ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে ॥ শাহরিয়ার কবির

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে ॥ শাহরিয়ার কবির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধীদের ৬টি রায় কার্যকর হওয়া বড় প্রাপ্তি কিন্তু তাদের আদর্শ ধ্বংস হয়ে যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, তারা কিন্তু আমাদের মতাদর্শের নয়। এদেরকে প্রথম শ্রেণীর নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হবে। এদেশে থাকতে হলে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বসবাস করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করতে সারা দেশে বড় রকমের দাবি উঠেছে। এদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করতে আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে পর্যালোচনা চলছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে, তা সরানোর ব্যাপারে জনগণের মতকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ধানম-ি ডব্লুভিএ মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘৭১-এর গণহত্যা থেকে গুলশান হত্যাকা- : ঘাতকদের বিচার বিঘিœতকরণের চক্রান্ত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তার এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের প্রামাণ্যচিত্র ‘জার্নি টু জাস্টিস’Ñএর বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে ’৭১ থেকে বর্তমান বাংলাদেশের সামগ্রিক চিত্র উঠে আসে। একাত্তরের গণহত্যার ঘটনা ছাড়াও জাতির পিতার হত্যাকা-ে শোকে মুহ্যমান মুখ থুবড়ে পড়া বাংলাদেশ, অপশক্তির ক্ষমতাদখল ও তাদের উত্থান, সংগঠন হিসেবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠা ও দীর্ঘ সময়ে তাদের পথচলা, যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক মনোভাবের তথ্যও উঠে আসে ওই প্রামাণ্যচিত্রে। পরে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, নির্মূল কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শহীদজায়া পান্না কায়সার, নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, প্রজন্ম ’৭১-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শহীদপুত্র তানভীর হয়দার চৌধুরী শোভন। এ সময় যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তারা আমাদের মতো নির্দোষ নয়। তারা নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরে জনগণের মতকে প্রাধান্য দেয়া হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, আজ অত্যন্ত স্বস্তিতে বলতে পারি ৬টি রায় কার্যকর হয়েছে। এই বিচার চলবে। যে স্থানে এই বিচার শুরু হয়েছে সে স্থান ইতিহাসের একটা অংশ হয়ে গেছে। আমার বিনয় আমি দেখিয়ে যাব। তবে আমাদের দাবি থাকবে। এক্ষেত্রে জনগণ যা চায়, তা-ই হবে। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াফের বিষয়ে নতুন আইন প্রণয়নের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ কীভাবে শহীদ পরিবার এবং সাধারণ জনগণের উপকারে আসে, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু রচিত সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষায় সব সময় সচেষ্ট রয়েছেন জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আদালতের পারমিশন নিয়ে আমরা কি মুক্তিযুদ্ধ করেছি? আদালতের রায় অনুযায়ী সংসদ চালাই নাকি? মন্ত্রিত্ব না থাকলে না থাকবে, বাইচান্স মন্ত্রী হয়েছি। আমার কাছে যে লক্ষ্য তা বঙ্গবন্ধুর পবিত্র সংবিধান রক্ষা করা। সংবিধানের মর্যাদা সমুন্নত রাখা। পাকিস্তানের সংবিধান শুধু লঙ্ঘন করিনিÑ লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু রচিত সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারি নাÑ সেটা রক্ষা করা, তার পবিত্রতা সমুন্নত রাখতে দায়িত্ব পালনে সব সময় সচেষ্ট রয়েছি। সংসদ ভবন সংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মাজার সরানো প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, জিয়াউর রহমানের লাশে ছবি দেখতে চাই। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার লাশের ডিএনএ টেস্ট করার দাবি জানাই। যদি ডিএনএ টেস্টে জিয়ার লাশের কোন চিহ্ন পাওয়া না যায়, তাহলে সেখান থেকে মাজার সরিয়ে নিতে হবে। আর যদি ডিএনএ টেস্টে জিয়ার কোন চিহ্ন পাওয়া যায় তাহলে নাকে খত দিয়ে পুরো জাতির কাছে ক্ষমা চাইব। তিনি আরও বলেন, শাহবাগের শিশুপার্ক আর থাকছে না। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিকভাবে প্ল্যান তৈরি হয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানেরা সরকারী চাকরির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানেরা প্রথম শ্রেণীর নাগরিক থাকতে পারে না। তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে থাকবে। সরকারী চাকরি করার কোন অধিকার তারা পাবে না। সোহাগপল্লীর বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর করে দেয়া হবে ঘোষণা দিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, সামনের মাসের শেষের দিকে আমরা সোহাগপল্লী যাচ্ছি। তাদের ঘর করে দেয়া হবে। বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর করে দেব। এ সময় তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট প্রতিরোধেও কাজ করছেন বলে জানান। সূূচনা বক্তব্যে লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, সোহাগপুরের নারীদের আর্তি বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে হবে। যারা বীরাঙ্গনা আছেন দ্রুত সময়ে তাদের সম্মাননা প্রদান করতে হবে। গণগত্যার নারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পাকিস্তানকেও ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করতে হবে। শাহরিয়ার কবিরের প্রামাণ্যচিত্রগুলো বিটিভিতে প্রচার করার ব্যবস্থা করতে তথ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, প্রামাণ্যচিত্রগুলোতে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। আমরা যতই কাজ করছি তার কিন্তু সব কাজে আসছে না। শাহরিয়ার কবিরের প্রামাণ্যচিত্রগুলো বিটিভিতে প্রদর্শনের জন্য তথ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি বলেছেন, অবশ্যই। কিন্তু সেই অবশ্যই কি ১৮ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবে? দ্রুত সময়ে তথ্যগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে এই প্রামাণ্যচিত্রগুলো প্রচারের ব্যবস্থা করুন।
×