ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘জিয়া আর্মি রুলস ভঙ্গকারী অবৈধ দখলদার রাষ্ট্রপতি’

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘জিয়া আর্মি রুলস ভঙ্গকারী অবৈধ দখলদার  রাষ্ট্রপতি’

বিকাশ দত্ত ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জের রায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘একজন আর্মি রুলস ভঙ্গকারী অবৈধ দখলদার রাষ্ট্রপতি’ বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল। রায়ে তিনি বলেছেন, প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গং দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা সত্ত্বেও অস্ত্র এবং অবৈধ কলমের খোঁচায় নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে ভেঙ্গে ডাকাতদের মতো জোরপূর্বক জনগণের ক্ষমতা ডাকাতি করে দখল করে। যে বিচার বিভাগ এবং এর বিচারকদের ওপর আইনগত দায়িত্ব ছিল সংবিধান সামান্যতম বিচ্যুতকে রক্ষা, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রদান করা সেই বিচার বিভাগ এবং এর তৎকালীন বিচারকরা এক কথায় সংবিধান হত্যা করলেন, জনগণের রায় ডাকাতি করে জনগণের নির্বাচিত সংসদকে বাতিল করলেন। অপরদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান নিজে সরকারী কর্মচারী হয়েও আর্মি রুলস ভঙ্গ করে জনগণের রায়ে নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে হত্যা করে, দেশের সংবিধানকে হত্যা করে অস্ত্রের মুখে অন্যায়ভাবে, অসৎভাবে, হত্যাকারীদের দোসর হয়ে, জনগণকে চরম অবজ্ঞা করে ক্ষমতা দখল করেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও জেনারেল জিয়া মুক্তিযুদ্ধেরবিরোধী তথা স্বাধীনতাবিরেধী রাজাকার, আলবদর,আলশামস এবং জামায়াতে ইসলামীকে এ দেশে পুনর্বাসন করেন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে দ্বিমত পোষণকারী বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল এমন কথা বলেছেন। ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দুই বিচারপতির দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ১১ আগস্ট সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। বৃহস্পতিবার অবৈধ রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারী বিচারপতি আশরাফুল কামালের রায় প্রকাশ পায়। গত ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ রায় ঘোষণা করে। এতে বিচারপতি আশরাফুল কামাল ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি ১২৫ পৃষ্ঠার এই রায়টি বাংলায় লিখেছেন। রায়ে তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সংসদ সদস্য করেন এবং তাদের মন্ত্রী বানিয়ে, তাদের গাড়িতে পতাকা দিয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে এবং দ্ইু লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। এর পরেও কি বাংলাদেশের জনগণ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা বলতে পারে? জিয়াউর রহমান শুধু জাতির পিতা ও তার পরিবারের এবং জাতীয় চার নেতা হত্যাকারীদের দোসরই হননি,বরং তিনি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছেন রাষ্ট্রদূত,সংসদ সদস্য ইত্যাদি বানিয়ে। তিনি আরও জঘন্য কাজটি করেন তা হলে তিনি জনগণের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের বিচার বন্ধ করে দায়মুক্তি আইন প্রণয়ন করেন। অর্থাৎ তিনি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকে এই দায়মুক্তি আইন দ্বারা সমর্থন দিয়ে প্রমাণ করেন তিনিও জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারী এবং জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদেরই একজন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, আবু সাদাত সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়া জাতীয় চার নেতা হত্যাকারীদের সাহায্য-সহযোগিতা এবং লালন-পালন করেছেন; বাঙালী জাতি তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে। এবং এদের পদ-পদবি সকল কিছু প্রত্যাহার এখন সময়ের দাবি। তাই মহান জাতীয় সংসদকে এমন দৃষ্টান্তমূলক আইন প্রণয়ন করতে হবে যে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন জঘন্য অপরাধের চিন্তাও কারও মনে উদয় না হয়। যারা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং যারা আমাদের পবিত্র সংবিধানকে তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের জন্য