স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ পানির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে ভবদহ অঞ্চলের তিন লাখ মানুষ। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। মাঠের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নিয়েছে এই পানি। আশ্রয়হীন মানুষ নিজের ঘরবসতি ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছে রাস্তায়। একটি স্ক্যাভেটর দিয়ে মনিরামপুরে ড্রেজিং করার ফলে সেখানে ধীরে ধীরে পানি সরলেও অন্য দুই উপজেলার অবস্থা আগের মতোই।
এতে ঈদ-উল আযহা পালন করা হবে না জলাবদ্ধতার কবলে পড়া মানুষদের।
অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নামছে না। বৃষ্টি হলেই এলাকার বিলগুলো উপচে ভবদহ অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ তলিয়ে যায়। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয় ওইসব অঞ্চলের মানুষকে।
বর্তমানে পানিতে ডুবে আছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানীয় জলের সঙ্কট তীব্র। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। কয়েক হাজার মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে মাচা করে থাকছে লোকজন। সাথে রাখছে গবাদিপশুও। সাপের কামড়ে এবং পানিতে ডুবে এক মাসে অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডহর মশিয়াহাটী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ কুমার বলেন, বিদ্যালয়ের মধ্যে উঁচু বেঞ্চ পর্যন্ত জল উঠে গেছে। বিদ্যালয়ের চারদিকে কোমরপানি। ছাত্রছাত্রীরা আসতে পারছে না। তারপরও বিদ্যালয় খোলা রাখতে হয়েছে। রাস্তায় আশ্রয় নেয়া চিনাটোলা গ্রামের রোকেয়া বলেন, বাড়িতে বুকসমান পানি।
৫-৬ দিন ধরে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। বাড়িতে টিকতে না পেরে পরিবারসমেত শুক্রবার এখানে (রাস্তায়) আশ্রয় নিইছি। তবে এই পর্যন্ত কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। সড়কে থাকা খাদিজা নামে আরেক বয়োবৃদ্ধা বলেন, ছেলে, বউ, নাতি-পুতিসহ ১৮ জনকে নিয়ে রাস্তায় উঠিছি। সকাল থেকে সবাই না খাওয়া। রান্না হচ্ছে, তারপর খাবো। এর আগে কখনও এমন পরিস্থিতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রাস্তার অস্থায়ী বাসিন্দারা জানান, ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালসহ এই নিয়ে তিনবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় ঠাঁই নিতে হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি জানান, হরিহর নদীতে পলি জমায় ও পাটা থাকায় পানি নামতে পারছে না।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, ভবদহ সøুইসগেট থেকে শ্রী ও হরি নদীর মধ্যে ১০ ফুট চওড়া এবং পাঁচ ফুট গভীর একটি পাইলট চ্যানেল খননের কাজ শুরু হয়েছে। এভাবে শ্রী নদীর দুই কিলোমিটার এবং হরি নদীর তিন কিলোমিটার খনন করা হবে। আশা করছি, এতে পানি নেমে যাবে। ভবদহে শ্রী ও হরি নদীতে স্ক্যাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে পাইলট চ্যানেল করার কাজ শুরু হয়েছে গত সোমবার থেকে। কেশবপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। ফলে এক সপ্তাহ পর ঈদের আগে পানিবন্দী মানুষ ঘরে ফিরতে পারছেন না।