ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামাবাদ ও ইস্তানবুলের ভূমিকায় ধিক্কার ॥ প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলনের

পাকিস্তান হাইকমিশন নব্য কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পাকিস্তান হাইকমিশন নব্য কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত হয়েছে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে পাকিস্তান ও তুরস্ক কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করেছে বলে উল্লেখ করে প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন। এছাড়া সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশন নব্য কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত হয়েছে। এই হাইকমিশনকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার স্বাধীনতা হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলনের আহ্বায়ক ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালের খুনীদের বিচার কাজ শুরুর পর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩’-এর ভিত্তিতে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রথম ফাঁসির রায় কার্যকর হয় নরঘাতক কাদের মোল্লার। দ্বিতীয় ফাঁসির রায় কার্যকর হয় কামারুজ্জামানের। তৃতীয় ও চতুর্থ রায় কার্যকর হয় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের। পঞ্চম হিসেবে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তান সরকার তাকে ‘নিশান-এ-পাকিস্তান’ খেতাব দেয়। প্রতিটি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হলে পাকিস্তান তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছে। নৌমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীরা তাদের নির্লজ্জ পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারেনি। তারা বাঙালী জাতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে এখনও লিপ্ত রয়েছে। এছাড়া ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশন নব্য কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত হয়েছে। বিজয়ের উল্লাস ক্ষণিকের, পরাজয়ের গ্লানি দীর্ঘস্থায়ী মন্তব্য করে শাজাহান খান বলেন, পাকিস্তানীরা বছরের পর বছর বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে বাঙালী জাতি নিশ্চুপ বসে থাকতে পারে না। দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জনগণকে জাগ্রত করে গণজোয়ার সৃষ্টির মাধ্যমে পাকিস্তানের সকল চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে। পাকিস্তান ও তুরস্ক যে নিন্দনীয়, অনৈতিক, ঘৃণ্য ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ প্রদর্শন করেছে তার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছে। নৌমন্ত্রী বলেন, যতদিন না পাকিস্তানের চর জামায়াত-শিবির-রাজাকারদের প্রতিষ্ঠাতা বিএনপির ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতির হাত থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, যতদিন না বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্বপ্নের বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, ততদিন আমাদের যুদ্ধ চলবে। একইসঙ্গে পাকিস্তানের সকল চক্রান্ত প্রতিহত করে পাকিস্তানী চর, জামায়াত-শিবির রাজাকার, আলবদর সৃষ্ট জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে বাংলাদেশকে ষড়যন্ত্রমুক্ত করতে হবে। এছাড়া পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়া ১৯৫ জন ও পরবর্তী তদন্তের মাধ্যমে আরও যারা তালিকাভুক্ত হবে সেসব যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী সেনাদের বিচার করতে হবে। এসব দাবিতে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলনের সংগ্রাম কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় পাকিস্তান ও তুরস্কের অনৈতিক বিবৃতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলের ঘোষণা দেন নৌপরিবহনমন্ত্রী। তিনি জানান, আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলনের আহ্বায়ক ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলের আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন। জামায়াতের আরও কোন নেতার ফাঁসি হলে দূতাবাসগুলো যদি ফের প্রতিবাদ জানায় তাহলে সরকার কি করবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জনগণ ঐক্যবদ্ধ না হলে কোন আন্দোলন সফল হয় না। বিএনপির সঙ্গে তো জনগণ নেই তাই টানা তিনমাস পেট্রোলবোমা চালিয়ে আন্দোলন করেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। দূতাবাসগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানালে সরকার জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করবে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, খালেদার জাতীয় ঐক্যে কেউ সাড়া দেয়নি। অথচ সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে। সরকারের শক্তি জনগণ। এ সময় সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের জন্য সংসদে প্রস্তাব তোলা হবে বলেও জানান নৌমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব (কল্যাণ) আলাউদ্দিন মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহসভাপতি ইসমত কাদির গামা প্রমুখ।
×