ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুধীমহলে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা

বগুড়ায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য ভেঙ্গে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বগুড়ায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য ভেঙ্গে  দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বগুড়ার প্রবেশপথে শহরতলির বনানীর গোল চত্বরে স্থাপিত এই ভাস্কর্য বুধবার সকালে ভেঙ্গে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ভাস্কর্যটি ছিল এ রকম : একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ শেষে ফিরে শান্তির পায়রা উড়িয়ে দিচ্ছে। ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বগুড়া জেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার, বগুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র, বার কাউন্সিলের সদস্য এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তাদের দোসর সুকৌশলে পরিকল্পনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন ধ্বংস করতে মাঠে নেমেছে। তিনি এই ভাংচুরকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। বগুড়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ একজন ভাস্কর্য শিল্পীকে দিয়ে লাইভ সাইজের এই ভাস্কর্য বানিয়ে নেয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ১৯৯১ সালে শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় উঁচু কংক্রিটের বেদির ওপর এই ভাস্কর্য স্থাপন করে। যা জনসমাগমস্থল সাতমাথায় চারদিকের পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীদের দৃষ্টিতে পড়ে। জাতীয় দিবসগুলোতে এই ভাস্কর্যের বেদিতে শহীদ বীর মুত্তিযোদ্ধাদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই বিজয় ভাস্কর্য ছিল পরম সম্মানের। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতার আসার পর এই ভাস্কর্যের একটি হাত (যে হাতে মুক্তিযোদ্ধা শান্তির কপোত উড়িয়ে দিচ্ছিল) ভেঙ্গে দেয়। পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তা মেরামত করে নেয়। ২ হাজার ৩ সালের দিকে বগুড়ার সড়ক চওড়া করার সময় তাৎকালীন বিতর্কিত জেলা প্রশাসক রফিকুল মোহামেদ বিজয় ভাস্কর্যটি শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা থেকে সরিয়ে ফেলেন। এ সময় বগুড়ার প্রগতিশীল ধারার সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে সমাবেশ করে। তারা তৎকালীন জেলা প্রশাসক রফিকুল মোহামেদকে ‘তারেক বন্দনার ডিসি’ উল্লেখ করে তার অপসারণ চায়। পরে ভাস্কর্যটি সাতমাথা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে বগুড়ার প্রবেশপথে বনানীর গোল চত্বরে স্থাপিত হয়। এতদিন এই ভাস্কর্যে কেউ হাত দেয়নি। কে বা কারা এই ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দিল সাধারণ মানুষকে তা ভাবিয়ে তুলেছে। উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে তালেবানরা সেই দেশের ভাস্কর্য ভাংচুর করে। বনানী গোল চত্বরে গিয়ে দেখা যায় ভাস্কর্য যে টাইলসের বেদির ওপর স্থাপিত সেই বেদিতে সামান্য আঁচড়। ওই চত্বরের মাটিতে কোন গাড়ি যাওয়ার একটি চাকার সামান্য দাগ দৃশ্যমান হয়। এ দাগগুলো কখনই ভারি ভাস্কর্য পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে টুকরো হয়ে যাওয়ার সাক্ষ্য বহন করে না। যদি ভেঙ্গেই পড়ে তাহলে ভাস্কর্যটির একাংশের ক্ষতি হতে পারে। তা হয়নি। ভাঙ্গা টুকরো দেখে মনে হবে শক্ত হাতুড়ি বা শাবল দিয়ে ভাস্কর্যটি গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এই ভাস্কর্য ভাংচুরে বগুড়ার প্রগতিশীল ধারার সুধী মহল চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা ভাস্কর্য ভাংচুরকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। এই বিষয়ে নাট্যব্যক্তিত্ব ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়া শাখার সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না বলেছেন, কিভাবে ভাস্কর্যটি ভাঙলো তার তদন্ত হওয়া উচিত। যারা ভাস্কর্যটি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তিনি। এ ঘটনায় বগুড়া প্রেসক্লাব, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিইউজে), বগুড়া থিয়েটার, রক্তটিকা খেলাঘরসহ সাংস্কৃতিক সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছে।
×