ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

কবি শহীদ কাদরীর প্রয়াণে নাগরিক স্মরণসভা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কবি শহীদ কাদরীর  প্রয়াণে নাগরিক  স্মরণসভা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আগের জন্মে অনেক ভাল কাজ না করলে শহীদ কাদরীর মতো এমন স্বামী হয়ত পাওয়া যেত না। অনেক ভাগ্যের ফলে তাকে পেয়েছি। এখনও আমি প্রতিটি জায়গায় শহীদকে দেখতে পাচ্ছি। আমার কখনও মনে হবে না, শহীদ কাদরী নেই। সে আমার বন্ধু, প্রিয়তম, আমার সবকিছু। আমরা এতটাই দুজন-দুজনকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম যে, অনেক সময় তার ডায়ালিসিসের কথা মনে থাকত না। তার সঙ্গে আলাপের বহু আগে থেকে আমি শহীদের কবিতা পড়তাম। আমি কখনও তাকে রাগাতে চাইতাম না। তার সঙ্গে আমার কোন দুঃখের স্মৃতি নেই। আমি ধন্য, ওনার মতো একজন মানুষ পেয়েছিলাম’-বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে কবি শহীদ কাদরীর প্রয়াণে নাগরিক স্মরণসভায় কবিপতœী নীরা কাদরী এ কথা বলেন। বুধবার বিকেলে প্রয়াত কবির এ স্মরণসভার আয়োজন করে যৌথভাবে বাংলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, কবি ও অনুবাদক কায়সার হক, কবিপতœী নীরা কাদরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানের স্বাগত ভাষণে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, শহীদ কাদরী মাত্র ১২৬টি কবিতা লিখেছেন। তার সেই কবিতাগুলো হাজারো কবিতা থেকেও শক্তিশালী। কবি শহীদ কাদরীকে ‘কালোত্তীর্ণ কবি’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমকালীন তারুণ্যের সঙ্গে কবি শহীদ কাদরীর অবস্থানগত দূরত্ব থাকলেও তার কবিতায় ফুটে উঠেছে সামাজিক দায়বদ্ধতা, নাগরিক বোধের কথা। কবি কায়সার হক বলেন, কবি শহীদ পয়েটিক আউটপুট কারও কাছে কম নয়। আমার মনে হয়, তার অঙ্গে কেবলই কবিতা। নতুন প্রজন্ম যারা কবিকে চাক্ষুস দেখেনি, তারা কেবল তার কবিতা পড়েই জীবনকে জানবে, সাহিত্য ও দেশকে ভালবাসতে শিখবে। স্মৃতিচারণের ফাঁকে আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় আবৃত্তি করলেন কবি শহীদ কাদরীর জনপ্রিয় কবিতা ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’। মাহবুবুল হক শাকিল বলেন, ব্যক্তি শহীদ কাদরী চলে গিয়েছেন কিন্তু কবি শহীদ কাদরী যাননি। নতুন প্রজন্ম তার কবিতায় তাকে চিনবে। তিনি তার কবিতায় আধুনিকতার চর্চা করেছেন। সংসদ সদস্য ও কবি কাজী রোজী শহীদ কাদরীর কবিতা যথাযথভাবে সংরক্ষণের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তার জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে আমি তাকে দেখেছি, চিনেছি, বুঝেছি। আমার কথা, চিন্তা আর মননে এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে শহীদ কাদরীর কবিতা। কবি শহীদ কাদরীকে ‘নাগরিক কবি’ হিসেবে উল্লেখ করে কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, তিনি কবিতায় দার্শনিকতার কথা বলেছেন, সমাজের অধঃপতিত মানুষের কথা বলেছেন। তার কবিতা অনুকরণীয় ও সংক্রামক। তার কবিতা অনুভব করে আমরা ছাত্রজীবনে কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি। শিল্প সত্তাবোধে তিনি ছিলেন এক আদ্যোপান্ত বাঙালী। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, কবি শহীদ কাদরী দিনে দিনে উজ্জ্বল থেকে আরও উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছেন। অস্তিত্বের বর্ণালী ছটায় তিনি মানবসভ্যতার অংশী হয়েছেন। কবিতায় তিনি বলেছেন. দ্বি-খ-িত মানবসভ্যতার কথা। উচ্ছল-উদ্দামতার পেছনে নিবিড় বেদনা ছিল তাঁর। সেই বেদনায় তিনি অসাধারণ সব কবিতা লিখেছেন। আধুনিক কাব্যের বিবর্তনে তিনি পৃথক এক অধ্যায় হয়ে থাকবেন। নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার শহীদ কাদরীকে ‘আধুনিক কবিতার জনক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমরা শহীদ কাদরীকে তখনই সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারব, যখন তার কবিতা আমরা পড়ব, অনুভবে মূল্যায়ন করব। নাগরিক স্মরণসভায় তখন শোকের আবহ, প্রিয়জনদের বেদনায় গুমোট হয়ে ওঠে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বক্তৃতাপর্বে স্বভাবসুলভ রসিকতায় মুহূর্তেই বদলে ফেললেন পরিবেশ। হাস্যরসিক কবি শহীদ কাদরীকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণায় তিনি বলেন, শহীদ কাদরীর সঙ্গে পরিচয় ১৯৭৩ সালে, বাংলা একাডেমিতে। খুব অল্পদিনে আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। কৌতুক, হাসি, ঠাট্টা, শ্লেষ- এই তো আমাদের চেনা শহীদ কাদরী। তরুণ বিষণœ কবি হিসেবে তাকে আমি দেখতে চাই না। প্রবাস ছেড়ে স্বদেশে ফিরে কাব্য রচনা, দেশের মানুষের কাছে নিজেকে ফিরে পাওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষার কথা বললেন কবির প্রিয়তমা নীরা কাদরী। তিনি বলেন, তার মনে, ভাবনায়, হৃদয়ে, লেখা-সব জায়গায়, সব কোণে শহীদ কেবল বাংলাদেশকে খুঁজতো। বাঙালী ছেলেমেয়ে যারা তার কাছে আসত, শহীদ তাদের হাত ধরে বলত ‘তোমাদের হাত ধরে আমি যেন বাংলাদেশের হাতটি ধরে আছি।’ শহীদ বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল বারবার। তার অন্তরে ছিল শুধু বাংলাদেশ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাঙালীদের কবিতা আসরের রীতিনীতি পাল্টে দিয়েছিলেন কবি শহীদ কাদরী। বাঙালীদের কবিতার আসরে বাঙালী কবিদের কবিতা পড়ার চল একেবারে না থাকলেও শহীদ কাদরী ও নীরা কাদরীর সম্মিলিত প্রয়াসে তা বদলে গেল। শুরু হলো বাঙালী কবিদের বাংলা কবিতা আবৃত্তি। নীরা জানান, কবি শহীদ কাদরী কবি শামসুর রাহমানকে ‘দুই বাংলার প্রধানতম কবি’ হিসেবে ঘোষণা দিতে চেযেছিলেন। সবশেষে কবি শহীদ কাদরীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, শহীদ কাদরী ছিল আমার বয়ঃকনিষ্ঠ বাল্যবন্ধু। শহীদ কাদরীর নাগরিকতা অর্জিত নয়, স্বভাবজাত। কবিতা সে প্রথম থেকেই যতœকরে লিখেছে। শহীদ কাদরীর কবিতায় ‘পুনরাবৃত্তি ছিল না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, শহীদ বাংলা কবিতার একটি সঙ্কলন বের করতে চেয়েছিল। তা সে করে যেতে পারেনি। করতে পারলে সেই সঙ্কলনের প্রতিটি পাতায় পাতায় শহীদের কাব্যরুচির পরিচয় পেতাম। শহীদ তার কবিতার মাধ্যমে বেঁচে থাকবে চিরকাল। অনুষ্ঠানে কবি শহীদ কাদরীকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ ‘অভিবাদন শহীদ কাদরী’-র মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ১৫১ পৃষ্ঠার বইটির দাম রাখা হয়েছে ১০০ টাকা। ভূপেন হাজারিকা জয়ন্তী উৎসব শুরু ॥ ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি’, ‘আমি এক যাযাবর’, ‘আমায় ভুল বুঝিস না’, ‘গঙ্গা আমার মা’, ‘বিস্তীর্ণ দু’পারে অসংখ্য মানুষের’, ‘মানুষ মানুষের জন্যে’সহ অসংখ্য গানের ভুবনজয়ী কণ্ঠশিল্পী ও বাংলাদেশে মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু ভূপেন হাজারিকার ৯০তম জন্ম জয়ন্তী আজ বৃহস্পতিবার। এই উপলক্ষে বুধবার থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে দুইদিনের জয়ন্তী উৎসব। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. অমর জ্যোতি চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়া আলম বক্তব্য রাখেন ভূপেন হাজারিকা কালচারাল ট্রাস্টের উপদেষ্টা অনুরাধা শর্মা পূজারী। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশ, অসম অংশের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন ভারতীয়া। অনুরাধা শর্মা পূজারী বলেন, ভূপেন হাজারিকা ছিলেন মানবতার পূজারী। যেখানেই মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে সেখানেই তিনি গান নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বন্ধুত্বের হাত। আজ বৃহস্পতিবার উৎসবের দ্বিতীয় এবং সমাপনী দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সমন্বয়ক এএসএম সামছুল আরেফিনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল। আলোচনা করবেন সঙ্গীতশিল্পী কালিকা প্রসাদ। গান-নাচ-কবিতায় রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী উদযাপন করল উদীচী ॥ বাংলা সাহিত্যের তিন মহীরুহ, অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদী চেতনার আধার, মৌলবাদবিরোধী লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে জয়ন্তী উদযাপন করল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বুধবার বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদের আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক এ এন রাশেদার সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা সভা। এ পর্বে কাজী নজরুল ইসলামের জীবন, লেখনী ও আদর্শের ওপর আলোচনা করেন নজরুল গবেষক তাহা ইয়াসিন। এরপর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনবোধ, সাহিত্যকর্ম, শিল্পী সত্তাসহ নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাবেক সভাপতি শিক্ষাবিদ কাজী মদিনা। কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে জীবনের বৈচিত্র্যময় নানা অধ্যায়, তাঁর রচনায় দ্রোহ এবং তাঁর সাহিত্য চর্চার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এরপর আলোচনা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও, এ পর্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী। মূল্যবোধের নাট্যোৎসবের সমাপনী ॥ শিল্পকলা একাডেমি ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমির মূল্যবোধের নাটক প্রযোজনা সমন্বয়ে প্রথম ধাপে ২০টি জেলার ২০টি নাটক নিয়ে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে আয়োজন করা হয় জাতীয় পর্যায়ে ‘মূল্যবোধের নাট্যোৎসব ২০১৬’। জাদুঘরে জামদানি বুনন প্রদর্শনীর সময় বাড়ল ॥ জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত জামদানি বুনন শিল্প প্রদর্শনীর সময় বেড়েছে। জাদুঘরের লবিতে আয়োজিত প্রদর্শনী আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে।
×