ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্প জমা দিন- চউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ধাপে ধাপে নয়, একসঙ্গে ২৩ কিমি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ধাপে ধাপে নয়, একসঙ্গে ২৩ কিমি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ধাপে ধাপে নয়, চট্টগ্রাম নগরীতে একসঙ্গে নির্মিত হবে ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং হয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বারিক বিল্ডিং থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। প্রথমে তিন ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী এখন একসঙ্গে এই প্রকল্প পেশের নির্দেশ দিয়েছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম নগরীর চেহারা। যানজট থেকে মুক্তি মিলবে প্রায় ৬৫ লাখ বাসিন্দা অধ্যুষিত বন্দর নগরীর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয় চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোড প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ২০৬ কোটি টাকা। তবে সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ছিল একসঙ্গে বলতে গেলে নগরজুড়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা। সভা শেষে তিনি চউক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের কাছে জানতে চান এক্সপ্রেসওয়ের আপডেট। এ সময় তিনি তিন ধাপে প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পের বিষয়টি অবহিত করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী চউক চেয়ারম্যানকে একসঙ্গে প্রকল্প জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, অর্থের সংস্থান কোন সমস্যা নয়। চীন, সৌদি আরব, ইংল্যান্ড, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এ প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী। তারা টোলের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে তাদের বিনিয়োগের অর্থ উঠিয়ে নেবে। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নতুন গতি পেয়েছে। পাশাপাশি এই আন্তরিকতায় সন্তুষ্টি এসেছে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) সূত্রে জানা যায়, মোট তিন ধাপে ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কথা ছিল। এরমধ্যে প্রথম ধাপে বারিক বিল্ডিং থেকে কাঠগড়, দ্বিতীয় ধাপে বারিক বিল্ডিং থেকে কর্ণফুলী সেতু এবং তৃতীয় ধাপে লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রক্রিয়া এগুচ্ছিল। এরমধ্যে লালখান বাজার থেকে কাঠগড় পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার এবং বারিক বিল্ডিং থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। এখন একসঙ্গে হওয়ায় ‘ওয়াই’ আকৃতির এই এ্যালিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে নগরী ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে। তবে মাঝে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়, বারিক বিল্ডিং, কাস্টমস, সিইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গি বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে ওঠা-নামার জন্য র‌্যাম্প-লুপ থাকবে। একসঙ্গে প্রকল্প জমা দেয়া ও বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে চউক চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম জানান, প্রকল্পের সারপত্র একসঙ্গেই মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া আছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তেই তিন ধাপে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হতে যাচ্ছিল। এখন প্রধানমন্ত্রী যেহেতু একসঙ্গে করতে বলেছেন, তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ীই হবে। যেহেতু প্রকল্প প্রস্তুত এবং জমা দেয়া আছে সেহেতু সময়ক্ষেপণের কোন আশঙ্কা নেই। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনাকে চট্টগ্রামবাসীর প্রতি বিশেষ আন্তরিকতা হিসেবে উল্লেখ করে চউক চেয়ারম্যান বলেন, এত উন্নয়ন কর্মকা- আর কোন সরকার অতীতে পরিচালনা করেনি। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে এই এ্যালিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের অর্থ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বন্দরের কাছ থেকে অর্থ না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পুরো অর্থের সংস্থান করবে সরকার। এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর সিরাজউদ্দৌলা রোড়ের চন্দনপুরা থেকে বাকলিয়া বগারবিলের উপর দিয়ে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে বাকলিয়া এক্সেস রোড। দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেনের এই সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ২০৬ কোটি টাকা। সড়কের দু’পাশে থাকবে ৫ ফুট করে ড্রেন, যার উপরে স্ল্যাব দিয়ে তৈরি করা হবে ফুটপাথ। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় যানজট নিত্যসঙ্গী। এই এক্সেস রোড এলাকাবাসীকে যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিবে। সড়কটি নির্মাণের জন্য ৪১৭ কাঠারও বেশি ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
×