ইচ্ছেমতো তছনছ করে, সংবিধানকে সামরিক ফরমানের নিচে স্থান দেয়Ñএই ধরনের ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরী। জাতীয় সংসদ এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবে বলে আমি আশা করি। জাতীয় সংসদ কর্তৃক উপরে উল্লিখিত আইনটি প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত আপাতত একটি ঘৃণা চত্বর স্থাপন করা জরুরী। যেখানে গিয়ে সাধারণ জনগণ ঐসব ব্যক্তির প্রতি তাদের ঘৃণা প্রকাশ করে আসতে পারবে। একমাত্র তা হলেই ভবিষ্যতে আর কেউ প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের মতো ঘৃণ্য কাজ করার সাহস পাবে না। রায়ে আরও বলা হয়, জনগণ অবাক হয়ে দেখে,হালিমা খাতুন বনাম বাংলাদেশ গং{৩০ ডিএর আর (এসসি) ১৯৭৮ পাতা ২০৭} মামলায় সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি ফজলে মুনিম সংবিধানকে প্রক্ল্যামেশনের তথা সামরিক ফরমানের নিচে স্থান দেন তথা ‘সংবিধানকে “সামরিক ফরমান এবং আদেশের নিচে মর্মে ঘোষণা করেন । যাকে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ঐতিহাসিক সিদ্দিক আহম্মেদ বনাম বাংলাদেশ সরকার “{সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন ১৯৮৬} মামলায় বলেছেন ংবফরঃরড়ঁং”। রায়ে আরও বলা হয়, আমাদের আপীল বিভাগ জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত অষ্টম সংশোধন আইনকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী বলে ঘোষণা করে আইনটি অসাংবিধানিক মর্মে ঘোষণা ও বাতিল করেন। সেখানে একজন সরকারী কর্মচারী যিনি আর্মি রুলস ভঙ্গ করে বেআইনী এবং অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি পদ দখল করেছিলেন (মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান), তিনি তার একক ইচ্ছায় সংবিধানের মূল কাঠামো এবং সংবিধানের স্বকীয়তা ভঙ্গ করে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংবলিত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬টি রাতের আঁধারে প্রণয়ন করেন, সে ব্যাপারে তৎকালীন আপীল বিভাগ উক্ত সুপীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংবলিত ৯৬ অনুচ্ছেদ অসাংবিধানিক এবং বাতিল মর্মে ঘোষণা করতে পারেনি। আইনের শাসন গণতন্ত্রের অন্যতম মুখ্য শর্ত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব হবে যখন রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ সংবিধান মোতাবেক নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে থেকে যার যার দায়িত্ব সঠিক এবং ন্যায়ানুগভাবে পালন করবে। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? আমরা দেখলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংবিধানসম্মত দেশের জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে তথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একদল চাকরিচ্যুত প্রাক্তন সামরিক বাহিনীর লোক যখন সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে তখন আমাদের সুপ্রীমকোর্ট নীরবে সেই হত্যাকা- অবলোকন করে। আমাদের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল সুপ্রীমকোর্টকে আমরা সেদিন কোন রুল ইস্যু করতে দেখিনি। বরং আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখি যিনি সংবিধান রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করবেন বলে শপথ গ্রহণ করেছিলেন সেই বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তার শপথ ভঙ্গ করে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সহযোগী হয়ে ঐ দিন তথা ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সন্ধ্যা ছয়টায় বেআইনীভাবে, অসাংবিধানিক-ভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ দখল করেন। এবং আমরা আরও দেখি কিভাবে একটি দেশের প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম খুনীদের দোসর হয়ে সংবিধান প্রদত্ত তার দায়দায়িত্ব পালন না করে অবৈধভাবে সংবিধানকে পদদলিত করে দেশের রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন এবং তার চেয়েও জঘন্যভাবে দেশের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে বাতিল করেন। এরা জাতীয় শত্রু তথা রাষ্ট্রদ্রোহী তথা জনগণের রায় হত্যাকারী। এদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। আশা করি, সে ব্যাপারে জাতীয় সংসদ প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করবে। বাংলাদেশের প্রতিটি বাঙালী