ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হোতা সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তা

জালনোট চক্রের পাঁচ সদস্য গ্রেফতার ॥ কোটি টাকা উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জালনোট চক্রের পাঁচ সদস্য গ্রেফতার ॥ কোটি টাকা উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ র‌্যাবের অভিযানে দুর্নীতির দায়ে অগ্রণী ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত এক কর্মকর্তা ও দুই নারী জালটাকা প্রস্তুতকারীসহ ঐ চক্রের পাঁচ সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে এক কোটি টাকার জালনোট। চক্রটি ইতোমধ্যেই প্রায় এক কোটি টাকার জালনোট বাজারে ছেড়েছে। আরও দুই কোটি টাকার জালনোট বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল। যদিও প্রতিবছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর হাট ও শপিংমলগুলো প্রচুর জালনোট শনাক্তকারী মেশিন বসানো হয়েছে। এসব জালটাকা ছেপে বাজারে ছেড়ে তেমন লাভ হবে না। কারণ বাজারে যাওয়ার পর তা ধরা পড়তে বাধ্য বলে জানানো হয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে। বুধবার রাতে রাজধানীর রামপুরা থানাধীন বনশ্রী ও জুরাইনে অভিযান চালায় র‌্যাব-১ এর একটি দল। অভিযানে দক্ষিণ বনশ্রীর ১০/৪ নম্বর সড়কের এফ/৭৭ নম্বর বাড়ি থেকে দুই স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২৫) ও রুবিনা বেগম (২৪) গ্রেফতার হয়। তাদের স্বামীর নাম আব্দুর রহিম। গ্রেফতারকৃতদের বাড়ি পিরোজপুর জেলা সদরের সিকদার মল্লিকপাড়ায়। দুই নারীর বেডরুমে আবিষ্কৃত হয় ছোটখাটো জালটাকার কারখানা। কারখানা থেকে ৫শ’ ও এক হাজার টাকার নোটের ৭৮ লাখ টাকার জালনোট ও জালনোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে, জালটাকা তৈরি ও বাজারজাত করার সঙ্গে জড়িত অগ্রণী ব্যাংকের চাকরিচ্যূত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশিদ (৫৬) গ্রেফতার হয়। তার পিতার নাম মৃত মোকাররম আলী। বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানাধীন বারপাকিয়ার পাহাড়পুর গ্রামে। আব্দুর রশিদের তথ্যমতে, শ্যামপুর থানাধীন জুরাইনের খন্দকার রোডের একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয় মোঃ দুলাল (৩০) নামে আরও এক জালনোট প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ২৩ লাখ জালটাকা ও জালটাকা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম। তার পিতার নাম সেকান্দর মৃধা। বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানাধীন নমালা গ্রামে। গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে, কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হয় চক্রের অপর সদস্য মোঃ সারোয়ার হোসেন (২৩)। এর কাছ থেকে ২ লাখ জালটাকা ও প্রায় ২৪ হাজার আসল টাকাসহ জালটাকা তৈরির নানা উপকরণ উদ্ধার হয়। সারোয়ারের পিতার নাম আব্দুল গনি তালুকদার। বাড়ি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানাধীন উত্তমপুর গ্রামে। বৃহস্পতিবার র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রতি বছরই ঈদের সময় কোরবানির পশুর হাটকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে ওঠে জালটাকার কারবারি চক্র। চক্রগুলো জালটাকা তৈরি করে নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে ছাড়ে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আব্দুর রশিদ অগ্রণী ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার পদে চাকরি করেছেন। ১৯৯৫-৯৬ সালে দুর্নীতির দায়ে তিনি চাকরিচ্যুত হন। কারাগারে থাকাকালে তার সঙ্গে নুরুজ্জামান নামের এক জালনোট কারবারির পরিচয় হয়। দুই বছর জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসেন আব্দুর রশিদ। এরপর তিনি কাঁটাবনে প্রেসের ব্যবসা শুরু করেন। সেখানে পুরনো পরিচয়ের সূত্রধরে নুরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে ছাপাখানাটিতে প্রথম ভারতীয় জালরুপী ছাপতেন। নুরুজ্জামানের মাধ্যমে তিনি টাকা ছাপানোর কাগজ ও নিরাপত্তা সুতা আমদানি করতেন। পরবর্তীতে তারা দু’জনে মিলে প্রেসেই ছাপতে থাকেন জালনোট। র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, আব্দুর রশিদ প্রায় ১৫ বছর ধরে জালনোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অথচ মাত্র একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। ছাপাকৃত জালনোট নিজস্ব চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে বাজারজাত করতেন। পরবর্তীতে আব্দুর রশিদ প্রিন্টিং প্রেস বিক্রি করে দেন। এরপর থেকেই গোপনে বিভিন্ন জায়গায় ছাপাখানা বসিয়ে জালটাকা ছাপানোর কাজ করছিলেন। উদ্ধারকৃত জালটাকাগুলো এতটাই নিখুঁত যে, সহজে ধরা যায় না। দেখে বোঝার উপায় নেই, কোনটি আসল আর কোনটি নকল। নিরাপত্তা সুতায় বঙ্গবন্ধুর ছবির জলছাপও আছে। টাকার পাশের লেখাগুলোও অমসৃণ। যা আসল টাকায় থাকে। ঈদ উপলক্ষে তারা বিপুল পরিমাণ জালনোট ছাপাচ্ছিল এবং সরবরাহ করে আসছিল। ঈদকে সামনে রেখে তারা ইতোমধ্যেই কোটি টাকার বেশি জালনোট বাজারজাত করেছে। আরও দুই কোটি টাকার জালনোট বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল। গ্রেফতারকৃত ফাতেমা ও রুবিনার বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, তাদের স্বামী আব্দুর রহিম আগে জালটাকার ব্যবসা করত। তারা র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিল। জামিনে বেরিয়ে দুই স্ত্রী আবারও একই কাজে যুক্ত হয়। তবে আব্দুর রহিম এখনও জেলে। স্বামীর কাছ থেকেই দুই স্ত্রী জালটাকা বানানোর কৌশল শিখেছে। রহিম নিখুঁত জালটাকা তৈরির জন্য জালটাকার কারবারিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×