ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের আগে দেড় লাখ টন লবণ আসছে না

কারসাজি করে লবণ আমদানি বিলম্বিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কারসাজি করে লবণ আমদানি বিলম্বিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে লবণের প্রকৃত অবস্থা এবং লবণ আমদানি নিয়ে কারসাজি শুরু হয়েছে। লবণের সঙ্কট থাকার পরও বিসিক ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে লবণের ঘাটতি নেই বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বিভ্রান্ত করেছে। এতে লবণ আমদানি বিলম্বের কারণে দেশের লবণে দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, লবণ আমদানির বরাদ্দ প্রদানের পরও ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে লবণ আমদানি বিলম্বিত করে ঈদের আগে দেশে লবণ সঙ্কটকে জিইয়ে রেখেছে। ফলে ঈদের আগে আর দেড় লাখ টন লবণ আসছে না। বিসিক বলছে, দেশে লবণের কোন সঙ্কট নেই। শুধু সঙ্কটের কথা বলেই সরকারী এই সংস্থাটি ক্ষান্ত থাকেনি, আরও একধাপ বেড়ে ফাঁকা বুলির মতো হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছে। বলেছে, অযৌক্তিকভাবে লবণের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অথচ ব্যবসায়ীরা বিসিককে থোরাই কেয়ার করে এই হুঁশিয়ারির আগেই খাবার এবং শিল্প উভয় প্রকার লবণের দাম প্রায় দ্বিগুণ করে নিয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা কখনও চেষ্টার মধ্যে থাকেনি। তারা দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট থেকে বাড়তি অর্থও হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই বাড়তি মূল্যের সপক্ষে তারা দেশে লবণ সঙ্কটের কথাই বার বার বলেছে। যদি সঙ্কটই না থাকবে তবে লবণের দাম বাড়ল কেন? যদি সঙ্কট না থাকে তাহলে বলতে হবে, বিসিকের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কৃত্তিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বাজারে লবণের দাম বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হুঁশিয়ারির জবাবে লবণ মিল মালিকরা বলছেন, লবণের সঙ্কট হয়েছে। এ কারণেই লবণের দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয়, লবণ উৎপাদন ও চাহিদার সরকারী হিসেবের মধ্যে গরমিল আছে বলে মিল মালিকরা দাবি করছেন। তারা বলছেন, লবণের প্রকৃত চাহিদা বিসিকের হিসাবের চেয়েও অনেক বেশি। এ কারণেই লবণের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তারা আরও বলছেন, ঈদের আগে এই সঙ্কটের সমাধান হবে না। কারণ বিসিকের বিভ্রান্তির কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণ আমদানির বরাদ্দ দিতে দেরি করেছে। ফলে আমদানির অপেক্ষায় থাকা দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ ঈদের আগে আর কোনভাবেই দেশে পৌঁছছে না। এমন অবস্থায় চামড়ায় ব্যবহার্য লবণের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চামড়া শিল্প মালিকরা। ব্যবসায়ীদের ভাষায়, চামড়ার প্রাণ লবণ। কেননা, পশুর চামড়া ছাড়ানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লবণ না দিলে তাতে হয় ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পচন ধরে, চামড়া হারায় অর্থনৈতিক মূল্য। কোরবানির সময় চাহিদা বেশি থাকায়, লবণের দাম বাড়িয়ে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এরই মধ্যে চামড়ায় ব্যবহৃত লবণের দাম বস্তা প্রতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ১২শ’ টাকায়। বিসিকের চেয়ারম্যান হযরত আলী একটি সংবাদ চ্যানেলকে জানিয়েছেন, উৎপাদনের তুলনায় দেড় লাখ টন লবণের ঘাটতি পূরণে এরই মধ্যে আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাই ঈদে ঘাটতি বা সঙ্কটের কোন সুযোগ নেই। তবে এর সাথে একমত নন লবণ ব্যবসায়ীরা। লবণ ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানির জন্য ৪ সেপ্টেম্বর ছিল এলসি খোলার শেষ দিন। তাই আমদানির অপেক্ষায় থাকা লবণ ঈদের আগে কোনভাবেই দেশে পৌঁছবে না। বিসিক বলছে, আমদানি নির্ভর করছে ব্যবসায়ীদের ওপরই। তবে, ব্যবসায়ীরা চান অযৌক্তিকভাবে যেন লবণের দাম না বাড়ানো হয় সে ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা নেবে। আমদানির সময় বিদেশী মানহীন লবণ যেন দেশে না ঢোকে সে ব্যাপারেও বাড়াতে হবে নজরদারি।
×