ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বাবুল আক্তারকে নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল

মিতু হত্যার নেপথ্যের কুশীলব কে- রহস্যই থেকে গেল

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মিতু হত্যার নেপথ্যের কুশীলব কে- রহস্যই থেকে গেল

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাবুল আক্তার। এসপির পদ থেকে পদত্যাগ করার পর সদ্য এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়ে তিনি অব্যাহতিপ্রাপ্ত। চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার তিনমাস পর তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলে অনেকটা কাক্সিক্ষত ছিল। কেননা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে- এ সিদ্ধান্ত প্রচার করার আগে পুলিশ সদর দফতরের বক্তব্যের সূত্র ধরেই বোঝা গিয়েছিল বাবুল আক্তার আর চাকরিতে থাকছেন না বা থাকতে পারছেন না। কিন্তু পুলিশের সদ্য সাবেক এসপি পদের কর্মকর্তার বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত ধূ¤্রজাল থেকেই গেল। ইতোমধ্যে চাউর হয়ে গেছে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আবার একথাও চাউর হয়েছে, তাকে বিদেশ পাড়ি দেয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব বক্তব্যের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। স্ত্রী মিতু হত্যার পর থেকে তার পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করার মধ্যবর্তী সময়ে সত্য কি ঘটনা লুকিয়ে আছে তা নিয়ে জনমনে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। এসপি পদ থেকে স্ত্রীশোকে বাবুল আক্তার পদত্যাগ করেছেন, না তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, না আত্মরক্ষার্থে পদত্যাগের পথটি বেছে নেয়া হয়েছে এ নিয়ে উৎসুক মহল অদ্যাবধি কোন ধারণা পায়নি। তবে পুলিশ বা তদন্ত সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কোন তথ্য প্রদান করা না হলেও মানুষের মনে তার জন্য একদিকে যেমন মায়া-মমতার সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের পর থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ আড়াল করে রাখা, নিজে মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলে শ্বশুরকে দিয়ে কথা বলানো, হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতরা তার বিশ্বস্ত সোর্স হওয়ার কারণে তার যে ভাবমূর্তি ছিল তাতে ধস নেমেছে। উল্লেখ্য, বাবুল আক্তার কর্মক্ষেত্রে দুঃসাহসী তৎপরতা দেখিয়ে সফলতা অর্জনের কারণে বিপিএম, পিপিএম ও আইজি ব্যাজ পদক লাভ করেছেন। কিন্তু স্ত্রী হত্যাকা-ের পর তার চাকরি ও পারিবারিক জীবনে বড় ধরনের ওলট-পালট সৃষ্টি হয়ে গেল। স্ত্রী হত্যার ঘটনায় মামলার গতি এখন কোনমুখী হয়, তা-ই দেখতে মুখিয়ে আছে আগ্রহী মহল। ভবিষ্যতে নাটকীয় কিছু ঘটনা ঘটে গেলে লুক্কায়িত কোন সত্য তথ্য বেরিয়ে আসতেও পারে। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ সদর দফতরের বক্তব্য হচ্ছে বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। এ বক্তব্য খোদ পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হকের। পক্ষান্তরে, বাবুল আক্তার যে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, তা স্বেচ্ছায় দেননি বলে বক্তব্য দিয়ে তা প্রত্যাহার চেয়ে চাকরি ফিরে পেতে আবেদনও জানিয়েছিলেন।