ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জমে উঠছে কোরবানির পশুর হাট

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জমে উঠছে কোরবানির পশুর হাট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দিন-রাত নেই, একটির পর একটি ট্রাক এসে ঢুকছে গাবতলীর পশুর হাটে। রাজধানীর চারপাশের নদী দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রলারেও আনা হচ্ছে কোরবানির পশু। ধীরে ধীরে জমে উঠতে শুরু করেছে বেচাকেনা। ঘুরে দেখা গেছে, হাটে আসা অধিকাংশ গরুই দেশী জাতের। হাটে এবারও চোখে পড়েছে মোটাতাজা গরু। বেপারিরা জানালেন, এগুলো দেশী। বললেন, বেশি খাওয়ানোর ফলে মোটা হয়ে গেছে। এদিকে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কাদা ও গরুর বর্জ্যে বুধবার খুব বেশি ক্রেতা দেখা না গেলেও গরুর দাম বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। তবে বেশিরভাগ ক্রেতাই আসছেন পশুর দাম যাচাই করতে। বেপারিদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, ট্রাক নিয়ে আসার সময় রাস্তার পার্শ্ববর্তী হাটের ইজারাদারের লোকজন জোর করে গরু নামিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। এদিকে রাজধানীর হাটগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। ওয়াচ টাওয়ার ও সিসিটিভি ক্যামেরায় চলছে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ। বুধবার রাজধানীর গাবতলী হাট ঘুরে দেখা গেছে, সারাদিনই ট্রাক-পিকআপে করে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দিনের বেলা প্রতি ঘণ্টায় ১০-১২টি পশুবাহী ট্রাক আসছে এ হাটে। রাতের বেলায় এ সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। বেপারিরা জানান, এবার হাটের মেয়াদ সাত দিন করা হয়েছে। এজন্য আগেভাগেই গরু নিয়ে আসছেন তারা। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ ট্রাকেই আসছে গরু। কিছু ট্রাকে মহিষ ও ছাগল-ভেড়া রয়েছে। ভিটিতে ট্রাক পার্কিং করা হলেই হলুদ রঙের শার্ট পরা হাটের রাখালরা দৌড়ে গিয়ে উঠছেন ট্রাকে। ট্রাক থেকে সারি করে বাঁধা গরুর রশি ধরে টেনে নামিয়ে তারা পৌঁছে দিচ্ছেন হাটে পাইকারের নির্দিষ্ট স্থানে। এ হাটের রাখাল আলম চাঁন জানান, ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের সংখ্যা বাড়ছে। দিনের তুলনায় রাতে বেশি আসছে ট্রাক। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় কাদা ও গরুর বর্জ্যে একাকার পুরো এলাকা। ক্রেতারাও হাটের ভেতরে খুব একটা ঢুকছে না। বাইরে থেকে অনেকে গরু দেখে চলে যাচ্ছে। কুষ্টিয়া থেকে ২২টি গরু নিয়ে গাবতলী হাটে এসেছেন রহিম মোল্লা। প্রতিবছর এখানেই গরু নিয়ে আসেন তিনি। জানান, মঙ্গলবার রাতে এসেছেন। অনেক ক্রেতাই দাম জেনে চলে যাচ্ছেন। একই কথা জানান, ঈশ্বরদী থেকে আসা ব্যবসায়ী আবুল হোসেন। তিনি বলেন, হাটে ১০ দেশী গরু নিয়ে এসেছি। ব্যবসা ভাল হলে আরও আনব। তবে রাস্তায় পড়া অন্যান্য হাটের লোকজন গরু নামিয়ে নিতে চেষ্টা চালায়। এজন্য অনেকক্ষণ ট্রাক আটকে ছিল। গাবতলী হাটের পশ্চিম পাশে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষি করছেন পাবনার বেপারী রইস মিয়া। ক্রেতার কাছে দুই গরুর দাম চেয়েছেন সাড়ে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দাম শুনেই সোজা পথ মাপলেন ওই ক্রেতা। পরে কথা হয় রইস মিয়ার সঙ্গে। তিনি দাবি করেন হাটে তার গরু সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান। তাই বেশি দাম দাবি প্রত্যাশা করেন তিনি। এ প্রতিবেদককে বলেন, একটি দেশাল (দেশী) ও আরেকটি ভারতী গরু নিয়ে সোমবার ভোরে এসে হাটে পৌঁছান। তার গরুর মোটাতাজা সম্পর্কে জানতে চাইলে রইস মিয়া বলেন, বেশি খাওয়াইছি তো তাই মোটা দেখায়। রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকা থেকে গাবতলীতে এসেছেন ক্রেতা সাঈদ আহমেদ। তিনি জানান, এবার হাটে কোরবানির গরু যেমন বেশি, দামও তেমন বেশি। গরুর সরবরাহ ভাল থাকলে শেষ মুহূর্তে দাম কমে আসবে বলে তিনি জানান। আরেক ক্রেতা মকবুল হোসেন জানান, দাম শুনে তো হতবাক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ দাম হাঁকাচ্ছেন বেপারিরা। এদিকে প্রতিটি হাটের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ডিএমপি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি হাটেই পুলিশের কন্ট্রোল রুম ও সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তায় ডিএমপির সঙ্গে আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। পশু ব্যবসায়ীরা যেন নির্বিঘেœ লেনদেন করতে পারেন এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ নিরাপদে নিয়ে আসতে পারেন, সেজন্য ডিএমপি ব্যবসায়ীদের ‘মানি সিকিউরিটি’ সুবিধা প্রদান করছে। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, নির্ধারিত হাট ছাড়া ঢাকার কোন রাস্তায় পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ বলেন, বরাদ্দ দেয়া হাটের বাইরে কোন পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে ডিএসসিসি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যারা নির্দেশ অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঈদ-উল আযহাকে উপলক্ষ করে শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশে স্থানীয় পশুরহাটেও কোরবানির পশুর আমদানি বেড়ে গেছে।
×