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিরপরাধ আলমের আকুতি কানে তোলেনি রাজারহাট থানা পুলিশ, কোর্ট পুলিশ এবং আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সবার অবজ্ঞা আর অবহেলার শিকার আলম। কুড়িগ্রাম জজ আদালতের এ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম রাসেল জানান, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার বাইমাইল এলাকায় ইটভঁটিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করত আলম সরদার। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের চকরাটারী গ্রামে। পিতার নাম সফিজ উদ্দিন ব্যাপারী। সম্প্রতি আলম নিজ বাড়িতে বেড়াতে আসে। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজারহাট থানার এএসআই আব্দুল হান্নানের নেতৃত্বে পুলিশ আলমকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হিসাবে গ্রেফতার করে। জয়দেবপুর থানার মামলা নং-০১(৫)০৯ যা পরবর্তীতে গাজিপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জিআর মামলা নং-৪২৭/০৯ এ রূপান্তরিত হয়। এটি একটি মারামারি ও গাছকাটার মামলা। মামলার ধারা-৩২৬/৩০৭/৩২৩/ ৩৭৯দঃবিঃ। মামলার বাদী আব্দুল্লাহ আল মামুন ৭/৮জনকে আসামি করে এ মামলা আনয়ন করেন ২০০৯ সালে। সে মামলায় আলম আসামি তো দূরের কথা সাক্ষীও ছিলেন না। পরবর্তীতে পুলিশ চার্জশীটে সাক্ষী হিসাবে আলমের নাম সম্পৃক্ত করে। মামলার এজাহার ও চার্জশীট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বাদী নয় তদন্তকারী কর্মকর্তা আলমকে সাক্ষী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। গাজীপুর চীফ জুডিশিয়াল আদালত থেকে পাঠানো ওয়ারেন্টপত্রে স্পষ্টভাবে সাক্ষীর কলামে আলমের নাম রয়েছে। তারপরও পুলিশ আলমকে গ্রেফতার করে। যাচাইবাছাই না করে রাজারহাট থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কুড়িগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করে। কুড়িগ্রাম কোর্ট পুলিশও তা খেয়াল করেনি। পরে কুড়িগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একইভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। অথচ নিরপরাধ আলম প্রতিটি ধাপে ধাপে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিচারককে তার আকুতির কথা জানায়। নিজেকে নিরপরাধ দাবি করে। কিন্তু কেউ তার কথা শোনেনি। বৃহস্পতিবার (০৮/০৯/১৬) আদালতে জামিন প্রার্থনা করল তা ‘না’ মঞ্জুর হয়। পরে কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকনের হস্তক্ষেপে সন্ধ্যায় আলম জেল থেকে মুক্তি লাভ করে।
×