ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বুয়েট স্বাধীন হলো

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বুয়েট স্বাধীন হলো

বাংলাদেশের ভেতর একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময় থেকে টিকে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের মেধাবী ছাত্র-শিক্ষকদের এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন পরাধীনতার শৃঙ্খলে বাঁধা এই স্বাধীন বাংলাদেশে। যেন বিশাল বাংলাদেশের মাঝে ‘একখ- পাকিস্তান’। ইতিহাসবিদকে অনুসরণ করে বলা যায়, পাকিস্তানী ছিটমহল। আসলেই তাই। দেশে শুধু নয়, বিদেশেও সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাকে গণ্য করা হয়, সেখানে বাংলাদেশ নেই, নেই আইন ও বিধিবিধান মেনে চলার আয়োজন। দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, দ্যাখ, এখানে কোন বাংলাদেশ নেই, মুক্তিযুদ্ধ নেই, জাতির পিতা নেই, প্রধানমন্ত্রী নেই, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস বলে কিছুই পালন করার বাধ্য বাধকতা নেই। যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের প্রতি নিবেদন, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত-শিবিরের আদর্শে লালিত, মওদুদীবাদের দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে ক্রমশ বাংলাদেশবিরোধী হয়ে ওঠাদের এক বিশাল ঘাঁটি বা আস্তানা বলা যায় এবং গত কয়েক দশক ধরে এই অবস্থা। শিক্ষক ছাত্রদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের সংখ্যাধিক্য এতই বেশি যে, তাদের আদেশ-নির্দেশে এতকাল সবই চলে এসেছে। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায় থাকায় পর, এই গত বছর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীতে প্রশাসন কোন সভার আয়োজন করেনি। এমনকি বঙ্গবন্ধু পরিষদের আলোচনা সভার আয়োজনেও বাধা দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর নাম এখনও নিষিদ্ধ যেন সেখানে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা বুয়েট আলোর মধ্যে যেন গভীর অন্ধকারের জগত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রধানমন্ত্রীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। দ-িত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের দেহরক্ষী ছিলেন এমন ব্যক্তিও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের হিজবুত তাহরীর সংযোগের কথাও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। জঙ্গীবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিরা যখন শিক্ষক, আর ছাত্র যখন ছাত্রশিবির সমর্থক, তখন সেখানে বাংলাদেশ বিরোধিতা, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের চর্চা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। জঙ্গী সম্পৃক্ততার বিষয়ে নর্থ সাউথের পর বুয়েটের অবস্থান। ছাত্রাবাসগুলোতে ২০১২ সালে সর্বশেষ অভিযান চালিয়ে পুলিশ শিবিরের কক্ষ থেকে রামদা, গোলাবারুদ জেহাদী বইসহ বেশকিছু আলামত উদ্ধার করেছিল। লালবাগ থানার মতে, শিবিরের সঙ্গে বুয়েটের ষাটের অধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততার আলামত, ফেসবুক ও ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য প্রমাণ দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দেশের শীর্ষ এ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর ঘটনা রয়েছে। যা বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, জামায়াত-শিবিরের প্ররোচনায় ভর্তি হওয়া মেধাবী ছাত্ররা প্রলুব্ধ হয়ে পড়ে এবং এক সময় শিবিরের জালে এমনভাবে আটকা পড়ে যে, তার থেকে বেরিয়ে আসার আর সুযোগ থাকে না। বিভিন্ন জঙ্গী ও মৌলবাদী সংগঠনগুলোর দখলে দীর্ঘদিন ধরেই বুয়েট। ক্যাম্পাসকে নিরাপদ অঞ্চল নির্ধারণ করেই তৎপরতা চালিয়ে আসছে বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠনও। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির গোপনে কার্যক্রম চালালেও একমাত্র বুয়েটে অনেকটা প্রকাশ্যেই তারা তাদের কার্যক্রম চালায়। সব কিছু জেনেও প্রশাসন এতকাল না দেখার ভান করত। এখনও বুয়েটের অনেক আসবাবপত্র এবং শ্রেণী কক্ষের চেয়ার টেবিলে ‘ইস্ট পাকিস্তান’ শব্দটি রয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ যেন পাকিস্তানের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে গিয়ে পাকিস্তানকে মুছতে পারছে না। তাই প্রতিষ্ঠাটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে একাত্তরের পরাজিত শক্তির উত্তরসূরিদের অবস্থান। সংবিধানের বিধি মেনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও নেই যথাস্থানে। এই এক ধৃষ্টতা এতকাল দেখানো হয়েছে। জামায়াত-শিবির তোষণ এবং লালন পালনের আখড়া হিসেবে পরিচিত বুয়েট অবশেষে স্বাধীন হলো যেন। নয়া উপাচার্য এসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণ, জাতীয় ও স্বাধীনতা এবং বিজয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের ঘোষণা দিয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বুয়েটকে মুক্ত করার পথে যাত্রা শুরু করলেন। বুয়েটের স্বাধীনতা যেন অক্ষুণœ থাকে।
×