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পক্ষে সম্মতি দেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির আদেশে গত ৬ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন জারির পর বাবুল আক্তার এখনও তার কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। মিডিয়ার সঙ্গে কথাও বলেননি। তবে তার শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা প্রয়োজনে আইনী লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ৫ জুন চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড় এলাকার বাসা থেকে পুত্রকে স্কুলগামী বাসে উঠিয়ে দেয়ার জন্য বের হওয়ার ১০-১২ মিনিটের মাথায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে গঠিত কিলিং মিশন তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। হত্যাকা-ের পর চমকপ্রদ নানা তথ্য বেরিয়ে আসে। যারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে হত্যাকা-ের নেতৃত্বদানকারী মুসা সিকদার নামের সন্ত্রাসী বাবুল আক্তারেরই অন্যতম প্রধান ও বিশ্বস্ত সোর্স ছিল। সঙ্গত কারণে তখন থেকেই ঘটনাটি গোলক ধাঁধাঁয় নিপতিত হয়। বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স কেন তার স্ত্রীকে (মিতু) হত্যা করবে? তাও আবার নৃশংস কায়দায়। এ ঘটনা নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল সংস্থা ব্যাপকভাবে তৎপর হয়। একে একে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ৭ জন আটক হয়। পরে ৬ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। হত্যাকা-ে অংশগ্রহণকারী মুসা সিকদারকে পুলিশ তুলে নেয়ার তথ্যটি ফাঁস করেন তার স্ত্রী পান্না এবং তাও সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে। কিন্তু পুলিশ মুসার স্ত্রীর এ তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছে। পুলিশ বলেছে, মুসা পলাতক, তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত। সে-ই যেহেতু হত্যাকা-ে নেতৃত্ব দিয়েছে সেক্ষেত্রে তার কাছ থেকেই জানা যাবে ঘটনার নেপথ্য নায়ক কে? ইতোমধ্যে মিতু হত্যাকা-ের নেপথ্য নায়ক হিসেবে বিভিন্নভাবে বাবুল আক্তারের নামই চলে এসেছে। কিন্তু মিতুর বাবা অর্থাৎ বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন তার কন্যাকে বাবুল আক্তার হত্যা করিয়েছেন একথা বিশ্বাস করেন না। আবার এও বলেছেন, যদি বাবুল আক্তার হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে তাকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। তবে বাবুল আক্তারের পিতা আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, তার পুত্র (বাবুল আক্তার) দোষী নয়, তারপরও দোষী করার চেষ্টা হচ্ছে। এখন এটা মেনে নিতে হবে। কোন উপায় নেই। আল্লাহপাক ফয়সালা করার মালিক। অপরদিকে, বুধবার মিতুর মা সাংবাদিকদের বলেছেন, বাবুল আক্তার ঘটনার জন্য দায়ী হলে তার বিচার হোক। প্রসঙ্গত, স্ত্রী হত্যাকা-ের পর ২০ দিনের মাথায় মামলার তদন্ত, শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের চিন্তাভাবনা, জঙ্গী পাকড়াও অভিযানসহ সবকিছুতে পরিবর্তন চলে আসে। এখানেই সন্দেহের বিভিন্ন বিষয় নিহিত। ২৪ জুন গভীর রাতে বাবুল আক্তারকে তার অধস্তন পদবির কর্মকর্তারা শ্বশুরের বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যান। বলা হয়েছিল আইজি কথা বলবেন। পরবর্তীতে দেখা গেল প্রায় ১৬ ঘণ্টা ঢাকায় গোয়েন্দা দফতরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ডিআইজি পর্যায়ের তিন কর্মকর্তা। মাঝপথে আইজিও সম্পৃক্ত হন। ওই রাতেই তাকে দুটি অপশন দেয়া হয়েছিল-একটি জেলহাজতে যাওয়া, অপরটি চাকরি থেকে পদত্যাগ করা। বাবুল আক্তার পদত্যাগের পথটিই গ্রহণ করেন এবং পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে মুক্ত হয়ে শ্বশুরের বাসায় ফিরে যান। উল্লেখ্য, স্ত্রী মিতু খুন হওয়ার পর থেকে বাবুল আক্তার তার দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় শ্বশুরের বাড়িতেই