ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় ফুটবল দল থেকে সিনিয়রদের সরে দাঁড়ানোর হিড়িক

এবার অবসরে ওয়ালী ফয়সাল!

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এবার অবসরে ওয়ালী ফয়সাল!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মামুনুল ইসলাম আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন অভিমানে, আচমকাই। এবার তার পথেই হাঁটলেন ওয়ালী ফয়সাল। ৩১ বছর বয়সী কৃতী এই লেফট ব্যাক অবসর নেয়া প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে জানান, ‘মালদ্বীপে গিয়ে খেলে এলাম। ঢাকায় ফিরে ভুটান ম্যাচ উপলক্ষে ২৩ জনের চূড়ান্ত দল গঠনের আগে আমাদের মধ্যে একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সেই ম্যাচে অনিচ্ছাকৃতভাবে এক ফুটবলারকে ফাউল করলে কোচ টম সেইন্টফিট আমাকে বসিয়ে দেন। পরে আমাদের কজনকে আলাদা করে বল নিয়ে ‘চোর চোর’ খেলান। ইতোমধ্যেই কোচ ম্যাচ শেষে আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই চলে যান। পরে দলের ফিজিওথেরাপিস্ট সজীব আমাদের জানায়, আমরা যারা চোর চোর খেলছি, তারা নাকি চূড়ান্ত ২৩ জনের দলে নেই। আমরা এতে খুবই অবাক হই। মনস্থ করি বিষয়টির সত্যতা টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে জানব। তারাও একই কথা বলেন। অথচ রাতে হোটেলে খেতে গিয়ে কোচের সঙ্গে দেখা হলে তিনি আন্তরিকভাবেই আমার কুশল জিজ্ঞেস করেন, বরাবরের মতোই কাঁধে হাত দিয়ে হাসি-মশকরা করেন। স্বাভাবিক আচরণ করেন। তিনি তো আমাকে পছন্দই করেন। অতীতের সব কোচের মতো নতুন কোচ তার সঙ্গেও আমার সুসম্পর্ক ছিল। অনেকবারই বলেছেন আমি নাকি ভাল খেলি, আমার খেলা তার পছন্দ। তাহলে আমাকে তিনি কিসের ভিত্তিতে বাদ দিলেন? এটি আমি কিছুতেই মেলাতে পারিনি। তাছাড়া মনে হয়েছে আমার বাদ পড়ার পেছনে কোচ নয়, অন্য কারোর হাত আছে। অথচ আমার জানা মতে জাতীয় দলে বা বাফুফেতে আমার কোন শত্রু নেই। তাহলে? পুরো বিষয়টিই আসলে রহস্যজনক। আমি কি তাহলে কারোর বিষাক্ত নজরের শিকার?’ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘এত বছর ধরে জাতীয় দলে খেললাম। জাতীয় দল আমাকে অনেক দিয়েছে। আজকের ওয়ালী ফয়সাল বানিয়েছে। কিছুটা হলেও সম্মান অর্জন করেছি। ভেবেছিলাম সম্মান নিয়েই জাতীয় দল থেকে অবসর নেব। কিন্তু এভাবে অপমানিত হয়ে, ফর্ম-ফিটনেস থাকার পরও (আরও ৩-৪ বছর অনায়াসেই খেলতে পারতাম) একজন ফিজিওর কাছ থেকে বাদ পড়ার খবর শুনতে হবে, তা কোনদিন কল্পনাও করিনি।’ অবসরের বিষয়টি বাফুফেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানাননি ওয়ালী। তিনি এখন ক্লাব ফুটবলেই বেশি মনোযোগী হতে চান। যদি ১৯ সেপ্টেম্বর টম দেশে ফিরে যদি তাকে ক্যাম্পে ডাকেন, তখন হয়ত অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার নিয়ে ভাববেন বরে জানান। প্রয়োজনে বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গেও দেখা করে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন। ওয়ালীর অবসরে অবাক তার পরিবার, বন্ধু, আত্মীয় এবং ভক্তরাও, ‘দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়ত আমার ভক্তরা ফোন করে আমাকে প্রশ্ন করছে আমি কেন জাতীয় দলে নেই। আমি কাউকেই কোন সুদত্তর দেইনি। সময়ই বলে দেবে আমার পরবর্তী করণীয়।’ ভুটান ম্যাচ নিয়ে ওয়ালীর ভাষ্য, ‘ভুটানের সঙ্গে হোম ম্যাচে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত ছিল। এখন তো ওদের দেশে গিয়ে জেতাটা কঠিন। কেননা খেলা হবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে। অক্সিজেনের ঘাটতি হবে খেলতে গেলে। তারপরও বাংলাদেশ দলের জয়ের জন্য শুভকামনা করি।’ সেই ২০০৫ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলছেন ওয়ালী। দলের অন্যতম সিনিয়র ফুটবলার তিনি। এই ১১ বছরে ২০১১ সাফ ফুটবল এবং ২০১৫ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ছাড়া দলের হয়ে সব আসরেই অংশ নিয়েছেন। ওয়ালী আক্ষেপ করে বরেন, ‘দেশে এখন শিক্ষিত ফুটবলবোদ্ধা বেড়ে গেছে। গোল হজম করলে গোলরক্ষক এবং ডিফেন্ডারদের দোষ, আর গোল করলে ফরোয়ার্ডদের ক্রেডিট। বর্তমানের প্রেক্ষিতে অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট এ্যাটাক। তাই যদি হয়, তাহলে আমাদের ফরোয়ার্ডরা গোল করতে পারে না কেন?’ বাংলাদেশের ফুটবলের ব্রাজিল বলা হয় ঢাকার পাশে শীতলক্ষ্যা নদী তীরবর্তী নারায়ণগঞ্জকে। জাতীয় দলে, ঢাকার শীর্ষ ফুটবল আসরে সব সময়ই দাপট থাকে এ জেলার ফুটবলারদের। ওয়ালী এসেছেন সেই পথ ধরেই। হওয়ার কথা ছিল গায়ক, কিন্তু হয়ে যান ফুটবলার। মামা আবদুল্লাহ্ পারভেজের অনুপ্রেরণায় ফুটবলার হওয়া তার। দ্বিতীয় পেশাদার লীগে সেরা ফুটবলারের মর্যাদাও পেয়েছেন। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় সময় ধরে পেশাদার ফুটবল খেলে যাচ্ছেন তিনি। শুরুটা করেন ওয়ারীর হয়ে, তারপর আবাহনী, মোহামেডান, শেখ জামাল ধানম-ি ও শেখ রাসেলের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে খেলেছেন আবাহনীর হয়ে। এখনও আছেন সেই ক্লাবেই।
×