ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১২ রেলকর্মী ৯ মাস বেতন বঞ্চিত ॥ ঈদ আনন্দ মাটি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

১২ রেলকর্মী ৯ মাস বেতন বঞ্চিত ॥ ঈদ আনন্দ মাটি

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় মানতে নারাজ রেলের মহাপরিচালক। ফলে আদালতের আদেশকে আমলে নিয়ে ১২ কর্মচারীর ৯ মাসের বেতন পরিশোধ করে পদোন্নতি নিয়মিতকরণের নির্দেশনা পূর্বাঞ্চলীয় জিএম’র দফতর থেকে দেয়া হলেও কার্যকর হয়নি গত ১ সপ্তাহেও। ফলে গত রমজান ও আসন্ন কোরবানির ঈদও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ করার আর্থিক সামর্থ্য নেই এসব কর্মচারীর। অভিযোগ রয়েছে, সরকারী নিয়োগবিধিমালা উপেক্ষা করে ডিজি’র নির্দেশে স্থায়ী পদে কর্মরতদের নিয়মিত বেতন বন্ধ রাখার মতো ঘটনা ঘটেছে রেলের পূর্বাঞ্চলে। ফলে প্রধানমন্ত্রীসহ রেলমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১, এর আদালত সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ শামীম শাহরিয়ারসহ ১২ জন সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গত ২৬ মে। প্রতিপক্ষগণকে ৪ দফায় সময় মঞ্জুর করে লিখিত কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল কিন্তু এই মামলায় রেলের পক্ষের কৌঁসুলি আদৌ কোন যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে আদালতের বিচারক ও সিনিয়র জেলা জজ এ.আর.মাছউদ এই ১২ কর্মচারীকে এসএই (এস) এর অনুকূলে প্রাপ্য বেতন ভাতাদি পরিশোধের আদেশ প্রদান করেন। পূর্বাঞ্চলীয় অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, আদালতের এই আদেশের প্রেক্ষিতে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এফ এ এন্ড সিএও/পূর্ব বরাবর এক শ’টি চিঠি প্রেরণ করেছে গত ২৪ আগস্ট। এই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, দফতরাদেশ নং-৫১৩/ই/১/৬৭-পার্ট-৫(এস, তারিখ-১৫ নবেম্বর ২০১৫ তারিখে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ১২জন এসএই(এস) এর অনুকূলে তাদের প্রাপ্য স্কেলে নবেম্বর/২০১৫ ইং মাসের বিভিন্ন ভাতা পরিশোধ করা হলেও ডিসেম্বর/২০১৫ থেকে এসব কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে না। আদালতে মামলার প্রেক্ষিতে ও আদালতের আদেশ অনুযায়ী প্রাপ্য স্কেলে বেতন ভাতাদি পরিশোধের জন্য অনুরোধ করা হয়। অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে আরও ৮টি দফতরে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৪ আগস্ট আরেকটি চিঠি প্রেরণ করা হয় সহকারী মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেনের দফতর থেকে। এই চিঠিতেও আদালতের আদেশ অনুযায়ী এই ১২ জনের বেতন পরিশোধের নির্দেশনা দেয়া হয়। এই চিঠির প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে এফ এ এ্যান্ড সিএও/পূর্ব এর দফতর থেকে বেতন পরিশোধের অনুমতি চেয়ে ডিজির দফতরে আরেকটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, পদোন্নতি পাওয়া এই ১২ কর্মচারীর বেতন বন্ধে নির্দেশ দিয়েছিলেন রেলের ডিজি আমজাদ হোসেন। এ ছাড়াও এডিজি (আরএস) সামছুজ্জামান, ডাইরেক্টর (এসটাবলিশমেন্ট) প্রদীপ কুমার সাহা, এডিজি(ফিন্যান্স) আবিদ হোসেন ও ডাইরেক্টর মেকানিক্যাল তাবাসসুম বিনতে ইসলাম আদালতের এই আদেশের বিরোধিতা করছেন। আদালতের আদেশ অমান্যের অন্যতম কারণ হলো ডিজি এই আদেশ কার্যকর করার পক্ষে নয়। কারণ, গত ২দিন আগেও ডিজির নির্দেশে ডাইরেক্টর (এস্টাবলিশমেন্ট) প্রদীপ কুমার ১২ কর্মচারী বেতন পরিশোধের বিপক্ষে লিখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ার পরও এডিজি (আরএস) এবং এডিজি (ফিন্যান্স) এর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মহাপরিচালকের (ডিজি) দফতরের মেকানিক্যাল বিভাগের তৎকালীন উপ-পরিচালক তাবাসসুম বিনতে ইসলামের এক আদেশের কারণে পূর্বাঞ্চলীয় স্টোর বিভাগে কর্মরত ১২ জনের বেতন ৯ মাস বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবৈধভাবে এ ধরনের হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাবর চিঠি চালাচালি হলেও কোন সুরাহা পায়নি ভুক্তভোগী এসব কর্মচারী। এদিকে, চলতি বছরের শুরু থেকেই উর্ধতন ওই কর্মকর্তার চিঠির কারণে ভুক্তভোগী কর্মচারীরা ছেলেমেয়েদের স্কুলের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি অন্ন যোগানের শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ডাইরেক্টর মেকানিক্যাল তাবাসসুম বিনতে ইসলাম জানান, ফাইলটি বর্তমানে এস্টাবলিশমেন্টে আছে। ১২ কর্মচারীর বেতন বন্ধ রাখা ও সৈয়দপুরে ২ কর্মচারীর বেতন চলমান থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটিতেও গোলমাল আছে। আদালতে ৪ দফায় সময় প্রার্থনা ও কাগজপত্র জমা দিতে না পারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মামলায় আমি একা নই। সকলের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এ ব্যাপারে ডাইরেক্টর (এস্টাবলিশমেন্ট) প্রদীপ কুমার সাহা জানান, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে জানা যাবে। আদালতের আদেশ মানা প্রসঙ্গে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। তবে এ বিষয়ে ডিজি আমজাদ হোসেনের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
×