অবস্থান করে আসছেন। বাবুল আক্তার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপার হয়েছিলেন। কিন্তু একদিনের জন্যও এ পদে কাজ করার সুযোগ মেলেনি স্ত্রী হত্যাকা-ের ঘটনার কারণে। চট্টগ্রামে তার স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যাকা- বাবুল আক্তারের চলার পথ এলোমেলো করে দেয়। যা শেষ পর্যন্ত তার পদত্যাগ ও তা গ্রহণে প্রজ্ঞাপন জারি পর্যন্ত গড়াল। কর্মক্ষেত্রে বিপুল খ্যাতি অর্জনকারী এ কর্মকর্তার অসময়ে চাকরি থেকে বিদায়ের বিষয়টি জনমনে নানা রহস্য সৃষ্টি করে রেখেছে। কারণ, তার শুভাকাক্সক্ষী যেমন রয়েছে তেমনি সন্ত্রাস ও জঙ্গী তৎপরতায় পারদর্শীতার কারণে শত্রুতাও কম ছিল না। প্রথমত, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যরা তার প্রধান শত্রু ছিল। দ্বিতীয়ত, পেশাগত ঈর্ষাও কম ছিল না। কিন্তু পেশাগত দক্ষতার বিপরীতে ঈর্ষান্বিতরা কোন সুবিধা করতে পারেনি। যার প্রমাণ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপারে পদোন্নতি লাভ। পদোন্নতি পেয়ে গত ৫ জুন বাবুল আক্তার পুলিশ সদর দফতরে এসপি পদে যোগ দেয়ার জন্য ঢাকায় ছিলেন। কিন্তু তার আগেই সকালে স্ত্রীর নির্মম হত্যাকা- ঘটে যায়। মিতুকে হত্যার পর সিএমপি কমিশনার জানান দেন যে, জঙ্গীরাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। বাবুল আক্তার এমন সন্দেহের তথ্য দিয়েছিলেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। ফলে আইজির নির্দেশে দেশব্যাপী জঙ্গীবিরোধী অভিযান শুরু হয়ে যায় এবং ওই অভিযানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ১০ হাজার গ্রেফতার হয়। দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রীতিমত ঘুম হারাম হয়ে যায়। জনমনেও বিশ্বাসের জন্ম নেয় যে, জঙ্গীরাই এ কাজ করেছে। হত্যাকা-ের সিসিটিভির ফুটেজ অনুযায়ী, কিলিং মিশনের ৩ সন্ত্রাসীর সম্পৃক্ততা স্পষ্ট হয়। যারা বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করত। কিন্তু বাবুল আক্তার নিজে বাদী হয়ে সিএমপির পাঁচলাইশ থানায় যে মামলা করেন তাতে তিনি অজ্ঞাতনামা তিন সন্ত্রাসী এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। মিতু হত্যাকা-ের পর ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রযন্ত্রও নড়ে উঠেছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি ও উর্ধতন কর্মকর্তার অনেকে চট্টগ্রামে আসেন। সরকারী ৬টি তদন্ত সংস্থাকে মিতু হত্যার রহস্য উদঘাটনে নিয়োজিত করা হয়। সংস্থাগুলোর তদন্তে সহায়তার জন্য আলাদা ৫টি কমিটিও করে দেন আইজি। পুলিশের তৎপরতায় খুব দ্রুততম সময়ে হত্যাকা-ে অংশ নেয়া সাত সন্ত্রাসী আটক হয়। এরা সকলেই কিলিং মিশনের সদস্য। যদিও পুলিশ এখনও একজনের কথা অস্বীকার করে আসছে। অর্থাৎ নেতৃত্বদানকারী মুসা এখনও পলাতক বলে দাবি করছে। কিন্তু মুসার স্ত্রী বরাবরই নিশ্চিত করছে, সিএমপির বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম তার স্বামী মুসাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তার আর খবর মিলছে না। মুসা ধরা পড়ুক আর নাই পড়ুক এ কথা সত্য যে তার কোন হদিস নেই। জীবিত না মৃত তাও কেউ জানে না। পুলিশ বরাবরই দাবি করে যাচ্ছে তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। অপরদিকে, গণমাধ্যম কর্মীরা তাদের নিজস্ব সূত্রে নিশ্চিত হয়েছে, কিলিং মিশনের সাত সদস্য ধরা পড়েছে এবং এরমধ্যে মুসাও রয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে মুসার কোন হদিস মিলছে না বলে পুলিশ বলে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে গুম করা হয়েছে। এছাড়া আটক অপর ৬ জনের মধ্যে দু’জন রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। বর্তমানে