এদের ঘৃণাভরে স্মরণ করবে। বিচারপতি আশরাফুল কামাল তার রায়ে আরও উল্লেখ করেন,১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পরবর্তী প্রতিটি সাংবিধানিক সঙ্কটে আমাদের তৎকালীন সুপ্রীমকোর্ট তার সাংবিধানিক দায়দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সুপ্রীমকোর্ট সেসব সাংবিধানিক ক্রান্তিলগ্নে সংবিধান তথা দেশকে রক্ষা করতে পারেনি। অথচ এদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্র নেতৃবৃন্দ ,শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এদেশের বীর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক সঙ্কট এবং সাংবিধানিক সঙ্কটে রক্ত দিয়ে এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে সঙ্কট মুক্ত করে পুনরায় দেশকে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় ফিরিয়ে এনেছে। রায়ে আরও বলা হয়, যেহেতু অভিজ্ঞ বিচারকের সঙ্কট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছ, সেহেতু আমি মনে করি সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়স ৭৫ বছরে উন্নীত করা একান্তভাবে প্রয়োজন এবং অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সেই লক্ষ্যে আমি মহান জাতীয় সংসদের নিকট সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছদের (১) উপধারা সংশোধনপূর্বক বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়স ৬৭ এর স্থলে ৭৫ করার প্রস্তাব করছি। দ্বিমত পোষণকারী বিচারপতি তার রায়ে বলেন, সুপ্রীমকোর্টের আইনগত একজন আর্মি রুলস ভঙ্গকারী অবৈধ দখলদার রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্তৃক তার একক খেয়াল-খুশি মোতাবেক সংবিধান সংশোধন করে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক বিচারক অপসারণ প্রক্রিয়া সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্তকরণ সংক্রান্তে সামরিক ফরমান উপড়ে ফেলা তথা অবৈধ এবং অসাংবিধানিক মর্মে ঘোষণা করে বাতিল করা, যা আমাদের তৎকালীন সুপ্রীমকোর্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সুপ্রীমকোর্টেকে সেই লজ্জা থেকে তথা কলঙ্কমুক্ত করেছেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তার পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ের মাধ্যমে ২০০৫ সালে। পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে আমাদের আপীল বিভাগ ২৯-৩-২০১১ সিভিল রিভিউ দরখাস্ত নং ১৭-১৮/২০১১এর রায়ে কফিনের শেষ পেরেকটি ঠুকে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংবলিত ৯৬ অনুচ্ছেদটি কবরস্থ করেন। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে আমাদের জাতীয় সংসদ সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) আইন ২০১৪ (২০১৪ সালের ১৩ নং আইন) প্রণয়ন করে আমাদের সংবিধানকে কলঙ্কমুক্ত করেন। বিচার বিভাগের সত্যিকার স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ত্রিশ লাখ বাঙালীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের অর্জিত সংবিধানকে আমরা ফেরৎ পেলাম। সে কারণে আমি বর্তমান জাতীয় সংসদকে বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অর্থাৎ দরখাস্তকারী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে, সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) আইন, ২০১৪ আইনটি সংবিধানের বিধানাবলীর সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথা অসাংবিধানিক। গত ১১ আগস্ট দুই বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর অপর বিচারপতির রায় প্রকাশ হলে একসঙ্গে দেখে এই রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপীলের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নবেম্বর সুপ্রীমকোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৯ নবেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। গত বছরের ১০ মার্চ এ রুলের শুনানি শেষে ৫ মে রায় দেয় হাইকোর্ট। এর মধ্যে ২৫ এপ্রিল অসদাচরণের জন্য সুপ্রীমকোর্টের কোন বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এছাড়া এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানি করেছেন শীর্ষ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি। ১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে। মার্শাল প্রক্ল্যামেশনে করা পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া হয় সংসদকে।
×