ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কৃষ্ণার টাঙ্গাইলে আনন্দের বন্যা, সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কৃষ্ণার টাঙ্গাইলে আনন্দের বন্যা, সংবর্ধনা

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ এএফসি মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকারের গ্রামে আনন্দের বন্যা বইছে। দেশের মুখ উজ্জ্বল করা এসব মেয়েদের পরিবারে এখন ঈদ ও দুর্গা পূজার অগ্রিম আনন্দ বইছে। মঙ্গলবার বিকেলে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের কৃতী এই মহিলা ফুটবলারকে সংবর্ধনা দিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। খুবই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কৃষ্ণাকে নিয়ে এখন আনন্দের সীমা নেই সহপাঠী ও শিক্ষকদের। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার অজপাড়া পাথালিয়া গ্রামে জন্ম কৃষ্ণা রানীর। দরিদ্র পরিবার হওয়ায় ঠিকমতো লেখাপড়ার খরচও চালাতে পারে না তার বাবা-মা। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবলে স্কুল পর্যায়ে ভাল খেলায় শিক্ষকদের নজরে পড়লে স্থানীয় সুতি ভি এম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয় তার। এখানে খেলাধুলার আর লেখাপড়া চলে একসঙ্গে। মেয়ের এমন সাফল্যে শুধু খুশিই নন, দেশের সর্বোচ্চ সফলতা এনে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও সফলতা কামনা করেছেন কৃষ্ণার মা ও গ্রামবাসী। অধিনায়ক কৃষ্ণা রানীর মা নমিতা রানী সরকার বলেন, গ্রামের মানুষ আগে কৃষ্ণা ফুটবল খেলত বলে আজেবাজে কথা বলত। আমারও খারাপ লাগত ছেলেদের খেলা কেন আমার মেয়ে খেলবে। এজন্য আমি একদিন ওর ফুটবল বটি দিয়ে কুটিয়ে কেটে ফেলেছিলাম। তারপরেও আমার মেয়ে দমে যায়নি। কিন্তু ওর সাফল্যে এখন আমি অনেক খুশি। গর্ব অনুভব করছি। এমন সাফল্যে সুতি ভিএম বিদ্যালয়েও আনন্দের সীমা নেই। স্কুলের এই মাঠেই প্রশিক্ষণ পেয়ে কৃষ্ণাসহ অন্যরা দেশের হয়ে লড়াই করে সফলতা ছিনিয়ে এনেছে। বয়সভিত্তিক খেলায় অধিনায়ক কৃষ্ণা ছাড়াও আরও পাঁচ ছাত্রী খেলার সুযোগ পেয়েছে। অধিনায়ক কৃষ্ণা, জোৎস্না ও রুমার সাফল্যের পেছনের কথাও জানান তাদের স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক ও বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৬ নারী ফুটবল দলের সফল কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের ছোট ভাই গোপালপুর সুতি ভিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ফুটবল কোচ ও ক্রীড়া শিক্ষক গোলাম রায়হান বাপন। তিনি বলেন, আমার ছাত্রী কৃষ্ণাসহ অন্যদের সাফল্যে আমি গর্বিত। আমি বিশ্বাস করি সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত রাখবে তারা। দেশের মুখ উজ্জ্বল করে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে এসে পৌঁছালে কৃষ্ণা রানী ও তার সতীর্থদের সংবর্ধনা দেয়া হয় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এ সময় কৃষ্ণা বলেন, এখন আমার একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশকে নারী ফুটবলে উচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়া। আমার মতো যেন অনেক খেলোয়াড় তৈরি হয় সেই আবেদন থাকবে সরকারের কাছে। এই সাফল্য শুধু টাঙ্গাইলের গোপালপুর নয়, সারাদেশই গর্ববোধ করছে বলে জানালেন গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী তালুকদার। তিনি আরও বলেন, দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী মেয়েদের খেলাধুলার জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। তারই ফল বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমুর রহমান বলেন, সরকারের নির্দেশে প্রতিবছর স্কুলগুলোতে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সফলতার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ কারণে কৃষ্ণাসহ অনেক প্রতিভাময়ী মহিলা ফুটবল খেলোয়ার বের হয়ে আসছে। নারী ফুটবলে এই সফলতা ধরে রাখতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন তথা সরকারের খেলোয়ারদের প্রতি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি আর্থিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ানোই এখন একমাত্র কাজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
×