জেলে আছে ৪ জন। সন্দেহজনক পলাতক রয়েছে আরও ২ জন। জেলে থাকা চারজনের মধ্যে দু’জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। যে জবানবন্দী মুসা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। মুসাকে দিয়ে কে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা অজ্ঞাত রয়ে গেছে। এদিকে, এতকিছু ঘটনার পর বাবুল আক্তার নীরব কেন তা নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। গত ১৩ আগস্ট প্রথমবারের মতো নীরবতা ভেঙ্গে ফেসবুকে একটি স্টেটাস দেন। যাতে তিনি তার বেদনার কথা প্রকাশ করেন। প্রায় মিডিয়াই তার এ স্টেটাসের বক্তব্য প্রকাশ করে গুরুত্বসহকারে। স্টেটাসটি ছিল হৃদয়স্পর্শী। অধিকাংশ মিডিয়ায় এ স্টেটাসের শিরোনাম হয় ‘সইতেও পারি না, রুখতেও পারি না’। চট্টগ্রামে বুধবার সকাল থেকে বাবুল আক্তারকে নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় বুধবার প্রচার হয়েছে, তার বাবা জানিয়েছেন বাবুলের খোঁজ নেই। সঙ্গত কারণে নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে কোথায় গেলেন তিনি। কেন গেলেন। তিনি কি স্ত্রী হত্যাকা-ের মামলায় ফেঁসে যেতে পারেন। পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে বুধবার বিভিন্ন ধারণা দেয়া হয়েছে। কোন কোন সূত্র বলেছে, এবার গণেশ উল্টে যাবে। এতদিন তাকে বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছিল। তিনি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। খোদ আইজি বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। আর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনে বলেছেন, তার পদত্যাগ স্বেচ্ছায় নয়, অনিচ্ছাকৃত। তাহলে তার এ বক্তব্য আইজির বক্তব্যের বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়। যা অনেকটা চ্যালেঞ্জস্বরূপ। আর তার শ্বশুরও ইঙ্গিত দিয়েছেন আইনগত পথও বেছে নেয়া হতে পারে। সব মিলিয়ে এখন মিতু হত্যার নেপথ্যে সন্দেহের তীর স্বামী বাবুল আক্তারের প্রতি। হত্যাকা-ের পর নিয়োজিত তদন্ত সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বাবুল আক্তারই মিতু হত্যাকা-ের নেপথ্যের কুশীলব। পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থেই তাকে পদত্যাগের সুযোগ দেয়া হয়, যা গৃহীত হয়েছে। বাবুল আক্তার নামে পুলিশে খ্যাতি অর্জনকারী এক কর্মকর্তার অসময়ে চাকরি থেকে পদত্যাগ এবং তা গৃহীত হয়ে প্রজ্ঞাপন জারি ঘটনা উৎসুক মহলে পরিষ্কার হলো না। এ হত্যাকা-ের নেতৃত্বদানকারী মুসা যেহেতু বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স ছিল তারও কোন হদিস নেই। অথচ, সেই জানে কার নির্দেশে সে মিতুকে হত্যার নেতৃত্ব দিয়েছে। বুধবার বিকেলে তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসি কামরুজ্জামান জানান, তদন্ত অব্যাহত। মুসাকে পাওয়া গেলে মূল রহস্য উদঘাটিত হবে। তিনি বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার, অবস্থান কোথায় এসব নিয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। অপরদিকে, আইজি একেএম শহীদুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী তার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ সরকার গ্রহণ করেছে। এছাড়া তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের জন্য সোপর্দ করা হবে। বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি বলে যে অভিযোগ তুলেছেন তা সঠিক নয় বলে তিনি আবারও জানান। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, তদন্তে একে একে বহু কিছু মিলছে। এসব যাচাইবাছাই করে চূড়ান্ত করা হবে। এখানে দোষীদের কেউ পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
×